"গন্ধহীন ফুল বিপরীতে মানুষ"

২৯ মার্চ, ২০২০

পৃথিবীতে মানুষের বসবাস। মানুষের বসবাস যোগ্য জায়গা অবাসযোগ্য  করে গড়ে তোলার পিছনে তারাই দায়ী । মানুষের জ্ঞানের  সীমা আপেক্ষিক।  মানুষ হিসেবে সবার ভিতর বোধশক্তিসম্পন্ন জ্ঞান বুদ্ধি বিবেচনা ভাল-মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা থাকায় শারীরিক আকৃতির মানুষের সাথে যথার্থ মানায় । কিন্তু যার ভিতরে এসব নেই তার সাথে শুধু আক্ষরিক একটি শব্দ " মানুষ " জড়িত । তার সাথে পশুর তুলনা করা চলে না সমান ভাবা যায়। আজকের পৃথিবীতে শুধু দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে এর শ্রেণীবিন্যাস,মাত্রা সবকিছুই ধীরে ধীরে মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে একটি পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ দেশ জাতি  ধর্ম  বর্ণ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে । যেমন 

এক।  

পরিবার সমাজ স্বীকৃত একটি পবিত্র বন্ধন । সেখানে প্রাথমিকভাবে একজন স্বামী স্ত্রী একই ছাদের নিচে বসবাস শুরু হয় সেখানেই দ্বন্দ্বের বীজ বোনা শুরু । আজকের পৃথিবীতে নারী পুরুষ , পুরুষ নারীর প্রতি দোষারোপ করার পাহাড় সমতুল্য । পরস্পর ভুল বুঝাবুঝি , বাড়াবাড়ি অবমূল্যায়ন । এসব কিছুর  একটি কারণ  পরস্পর পরস্পরের  অধিকার গুলো সমানভাবে না দেখা । 

দুই

পিতা-মাতার সন্তানের সম্পর্ক সবচেয়ে মধুর হওয়ার কথা কিন্তু দুঃখের বিষয় সেখানেও দ্বন্দ্ব  । পিতা-মাতা বলছে তাদের সন্তান তাদের অধিকার দিচ্ছেনা, সন্তান বলছে তারা অধিকার পায়নি। এভাবে চলছে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ।

 তিন ।  

সমাজে চলতে গিয়ে মানুষ একে অন্যের উপকার কল্যাণ করবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু পরিবেশের দিকে তাকালে মনে হয় পরিবেশ খুবই অন্ধকার মেঘলা আকাশের মত । চেহারা খুবই মলিন। একে অন্যের ভালর চেয়ে মন্দই বেশি করে ক্ষতি বেশি করে । ক্ষতির জন্য চারদিকে মাকড়সার জালের ফাঁদ  ছড়িয়ে রাখে ।  যা আজকের সমাজের একটি প্রথা হিসেবে পরিণত হয়েছে।  

চার । 

কিছু লোক সমাজ ভাঙ্গে আর কিছু লোক নিরবে সয়ে যায় আর এসবই শুধুমাত্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই স্বার্থবাদী মানুষগুলো খুব সীমাহীন ভাবে নিজেদের যোগ্য ও ক্ষমতাধর  প্রমাণ করার চেষ্টায় অবিরত । 

পাঁচ ।

 পৃথিবীর সৃষ্টির প্রথম থেকেই   ধর্ম আছে এখনও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে । সবাই একই ধর্মের অনুসারী হবে এটা বলা কঠিন। পৃথিবীতে যখনই ধর্মের প্রচলন শুরু হয়েছে তখনই সেখানে মতবিরোধ, পার্থক্য , দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে আজকের পৃথিবীতে অসংখ্য ধর্মের অনুসারী বিরাজমান ।  সত্য কথা হল এই ধর্ম অনুসারী মানুষগুলো নিজের ধর্মকে মেনে চললে কারো সাথে দ্বন্দ্ব হওয়ার কথা না। কিন্তু ধর্মের নামে অন্ধ অনুসারী হয়ে একে অন্যের উপর দোষারোপ সংঘাত ধর্মযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

ছয়।

 রাজনীতি মানুষের একটি জন্মগত স্বভাব । রাজনীতি  কল্যাণের নীতি,দেশ, জাতি গঠনের নীতি। আজকাল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের  আচার-আচরণ দেখে মনে হয় তারা রাজনীতি না করলে ভালো হতো। রাজনীতি মানুষের কল্যাণে কিন্তু আশেপাশে তাকালে মনে হয় রাজনীতি মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। ছোট থেকে বড় সর্বপর্যায়ে নেতাদের আচার-আচরণ রং বিরংগের কেউ দিনের সাধু রাতে সাধু । কেউ দরবেশ বাবা কেউ কোটি টাকার দরবেশ কেউ লক্ষ টাকা দরবেশ। রাজনীতির পদের লড়াইয়ে সবাই অগ্রগামী কেউ মহানায়ক,কেউ বিপ্লবী কেউ সংগ্রামে কেউ জনদরদি, মানবদরদী কেউ জনমানুষের নেতা কেউ গণতন্ত্রের মাতা। কেউ টিন চুরি  কেউ রাস্তা খায় কেউ ব্রিজ খায়। আজকের পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করে এবং রাষ্ট্রগুলো কিছু ব্যক্তির হাতে বন্দি । যেখানে সাধারণ মানুষ নীরবে নিজের দুঃখ কষ্ট চাপা দিয়ে দিন কাটায় । 

সাত।

পৃথিবীর মানুষ বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত । জাতিগত ভিন্নতা সৃষ্টি গতভাবেই এটা সৃষ্টির রহস্য । এটা মানুষের একধরনের পরিচয় বহন করে কিন্তু তাই বলে কোন জাতিকে ছোট করে দেখার অপমান-অপদস্থ লাঞ্ছিত হেনস্ত বন্দী নির্বাসন নিধন করা পৃথিবীর কোন সভ্য মানুষের জন্য শোভা পায় না । পৃথিবীর সব জাতিরই নিজস্ব ভাষা আচার-আচরণ রীতি কর্ম  চিন্তা মননশীলতা আছে থাকবে। সব ধরনের ভিন্ন চিন্তা চেতনা আদর্শকে সম্মানের সাথে দেখতে হবে । সাদা কালো নিগ্রো উঁচু-নিচু ধনী-দরিদ্র সবল-দুর্বল ভেদাভেদ না করে সবাই মানুষ । মানুষ হিসেবে সবার ভিতর একটি সত্য সেটা হলো সবার রক্ত লাল। সবাই একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সবাই একদিন এই পৃথিবীতে থাকবে না এটাই চরম সত্য। 

আট।

এ পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় মানুষই মানুষের ধ্বংসের জন্য সমস্ত রাস্তা তৈরি করেছে। যত ধরনের যুদ্ধ অস্ত্র প্রয়োজন সব কিছু তারা প্রস্তুত করে রেখেছে।পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধের বহ বহর অসীম। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে মানুষের মাঝে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ হয় প্রায় ২০০  বছর ।  ধর্মযুদ্ধ (১০৯৫- ১২৯১ ) মুসলিম ও খ্রিস্টান দের মধ্যে । শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে সংঘটিত (১৩৩৭-১৪৫৩) হয় । ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধ (১৬৪২-১৬৫১) । আফিমের যুদ্ধ চীন  ও ব্রিটেনের মধ্যে সংঘটিত(১৮৩৯-১৮৪২) হয়। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ (১৮৬১-১৮৬৫)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) ও  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) ।  ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৫০  লক্ষ মানুষের প্রাণ ১৩৫০বঙ্গাব্দে  ১৯৪৩  সালে যেটাকে পঞ্চাশের মন্বন্তর বলা হয় ।  বিট্রিশ যাওয়ার পরও পাক ভারতযুদ্ধ হয়েছে ৪ বার। নিজ দেশে  পরাধীন ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড রক্ষা করতে গিয়ে ইসরায়েলের সাথে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয়েছে ৪ বার ।  যুদ্ধ  মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে  । মানুষের ভিতর বাহির রূপ মানুষের কাছে প্রকাশিত করে দিয়েছে । মানুষ মানুষের মূল্যায়ন কমিয়ে দিয়েছে । 

নয় ।

পৃথিবীতে এক ধরনের ফুল আছে যার গন্ধ নেই । তবে রঙ বিরঙে বিচিত্র। অসীম সৌন্দর্য দিয়ে মানুষের মনকে ভরে দেয় ।  সৌন্দর্য নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দেয় মানুষের মাঝে। সৌন্দর্য দেখে মানুষের মন হয়ে ওঠে শৈল্পিক কাব্যিক প্রেমিক । তার গন্ধ নেই সৌন্দর্য আছে  এটাই তার সবচেয়ে বড় সার্থকতা ।এই ফুলটিকে জিনিয়া ফুল নামে সবাই চিনে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আজ আমাদের ভিতর বাহির রুপ প্রকাশিত সবার সামনে । আমাদের মাঝে কোন গন্ধ নেই সৌন্দর্যও নেই বিপরীতে দুর্গন্ধ আছে । যার ফলাফল আমরা কালে কালে ভোগ করে যাচ্ছি ভবিষ্যতে আরও ভোগ করতেই হবে যতদিন এই পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে।

শামিম ওসমান।