১০ আগস্ট, ২০২৩
ইসলামী ব্যাংকের কোনও শাখা ঋণ অনুমোদন করতে পারবে না। এখন থেকে তা করবে প্রধান কার্যালয়। ডলার ও তারল্য সংকটে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের ছেলে আহসানুল আলম ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এরপর তার প্রথম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
এতে জানানো হয়,৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। এর বেশি ঋণের প্রস্তাব অবশ্যই পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটিতে পাঠাতে হবে। এছাড়া আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমতি নিতে হবে।
গত ১৯ জুন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৩২৪তম সভায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান আহসানুল আলম। সেখানেই সব ঋণ প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে ব্যাংকের সব শাখা, জোনাল অফিস, উইং ও বিভাগীয় প্রধানকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়ে, এখন থেকে বিভিন্ন স্কিম ও কৃষি ঋণের বাইরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত সব ঋণ অনুমোদন করবেন এমডি। স্কিমের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট শাখা, বিভাগ বা জোন। ঋণ ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটি অনুমোদন করবে। যেকোনো এলসি খুলতে কেস টু কেস ভিত্তিতে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হবে।
এর আগে জোনাল অফিস থেকে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন হতো। প্রধান সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারের (এসপিও) ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তা থাকা শাখা থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত হতো। আর ব্রাঞ্চ প্রধান এসপিও পর্যন্ত পদমর্যাদার কর্মকর্তা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত পারতেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকের বেনামি ও ভুয়া ঋণসহ বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এরপর থেকে সংকটে রয়েছে ব্যাংকটি। একে নানা সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবু তারল্য (সিআরআর) রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা।
একটি ব্যাংককে ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৪ টাকা সিআরআর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবে রাখতে হয়। গত জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। সেই অনুযায়ী, ৪ শতাংশ হারে অন্তত ৫ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ থাকার কথা। তবে গত ২৯ জুলাই ছিল মাত্র ৩০ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংকের এক শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ডলার ও তারল্য সংকটে ঋণ অনুমোদনে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর শাখা থেকে ঋণ প্রস্তাব কম পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো প্রস্তাব অনুমোদন বা বাতিল হয়ে শাখায় আসতে বিলম্ব হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বেনামি বা ভুয়া ঋণ ঠেকাতে এমন করা হলে ভালো। সেটা দেয়ার আগে যাচাই-বাছাই ও জবাবদিহির জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদন নেয়া যেতে পারে। তবে শাখার ক্ষমতা কেড়ে সব ঋণ কেন্দ্রীভূত করলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।