ডাক্তাররা ধরেই নিয়েছিলেন আমি মারা যাচ্ছি : বরিস জনসন

০৩ মে, ২০২০

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত সপ্তাহের সোমবার থেকে আবারো দায়িত্বপালন শুরু করেছেন। এর আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের জনসন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) তিনদিন থাকতে হয়। পরে সুস্থ হয়ে গত ১২ এপ্রিল তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।

করোনাভাইরাসকে পরাজিত করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কাজে ফেরার খবরটি ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য একটা সুখবরই বটে। পাশাপাশি সুস্থ হয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার দুই দিনের মাথায় ছেলে সন্তানের বাবাও হয়েছেন বরিস জনসন। তার বাগদত্তা ক্যারি সাইমন্ডস লন্ডনের একটি হাসপাতালে গত সপ্তাহের বুধবার এক সুস্থ ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

করোনাভাইসকে পরাজিত করে বরিস জনসন সুস্থ হলেও সারাবিশ্বে এখনো প্রাণঘাতি করোনার মহামারী চলছে। সারাবিশ্বে প্রতিদিনই বিশাল সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। তাইলে এই বরিস জনসন যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন- তখন কেমন ছিলেন তিনি? তার অনুভূতি আর চিকিৎসা-ই বা কেমন হয়েছিল?

এসব প্রশ্নের উত্তরে বরিস জনসন বলছেন, তাকে বাঁচানোর আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তৈরি হয়ে গিয়েছিলেন তার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণার জন্য। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দৈনিক ‘সান’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সদ্য সেরে ওঠা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

রোববার গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,‘অস্বীকার করব না, সেটা খুবই কঠিন সময় ছিল। আমাকে যারা চিকিৎসা করছিলেন, তারা ধরেই নিয়েছিলেন, আমাকে আর বাঁচানো যাবে না। তৈরি হয়েছিলেন আমার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণার জন্য। স্তালিনের (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্তালিন) মৃত্যুর সময় যেমনটা হয়েছিল, প্রায় তেমনই।’

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নিজের করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিনগুলো নিয়ে এই প্রথম মুখ খুললেন বরিস।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, তিনি বুঝতে পারছিলেন, পরিস্থিতিটা আর নিয়ন্ত্রণে থাকছে না তার চিকিৎসকদের। তারা আপদকালীন ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তার কথায়,‘আমার মৃত্যু হলে কী কী করণীয়, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল চিকিৎসকদের।’

তিনি যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের শিকার হয়েছেন, ৫৫ বছর বয়সী ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তা প্রথম ঘোষণা করেন গত ২৭ মার্চ। তবে এও বলেছিলেন, তার মধ্যে কয়েকটি প্রাথমিক লক্ষণের আভাস মিলেছে। ঘোষণার পরেই নিজেকে এক সপ্তাহের জন্য গৃহবন্দি করে ফেলেন বরিস। কিন্তু তারপরেও রোগের লক্ষণ বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে ভর্তি করাতে হয় হাসপাতালে। ভর্তি করানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বরিসকে পাঠাতে হয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)। সেখানে টানা তিন দিন তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়, জানিয়েছেন বরিস।

তিনি বলেন,‘যেতেই চাইনি হাসপাতালে। ডাক্তারদের জোরাজুরিতেই হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছিলাম।’

এরপর সুস্থ হয়ে গত ১২ এপ্রিল বরিস হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।

সাক্ষাৎকারে বরিস বলেছেন,‘আমি কিন্তু নিজে কখনোই ভাবিনি ফিরে আসতে পারব না। বরং কাজে ফেরার জন্য সব সময়ই উন্মুখ হয়ে থেকেছি। ছটফট করেছি।’

হাসপাতাল থেকে ফেরার পর গত সপ্তাহের সোমবারই নিজের কার্যালয়ে যান ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। এরপর বুধবার তিনি বাবাও হন, তার বাগদত্তা ক্যারি সাইমন্ডস একটি শিশুর জন্ম দেয়ায়। ক্যারি বলেছেন,‘হাসপাতালে বরিসকে বাঁচিয়ে রাখতে তিন দিনে অনেক অনেক লিটার অক্সিজেন দিতে হয়েছিল চিকিৎসকদের।’

তবে ন্যাশনাল হেল্‌থ সার্ভিসের যে চিকিৎসকেরা টানা তিন দিন ধরে তার চিকিৎসা করেছেন, তাদের প্রতি বরিস ও তার বাগদত্তা ক্যারি যে শুধু কৃতজ্ঞ, তা-ই নয়; নিক প্রাইস ও নিক হার্ট নামে যে দুই চিকিৎসকের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া বরিসের ফিরে আসা সম্ভব ছিল না, তাদের নাম জোড়া লাগিয়েই সদ্যোজাতের নামকরণও করেছেন বরিস ও ক্যারি। সদ্যোজাতের নাম দেয়া হয়েছে, উইলফ্রেড লরি নিকোলাস জনসন। সূত্র : আনন্দবাজার