ভারতের পর অস্ট্রেলিয়ার কাছেও হারল পাকিস্তান

২১ অক্টোবর, ২০২৩

বিশ্বকাপে সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছে না পাকিস্তানের। ভারতের কাছে হারের পর জয়ের খোঁজে মাঠে নেমেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ফলাফল একই। এবার অজিদের কাছে বাবর-রেজওয়ানদের হার ৬২ রানে। দারুণ জয়ে পয়েন্ট তালিকার চারে উঠে গেছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের সমান পয়েন্ট নিয়ে রানরেটের ব্যবধানে পাঁচে নেমে গেছে পাকিস্তান।

শুক্রবার ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া। এদিন টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দলপতি বাবর আজম।

এদিন, ব্যাটিং সহায়ক এবং ছোট বাউন্ডারির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের জোড়া সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া ৩৬৭ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করায়। জবাবে রান তাড়া করতে গিয়ে ২৭ বল আগেই ৩০৫ রানেই অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। এতে ৬২ রানের পরাজয় বরণ করল বাবর-রেজওয়ানরা।

৩৬৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানি দুই ওপেনার ইমাম-উল-হক ও আব্দুল্লাহ শফিক যেভাবে শুরুটা করেছিলেন, তাতে হয়তো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ম্যান ইন গ্রিনরা। ৬.৩৮ রানরেটে ২১ ওভারের মধ্যে তারা দলকে এনে দেন ১৩৪ রান। এরপর দুজনেই ছুটছিলেন আরও বড় ইনিংসের পথে। তবে ২২তম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই মার্কাস স্টয়নিস তুলে নেন শফিকের উইকেট। ৬১ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৪ রান করে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

এরপর ২৪তম ওভারে আবারও আক্রমণে এসে ইমাম-উল-হককেও সাজঘর ফেরান স্টয়নিস। ৭১ বলে ১০ চারের বাউন্ডারিতে তিনি ৭০ রান করে ক্যাচ দেন মিচেল স্টার্ককে। দুই ওপেনারের পর দলের মূল স্তম্ভের ভূমিকা রাখতে পারতেন অধিনায়ক বাবর আজম ও উইকেটরক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে দুজনের জুটি টিকল মাত্র ২১ রান পর্যন্ত। দলীয় ১৩৪ রানে প্রথম উইকেট হারানো পাকিস্তান তৃতীয় ব্যাটারকে হারিয়েছে ১৭৫ রানে। প্যাট কামিন্সের করা বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিডে থাকা অ্যাডাম জাম্পার হাতে ধরা পড়েছেন বাবর (১৮)।

বাবর আজমের আউটের পর পরস্থিতি কিছুটা সামাল দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সৌদ শাকিল। ৪৮ বলে ৫৭ রানের একটি জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান। যখন মনে হচ্ছিল উইকেটে টিকে গেছেন তারা ঠিক তখনই আঘাত হানেন প্যাট কামিন্স।

কামিন্সের একটি বাউন্সার পুল করতে গিয়ে স্টয়নিসের হাতে ধরা পড়েন এই বা হাতি ব্যাটসম্যান। ২৩২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন ইফতিখার আহমেদ।

৩৭ তম ওভারে কামিন্সের এক ওভারে ২টি ছক্কা হাকান এই ইফতিখার। পাওয়ার হিট ব্যাটিং করা ইফতিখারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন জাম্পা। তবে অনফিল্ড আম্পায়ার নট আউটের সিদ্ধান্ত দেন। রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। তবে অজিদের রিভিউয়ে প্যাভিলিওনে ফিরতে হয় ইফতিখারকে। ৩ ছক্কা মেরে ২০ বলে ২৬ রানে করে দলকে ২৬৯ রানে রেখেই বিদায় নেন তিনি।

আরেক প্রান্তে আগলে ছিলেন রিজওয়ান। কিন্তু তিনিও ইফতিখারের আউটের পর বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি। ৪১তম ওভারের ৫ম বলে সেই জাম্পার একটি দুর্দান্ত ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন। ৫টি চারের সহায়তায় ৪০ বলে ৪৬ রান করেছিলেন রিজওয়ান।

এরপর মোহাম্মদ নাওয়াজের ১৬ বলে ১৪ রান কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে পাকিস্তানের। তিনিও জাম্পার বলে স্টাম্পড আউট হন। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি পাকিস্তান। ৪৫.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩০৫ রান করে পাকিস্তান।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নিয়েছেন লেগ-স্পিনার জাম্পা। এছাড়া প্যাট কামিন্স ও স্টয়নিস দুটি করে শিকার করেন।

এর আগে, অজি দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর মিচেল মার্শের পাওয়ার হিটিংয়ে এলোমেলো পাকিস্তান। ওপেনিংয়ে ৩৩.৪ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার বোর্ডে ২৫৯ রান। মারকুটে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে জোড়া সেঞ্চুরিও তুলে নেন মিচেল মার্শ আর ডেভিড ওয়ার্নার। একটি উইকেটের জন্য রীতিমত হাহাকার করছিল পাকিস্তান।

অবশেষে ওপেনিং জুটিটি ভাঙেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। শর্ট ফাইন লেগে উসামা মীরের হাতে ক্যাচ দেন মার্শ। ১০৮ বলে ১২১ রানের ইনিংসে ১০টি বাউন্ডারি আর ৯টি ছক্কা হাঁকান মার্শ। এটি তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসও।

বিধ্বংসী ওপেনিং জুটি ভাঙার পরের বলে আরও একটি উইকেট তুলে নেন শাহিন আফ্রিদি। মিডঅনে তুলে মারতে গিয়ে বাবর আজমের ক্যাচ হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১ বলে ০)। শেষের দিকে দুর্দান্ত বোলিং পাকিস্তানের, অস্ট্রেলিয়ার আরেক ব্যাটিং স্তম্ভ স্টিভেন স্মিথকেও থিতু হতে দেননি উসামা মীর। লেগস্পিন বলে ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ডানহাতি এই ব্যাটারকে (৭)। অল্প সময়ের মধ্যে ৩টি উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।

কিন্তু ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২১তম সেঞ্চুরি তুলে নেয়া ওয়ার্নার তার ইনিংসটি বড় করেছেন বেশ। ৪৩তম ওভারে এসে অবশেষে এই বিধ্বংসী ব্যাটারকে সাজঘরের পথ দেখান হারিস রউফ। তবে ওয়ার্নার ততক্ষণে দেড়শ পেরিয়ে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহকে নিয়ে গেছেন ১৬৩ রানে। ১২৪ বলের মারকুটে ইনিংসে ১৪ বাউন্ডারির সঙ্গে ৯টি ছক্কা হাঁকান এই ওপেনার। তবে এটিই ওয়ার্নারের ক্যারিয়ারসেরা নয়। তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটি ১৭৯ রানের।

পাকিস্তানের হয়ে ১০ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে শাহিন শাহ আফ্রিদি নেন ৫টি উইকেট। ৩ উইকেট শিকার হারিস রউফের।