২৫ অক্টোবর, ২০২৩
টাঙ্গাইলের ফুসফুস খ্যাত মধুপুরের শাল গজারির বন নব্বইয়ের দশক থেকে পর্যায়ক্রমে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বের কারণে বিলীনের পথে। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৪৫ হাজার ৫৬৫ দশমিক ৩৮ একর এলাকা জুড়ে মধুপুরের শালবন বিস্তৃত ছিলো। দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় প্রভাবশালীদের জবর দখলের কারণে শালবনের বিস্তৃতি এসে দাড়িয়েছে ৯ হাজার একরে। এ হিসেবে মধুপুর বনাঞ্চলের পাঁচ ভাগের চার ভাগই এখন জবর দখলকারীদের নিয়ন্ত্রণে। আর এ নিয়ন্ত্রণকারীদের পক্ষে কাজ করছে অসাধু বন কর্মকর্তারাই।
অভিযোগ রয়েছে, ২০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্বে যোগদান করেন মো. হামিদুল ইসলাম। তিনি যোগদানের পর থেকে বনখেকো ও দখলদার লুটেপুটে খাচ্ছে সরকারি বনভূমি এবং উজার হচ্ছে শাল গজারিসহ বনের অন্যান্য গাছপালা। তার ব্যক্তিস্বার্থ ও স্বজনপ্রীতির কারণে বনভূমি উজাড় হচ্ছে।
তার বাড়ি বনের উত্তর সিমান্তবর্তী জামালপুর জেলার নরুন্দি এলাকায় হওয়ার কারণে নিজস্ব লোক দিয়ে শাল গজারি গাছ কাটিয়ে খুব সহজেই দোখলা রেঞ্জ পার করে তার গ্রামের বাড়ি এলাকায় বিক্রি করে থাকেন। বনের সরকারি সম্পদ নিজস্ব সম্পদ মনে করে বনের গাছ কাটিয়ে হাগুড়াকুড়ি একটি সমিল থেকে চিড়িয়ে উপার ভুটিয়ায় আনিস এর ফার্নিচারের দোকান থেকে মেয়ের শশুরবাড়িতে ফার্নিচার বানিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাাওয়া গিয়েছে। এমনকি স্থানীয় বন খেকোদের কাছেও গাছ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মধুপুর বনাঞ্চলের দোখলা রেঞ্জের আওতাধীন হাগুড়াকুড়ি এলাকায় পাকা রাস্তার পাশ থেকে ৫টি গজারি গাছ কাটা হয়েছে। এলাকায় শতাধিক গাছ কেটে বন উজার করা হচ্ছে। মাগিচোরা, হরিণধরা এলাকায় বনখেকো একটি চক্র বনাঞ্চলের গজারি গাছ কেটে নিয়ে গেছে। পরে আছে শুধু ডালপালা।
দোখলা রেঞ্জের মাগিরচোরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে এবং অপরপাশে আনারস বাগান করা হয়েছে। কিছু অংশে গজারি বাগানের ভিতরেই করা হয়েছে কলা বাগান। কলাবাগান পরিচর্যার কাজ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। তারা জানান, আগের রেঞ্জ কর্মকর্তা তাদের কলা বাগান কেটে দিলেও এ রেঞ্জার আসার পর আবার চাষাবাদের সুযোগ দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, ৫৪ হেক্টর প্লট নবায়নের জন্য এবং সরকারি বন টেন্ডারে বিক্রির পর চেক বুঝে পাওয়ার জন্য দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা হামিদুল ইসলামকে দুইবারে ৫ লাখ টাকা দিয়েও এখনো চেক বুঝে পাননি ভুক্তভোগীগণ।
তারা আরও জানান, প্রাকৃতিক বাগানের শাল গজারি গাছ কেটে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে আনারস ও কলা রোপণের পায়তারা করছে দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হামিদুল ইসলাম।
এ বিষয়ে মধুপুর বনাঞ্চলের দোখলা রেঞ্জের দায়িত্বরত রেঞ্জ কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম জানান, তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে এই রেঞ্জে দায়িত্ব নিয়েছেন। দীর্ঘদিনের গাছকাটা এবং বনের জায়গা জবর-দখলের প্রচলন থাকলেও তিনি এসে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছেন এবং তিনি যোগদানের পর থেকে প্রায় ২০টা মামলা দিয়েছেন। তার দেওয়া মামলায় এখনো কয়েকজন জেল হাজতে আছেন। বন রক্ষার্থে তার এমন কঠোর ভূমিকা দেখে স্থানীয় জবর- দখলকারী এবং বনখেকোরাই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুৎসা রটাচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান জানান, ভূমি জবর-দখলের বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে