অনলাইন ক্লাস হোক শিক্ষার্থীবান্ধব

১৫ জুলাই, ২০২০

করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় গত ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্যহত শিক্ষা কার্যক্রম। লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎকে স্থবির করে রেখেছে। তাই সেশন জটের ছোবল থেকে রক্ষা করতে চালু করা হয়েছে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম।

স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস চালু করা হয়েছে সংসদ টিভিতে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়েছে। কিন্তু সকল শিক্ষার্থী কি অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে?

অনলাইন ক্লাস ইতিবাচক হলেও এতে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। ৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ জন। শতকরা হারে ৫০ ভাগের ও কম। এদিকে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে। তারা ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ক্লাস পরিচালনা করে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখলে সেশন জটের শঙ্কা থেকেই যায়। যা দেশের অর্ধশতাধিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে আট লাখ শিক্ষার্থীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় শিক্ষার বাতিঘর।  অনলাইন ক্লাসে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ না করায় বেশ কিছু সিমাবদ্ধতা রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী আসে গ্রাম বা মফস্বল থেকে। এসব শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসের প্রধান অন্তরায় মন্থর গতির ইন্টারনেট।

এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই আর্থিক ভাবে অসচ্ছল। তাদের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে স্মার্ট ফোন বা পিসি না থাকা, চড়া মূল্যের ইন্টারনেট প্যাক। এসব শিক্ষার্থী বুঝতেও পারছে যে, অনলাইন ক্লাসের বিকল্প নেই। তবুও বিভিন্ন সিমাবদ্ধতার কারণে ক্লাসে অংশগ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে।

সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৪০ লক্ষের বেশি শিক্ষার্থীর ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা করতে ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম’ প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । এছাড়া গ্রামীণ পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য সরকার ইডিসি প্রকল্প গ্রহণ করছে। এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।

অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার জন্য যেসব সিমাবদ্ধতা রয়েছে তা মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়া অনেক শিক্ষক এ শিক্ষা পদ্ধতির সাথে পরিচিত নয়। এসব শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনলাইন ক্লাস সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে। সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অথবা উভয়ের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে শিক্ষার্থীবান্ধব অনলাইন ক্লাস উপহার দিতে।

তাজমিন নাহার : শিক্ষার্থী, ল' এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।