০৭ জানুয়ারী, ২০২৪
বাংলাদেশে রোববার সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত সারাদেশে জাতীয় সংসদের ২৯৯টি আসনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে রোববার।তবে বেলা ৪টার পরেও যদিও কেন্দ্রের ভেতরে চারশো গজের বেষ্টনীর ভেতর থাকা কোন ভোটার অপেক্ষমাণ থাকলে, তার ভোট গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ৪টা পর্যন্ত ওই চারশো গজের ভেতরে থাকা প্রতিটি ভোটার ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন।বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডঃ নাজমুল আহসান কলিমউল্ল্যাহ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা, বেসরকারি ফলাফল প্রকাশ, চূড়ান্ত ফল প্রকাশ এবং নির্বাচনি বিরোধ নিষ্পত্তির মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোববারের এ নির্বাচনে দেশজুড়ে ৪২ হাজারের বেশী কেন্দ্রে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন প্রায় ১২ কোটি ভোটার।নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ভোট শেষে প্রতিটি কেন্দ্রেই ব্যালট গণনা করে ফল ঘোষণা করবেন প্রিজাইডিং অফিসার। এরপর সেটি পাঠিয়ে দিবেন রিটার্নিং অফিসারের কাছে।
“রিটার্নিং অফিসার প্রাপ্ত ফল নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। কমিশন সেটি ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বেসরকারি ফল হিসেবে প্রকাশ করবে,” বলছিলেন তিনি।কমিশন জানিয়েছে নির্বাচন নিরাপদে সম্পন্ন করতে প্রায় সাত লাখের কাছাকাছি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাত লাখ বেসামরিক কর্মকর্তা ও প্রায় এক লাখ পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোটগ্রহণ শেষে যা যা হবে
প্রফেসর ডঃ নাজমুল আহসান কলিমউল্ল্যাহ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর একটি কেন্দ্রের সবগুলো বুথের ব্যালট বাক্সগুলো একটি নির্ধারিত কক্ষে আনা হবে গণনার জন্য।
“এরপর প্রার্থীদের এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতিতে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সগুলো থেকে ব্যালট পেপার গুলো বের করা হবে গণনার জন্য,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।গণনা শেষ হলে সবার প্রাপ্ত ভোট উল্লেখ করে যে তালিকা হবে সেটিতে পোলিং এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাক্ষর নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দিবেন ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর জন্য।মূলত কেন্দ্রগুলোতে ভোট গণনার যে ফল সেখান থেকে এজেন্টদের মাধ্যমে জনসাধারণ ওই কেন্দ্রের ফল জেনে যায়।
তবে গণনা শেষে ব্যালট পেপারসহ সব জিনিসপত্র কন্ট্রোল রুমে নেয়া হয় সংরক্ষণের জন্য। গণপ্রতিনিধিত্ব সংশোধন আইন অনুযায়ী এসব ডকুমেন্ট একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণের নিয়ম আছে।রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে ফল পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ঢাকা থেকে সংসদীয় আসন ভিত্তিক বেসরকারি ফল প্রকাশ করে।নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই সব জেলার জন্য একজন করে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করেছে।তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য দুজন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন বেসরকারি ফলাফল প্রকাশ করার কয়েকদিনের মধ্যে গেজেট আকারে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে থাকে।তবে গণপ্রতিনিধিত্ব সংশোধন আইন ২০২৩ অনুযায়ী চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হলেও ব্যালট পেপার সিলগালা অবস্থায় নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে এবং এক বছর সংরক্ষণে রাখতে হবে। পরে প্রয়োজন হলে উচ্চ আদালত এগুলো খোলার বা পরিদর্শনের আদেশ দিতে পারবে।
এছাড়া আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যয়ের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ব্যয় বিবরণী দাখিল করবে। নিবন্ধিত দলগুলো তাদের প্রার্থীদের ব্যয় বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কমিশন তার নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।পরে প্রার্থীদের দাখিলকৃত বিবরণী রিটার্ন বা দলিলাদি কমিশনের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করতে হবে।
এর মধ্যে কোন প্রার্থী চাইলে নির্বাচন বাতিল বা নির্বাচিত প্রার্থীর নির্বাচন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে যেতে পারবেন।আইনে বলা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ কোন কারণে নির্বাচনি দরখাস্তের বিচার মুলতুবি রাখবে না এবং ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির চেষ্টা করবে।নির্বাচনে মারাত্মক দুর্নীতি বা বেআইনি কার্য সংঘটিত হলে হাইকোর্ট নির্বাচন সম্পূর্ণ বাতিল করতে পারবে।
মি. কলিমউল্ল্যাহ বলছেন কেউ আইনি পদক্ষেপ নিলেও তার নিষ্পত্তি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। “বরং নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত গেজেটের পরই নির্বাচিতদের শপথ আয়োজনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে সংসদ সচিবালয়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।অন্যদিকে নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও সহিংসতা রোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দশই জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকাগুলোতে অবস্থান করবে।
সূত্র : বিবিসি