ডেঙ্গু জ্বরে সচেতনতা

২৪ জুলাই, ২০১৯

এখন জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। জ্বর আসার কারণ নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনেরাও চিন্তিত থাকেন। বিশেষ করে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় যেভাবে পালাক্রমে প্রতিবছর মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস (গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময়) পর্যন্ত দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এই সময়ে জ্বর মানেই আতঙ্ক।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, ‘এ সময়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। প্রথমবার ডেঙ্গু হলে এটি শরীরে জটিলতা ছাড়া এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। যাঁরা আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের শরীরে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে কয়েক দিনেই ডেঙ্গু পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।

কীভাবে ছড়ায়?

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া জ্বর দুটোই এডিস মশার কারণে হয়। এই দুটি রোগের লক্ষণে যেমন নানা মিল রয়েছে তেমনি আবার ভিন্নতাও রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে।

চেনার উপায় কী?

ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর এবং সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচ দিনের সময় সারা শরীরে লালচে দানা দেখা যায়। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতে পারে।

রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করে এবং রুচি কমে যায়। এ অবস্থাটা যেকোনো সময় জটিল হয়ে উঠতে পারে। যেমন অন্য সমস্যার পাশাপাশি যদি শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপড়া শুরু হয়। যেমন: চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সঙ্গে রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে ও চোখের বাইরে রক্ত পড়তে পারে।

মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব বা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেক দিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি হতে পারে। এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন:

ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এই জ্বর সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসা যথেষ্ট। তবে যাদের আগে ডেঙ্গু হয়েছিল, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে। যেমন—

চিকিৎসা:

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো গুরুতর জটিলতা না হয়। সাধারণত লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পার্থক্য কী?

প্রতিরোধই হোক প্রথম পদক্ষেপ:

যেহেতু এটি একটি মশাবাহিত রোগ, তাই মশার বংশ বৃদ্ধিরোধ, নিধন ও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর এই মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশ বৃদ্ধি করে।

আর তাই ঘরবাড়ি ও এর চারপাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ক্যান, টিনের কৌটা, মাটির পাত্র, বোতল, নারকেলের মালা ও এ-জাতীয় পানি ধারণ করতে পারে, এমন পাত্র ধ্বংস করে ফেলতে হবে, যেন পানি জমতে না পারে। গোসলখানায় বালতি, ড্রাম, প্লাস্টিক ও সিমেন্টের ট্যাঙ্ক কিংবা মাটির গর্তে চার-পাঁচ দিনের বেশি কোনো অবস্থাতেই পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। পরিষ্কার ও স্থবির পানিতে ডেঙ্গুর জীবাণু বেশি জন্মায়।

ঘরের আঙিনা, ফুলের টব, বারান্দা, বাথরুম, ফ্রিজের নিচে ও এসির নিচে জমানো পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা, যাতে মশা বংশবৃদ্ধি করতে না পারে।

মশা মারার ওষুধ দিয়ে মশা নিধন করা। দিনের বেলায় এডিস মশা কামড়ায় বলে দিনের বেলায়ও মশারির নিচে ঘুমান। বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট পরানো। আক্রান্ত রোগীকে পৃথক বিছানায় মশারির ভেতর রাখতে হবে। ঘরের দরজা, জানালায় ও ভেন্টিলেটরে মশানিরোধক জাল ব্যবহার করুন।

মো. শরিফুল ইসলাম

চিকিৎসক