মার দাফন শেষে বাড়িতে এলো প্রবাসী ছেলে ও জামাতার লাশ

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মায়ের অসুখের খবর পেয়ে এক নজর দেখতে সুদূর ইতালি থেকে ছুটে আসছিলেন শাহ আলম। কিন্তু বিমানে উঠার পর খবর পান মা আর বেঁচে নেই। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস জানাযায় অংশ নিতে বাড়িতে আসার সময় পথিমধ্যে নরসিংদীর শিবপুরে তাদের বহনকারী গাড়িটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রবাসী শাহ আলম, তার ভগ্নিপতি সেলিম মিয়া ঘটনাস্থলে মারা যান। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার নাটাই গ্রামের শাহজাহান মেম্বারের ছেলে শাহ আলম ভাই-বোনদের মধ্যে তৃতীয়। গত ১৫ বছর আগে ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তার বসবাস। নিহত ভগ্নিপতি সেলিম পার্শ্ববর্তী ভাটপাড়া গ্রামের শামসুউদ্দিনের ছেলে। সেলিম প্রবাসী শাহ আলমকে রাজধানী ঢাকা আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে আনতে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় চালকসহ আরো দুইজন আহত হন। 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে শাহ আলম তৃতীয়। ভাইদের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। ১৫ বছর আগে তিনি ইতালি পাড়ি জমান। তার স্ত্রী রানু বেগম, বড় মেয়ে মঞ্জিলা আক্তার (২৪), দুই ছেলে শাহ পরান (২২) ও শামিম মিয়াও ইতালিবাসী। ছয় থেকে সাত মাস আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন তিনি। তার বড় ছেলে শাহ পরান কয়েক দিন আগে ইতালি যান। বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় শাহ আলমের (৫৫) লাশ। এর আগে দুপুরে তার মা ফিরোজা বেগমের (৯০) দাফন সম্পন্ন হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, কয়েক দিন ধরে ফিরোজা বেগম শয্যাশায়ী। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে গত বুধবার (বাংলাদেশ সময়) ইতালি থেকে উড়োজাহাজে ওঠেন শাহ আলম। এ সময় তিনি খবর পান মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তিনি তার ভাইকে বলেছিলেন, আসতে দেরি হলে মাকে দাফন করে দিয়ো। মাকে কষ্ট দিয়ো না। তাকে আনতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান ভগ্নিপতি সেলিম ও ভাগিনা সাব্বির মিয়া। বিমানবন্দর থেকে মাইক্রোবাসে ফেরার পথে দুপুর ১২টার দিকে শিবপুর উপজেলার ঘাসিরদিয়া এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে ভেতরে অবস্থান করা চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হন। পরে নরসিংদী হাসপাতালে দুই জনের মৃত্যু হয়। শেষবারের মতো মাকে আর দেখা হয়নি শাহ আলমের। বাড়ি পৌঁছার আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তার।

প্রতিবেশীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে ফিরোজা বেগমের লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করেন স্বজনরা। রাত আটটার পর শাহ আলম ও তার ভগ্নিপতি সেলিমের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নাটাই ঈদগাহ মাঠে শাহ আলমের জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। সেলিমের লাশ গ্রামের বাড়ি অষ্টগ্রামে নিয়ে যান স্বজনরা। তিনি তালশহর অষ্টগ্রাম এলাকার শামসুদ্দিনের ছেলে। জুম্মার নামাজের পর জানাজা শেষে কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নিহতের ভাই নুরুজ্জামান বলেন, বিমানবন্দর থেকে শাহ আলমকে নিয়ে ফেরার পথে মাইক্রোবাসচালক গাড়ি চালানো অবস্থায় একটু পরপর মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। তাঁকে গাড়ি থামিয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার বলা হয়েছিল। কিন্তু গাড়িচালক তা শোনেননি। সামনের গাড়ি অতিক্রম করতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।