মস্কোয় হামলার নতুন ভিডিও প্রকাশ, যা বলছেন পুতিন

২৫ মার্চ, ২০২৪

মস্কোয় কনসার্ট হলে হামলার একদিন পর নতুন এক ভিডিও প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এটি এমন সময় প্রকাশ করা হলো যখন রাশিয়া এই হামলার জন্য ইউক্রেনকে দোষারোপ করছে। যদিও হামলার পরপরই দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল সংগঠনটি। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

শুক্রবার (২২ মার্চ) মস্কোর উত্তরে ক্রাসনোগোর্স্ক অঞ্চলে ক্রোকাস সিটি হলে এক ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। যাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪৩ জন নিহত হয়েছেন। হামলার পর আইএস জানায়, ‘তাদের সঙ্গে (ইসলামবিরোধী) দেশগুলোর চলমান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতেই এ হামলা চালানো হয়েছে।’ আর হামলায় আইএসের জড়িত দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে হামলার বিষয়ে তাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল, রাশিয়া তা জানালেও তারা কানে তোলেনি বিষয়টি।

দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জন্য রোববার (২৪ মার্চ) রাশিয়া দেশব্যাপী শোক দিবস পালন করছে। এদিন মস্কোর বাইরের ক্রাসনোগর্স্কের ক্রোকাস সিটি হলে হাজার হাজার মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আর স্থানীয় জরুরি বিভাগের সদস্যরা বলছেন, তারা এখনও ক্ষতিগ্রস্ত কমপ্লেক্সের ভেতরে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করলেও রোববার সন্ধ্যায় মস্কোর বাইরে তার বাসভবনে একটি গির্জায় একটি মোমবাতি জ্বালাতে দেখা গেছে। এসময় শুক্রবারের ঘটনায় যারা মারা গেছেন, তাদের সম্মান জানান পুতিন। পাশাপাশি মস্কোর বিদেশী দূতাবাসগুলোও সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে উচ্চ উত্তেজনার মধ্যেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং নেদারল্যান্ডসের দূতাবাসগুলোতে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছিল।

আইএস নতুন ভিডিওটি প্রকাশ করেছে সংগঠনটির পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ‘আমাক’-এ। তাতে দেখা যায়, ক্রোকাস সিটি হলে গানের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া লোকজনের ওপর নির্বিচার গুলি চালাচ্ছেন হামলাকারীরা। এতে অনেকে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ছেন। একপর্যায়ে এক বন্দুকধারীকে বলতে শোনা যায়, ‘ওদের মেরে ফেলো, কোনো দয়া দেখিয়ো না।’

ওই হামলার পর ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সন্দেহভাজন ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রুশ গোয়েন্দারা। রাশিয়ার তদন্ত কমিটি রোববার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে সন্দেহভাজনদের চোখ বেঁধে মস্কোর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে চারজন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। রুশ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির কর্মকর্তা আন্দ্রে পোপভ মনে করেন, এই হামলার পেছনে ইউক্রেন জড়িত, আইএস নয়। আর এতে অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভাষ্যও একই। আইএসের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে তিনি বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে কিয়েভ সরকার।’ যদিও রাশিয়ার এসব অভিযোগ নাকচ করেছে ইউক্রেন। কিয়েভের দাবি, এর মাধ্যমে দেশটিতে চলমান যুদ্ধের মাত্রা আরও বাড়ানোর ক্ষেত্র তৈরি করতে চাইছে মস্কো।

এদিকে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র আদ্রিয়েনে ওয়াটসন বলেছেন, মস্কোয় হামলার পেছনে শুধু আইএসের হাত রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছেন তারা। হামলার সঙ্গে ইউক্রেনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আর যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির পর ওয়াশিংটনের উদ্দেশে কড়া সুরে কথা বলেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। রোববার তিনি টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘আমার আশা ছিল, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তাদের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড রহস্য খুব দ্রুত সমাধান করবে। কিন্তু না, ৬০ বছরের বেশি সময় গড়িয়ে গেলেও, শেষ পর্যন্ত তারা হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে পারেনি। নাকি ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইএস জড়িত ছিল?’