‘স্বপ্ন পূরণ করতে অনেক টাকা, নয়তো মা-বাবা থাকা প্রয়োজন’

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে ফিরোজ মোল্যা নামে একাদশ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী। সে বোয়ালমারী সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ২০২২ সালের বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় ফিরোজ। মৃত্যুর পূর্বে ফিরোজের লিখে যাওয়া একটি সুইসাইড নোট বুধবার রাতেই ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

থানা ও এলাকাসূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ফিরোজ (১৮) ও তার ছোটভাই ফাহিম (১২) উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামে নানা বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করেছিল। শৈশবেই তাদের বাবা নিরুদ্দেশ হয়ে তাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় মা ফিরোজা বেগম তার বাবার বাড়ি চাপলডাঙ্গায় তাদের রেখে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। নানা-নানির মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী এক মামাকে নিয়ে তারা নানাবাড়িতেই বসবাস করতো। ফিরোজ পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে দন্ত চিকিৎসকের সহযোগী ও কখনো কখনো নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতো। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সে নানা বাড়ির পাশ্ববর্তী মসজিদে নামাজ আদায় করে। পরে বসতঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আড়ার সাথে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। বিষয়টি পরিবারের লোকজন টের পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

মৃত্যুর পূর্বে ফিরোজ সুইসাইড নোটে লিখে যায়, ‘আমি জানি আমি কি করছি। জানি আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। কিন্তু আমার কাছে যে আমার স্বপ্নগুলো অনেক দামি ছিলো। হয়তো আমার জীবনের চেয়েও দামী। আমরা যেই সমাজে বসবাস করি সেই সমাজে স্বপ্ন পূরণ করতে অনেক টাকা; নয়তো মা-বাবা থাকা প্রয়োজন। যার কোনোটাই আমার কাছে নেই। আমি ওকে ভালোবাসতাম। আমার আবেগ মাখা কথাগুলো কারো বিবেকে লাগবে না, সেটা আমি জানি। আর আমি বোকা বলবো সেই সব মানুষদের যারা আমাকে একজন ভালো ছেলে ভাবতেন। আমি আসলে কখনোই ভালো ছিলাম না, শুধু ভালো থাকার অভিনয় করতাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। আর কোনো কষ্ট করতে ও পেতে চাই না। তাই এই পথ বেছে নিলাম। আমাকে সবাই ঘৃণা করলেও যেন ভুলে যায়, এটাই আমার শেষ ইচ্ছা! চির বিদায় সবাইকে। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’

লাশ উদ্ধারকারী বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক মো. সরোয়ার হোসেন জানান, খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে বোয়ালমারী থানায় আনা হয়েছে। ঘটনাস্থল চাপলডাঙ্গা গ্রামের ফিরোজের বসতঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়।