নারী হজের সফরে মাহরাম না পেলে কী করবেন

০৫ মে, ২০২৪

হজ নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর ফরজ। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

তবে, পুরুষের মতো আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্যবান হলেই নারীর ওপর হজ ফরজ হয় না, বরং নারীর জন্য কিছু অতিরিক্ত শর্ত পূরণ হওয়া জরুরি। স্বামী বা মাহরাম ছাড়া মহিলাদের হজে গমন শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে তার মাহরাম ব্যতিরেকে একাকী অবস্থান না করে। তখন এক ব্যক্তি উঠে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য নাম লিখিয়েছি। ওদিকে আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে। নবীজি বললেন, ফিরে যাও। তোমার স্ত্রীর সাথে হজ করো।’ (সহিহ বুখারি: ৫২৩৩; সহিহ মুসলিম: ১৩৪১)

হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি বলেছেন, মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে কোনো নারী তিন দিন দূরত্বের পথে সফর করবে না। (সহিহ বুখারি: ১০৮৬; সহিহ মুসলিম: ১৩৩৮)

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে নারী আল্লাহ এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য নিজের বাবা, ছেলে, স্বামী, ভাই বা অন্যকোনো মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে তিন দিন বা ততোধিক দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়।’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৪০; সুনানে কুবরা, বাইহাকি: ৩/১৩৮)

এসব হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মাহরাম ছাড়া হজের সফরে বের হওয়া যাবে না। আর এত সুস্পষ্ট হাদিস থাকার পর এখানে ভিন্ন কোনো যুক্তি দাঁড় করানো বাঞ্ছনীয় নয়। 

নারীর হজ ফরজ হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো- মাহরামের খরচ সম্পন্ন করার সামর্থ্য থাকা। মাহরামের হজের খরচ সম্পন্ন করার সক্ষমতা না থাকলেও নারীদের ওপর হজ ফরজ হয় না। তবে, মাহরাম যদি ফরজ হজ করতে যায়, সেক্ষেত্রে তার সঙ্গে গেলে খরচ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। (বাহরুর রায়েক: ২/৩৩৯)

সুতরাং হজের সফরে মাহরাম না পেলে নারীদের করণীয় হচ্ছে, মাহরামদের কেউ নিজ ব্যবস্থাপনায় হজের সফরে বের হয় কি না সেদিকে নজর রাখা

অথবা কোনো এক মাহরামকে নিজ খরচে হজে নিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ হাতে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও দুটোর কোনোটাই না হয় কিংবা ততোদিনে সফরে বের হওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা লোপ পেয়ে যায় তাহলে এমন ক্ষেত্রে অন্যকে দিয়ে বদলি হজ করাবেন। এ রকম অবস্থায় থাকা নারীদের কর্তব্য হলো- অসিয়ত করে রাখা যেন হঠাৎ তার মৃত্যু হলে তার ওয়ারিশরা তার পক্ষ থেকে কাউকে দিয়ে বদলি হজ আদায় করিয়ে নেয়।

(আলবাহরুর রায়েক: ২/৩১৪-৩১৫; আদদুররুল মুখতার: ২/৪৬৪-৪৬৫; মানাসিক, মোল্লা আলি ক্বারি পৃ. ৭৬ ও ৭৮; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২৬-২৭ ও ২৯; ইমদাদুল ফতোয়া: ২/১৫৬)