গর্ভবতী মায়েদের পরিচর্যা

গর্ভবতী  মায়েদের পরিচর্যা

নির্দিষ্ট নিয়মের ও সময়ের মাধ্যমে চেকআপ ও কিছু উপদেশ প্রদান করাকে আমরা গর্ভসেবা বা পরিচর্যা বলে থাকি।

প্রতিটি গর্ভ আপতঃ দৃষ্টিতে  স্বাভাবিক   ফিজিওলোজিক্যাল ব্যাপার হলেও,  আসলে  সব প্রেগন্যান্সিই ঝুঁকিপূর্ণ, যে কোন সময় যে কোন বিপদের  সম্মুখীন  হতে পারে।  তাই সবগুলো  গর্ভবতী  মায়েদের  এন্টিনেটাল কেয়ার বা গর্ভকালীন  পরিচর্যার  আওতায় আসা  দরকার।

গর্ভবতী  মায়েদের  পরিচর্যা  বলতে কি বুঝি?

নির্দিষ্ট  নিয়মের  ও সময়ের  মাধ্যমে  চেকআপ  ও কিছু উপদেশ প্রদান করাকে আমরা  গর্ভসেবা   বা পরিচর্যা  বলে থাকি।


উদ্দেশ্য  কি এই সেবা দানের?

গর্ভাবস্থায়  কোন অতিরিক্ত  ঝুঁকিপূর্ণ কিছু থাকলে সনাক্ত  করা, তার উপযুক্ত চিকিৎসা  প্রদান করা।

সেই কাপলের মনে ভয় ভীতি দুর করা।

তারা কোথায়, কখন কিভাবে ডেলিভারি  করবে সেসব নিয়ে আলোচনা করা।

কিছু শিক্ষামূলক ও জন্মনিয়ন্ত্রণ  নিয়ে উপদেশ  দেয়া ।

আসল  ব্যাপার  হলো  সুস্থ  মায়ের সুস্থশিশু জন্ম দেয়া।

কতবার তাদের  গর্ভকালীন  পরিচর্যায়  ক্লিনিকে  আসতে হবে? প্রথমবার কখন আসবে?

প্রথম তিনমাসের মধ্য  পয়লাবার  আসতে,হবে,  WHO এর মতে কমপক্ষে ৪বার ভিজিট দিতে হবে। প্রথম ১৮ সপ্তাহে, দ্বিতীয়  ২৮ সপ্তাহে,  তারপর ৩২ সপ্তাহে,  শেষে ৩৬ সপ্তাহে।

প্রথমবার  গর্ভবতী  মায়েদের  কি কি পরীক্ষা করতে হবে ? 

রক্ত পরীক্ষা যেমন হিমোগ্লোবিন,   গ্রুপিং এবং আর এইস ফেকটর, মানে সে নেগেটিভ  না পজিটিভ।

ব্লাড সুগারের  অবস্থান নির্নয়, 

প্রস্রাবে সুগার, এলবুমিন, পাচসেলদেখা,

প্যাপস মেয়ার,

সেরেলোজি   টেষ্ট  ফর রুবেলা, হেপাটাইটি বি,

 সোনোলজি   তলপেট ও পেলভিস, এইখানে প্রাথমিক ভাবে প্রেগ্রনান্সির বয়স, কয়টা বাচ্চা, অন্যান্য বিষয় নির্ণয় করা।

তাছাড়া  প্রত্যেক ভিঝিটে, হিমোগ্লোবিন,  প্রস্রাব, ডায়বেটিসের চান্স থাকলে ব্লাড সুগার।
ব্লাড প্রেসার, মায়ের ওজন,  আলট্রাসোনাগ্রাম,।

উপদেশ

বিশ্রাম : রোগীদের  রক্তচাপ  ঠিক রাখে, শরীরে  অতিরিক্ত  পানিজমা বা ফুলে অথবা ইডেমাকে, হওয়াকে রোধ করে।

খাবারদাবার :  তাদের খাবার  ২০০০/২৮০০ কেলরি নিতে হবে। তার মধ্য ৫০% শর্করা, বা বাকিটা প্রোটিন ও চর্বি। তাছাড়া  প্রচুর  পানি, শাকসব্জী,    ভিটামিন মিনারেল    সম্মৃদ্ধ  খাবার খেতে হবে। তবে যারা ওবেজ বা স্থুল  তাদের কেলির হবে।
তাদের খাবার দাবার তেমন নিষেধাজ্ঞা নাই, বাড়িতে যা রান্না হয়, সেই মাছ মাংস ডাল, আগের তুলনায় একটু বেশি খাবে।
অবশ্যই তাদের লোহ জাতীয়  খাবারের সাথে আয়রন কেপসল দিতে হবে, ৪ মাস থেকে ডেলিভারি হওয়া পর্যন্ত।   ডেলিভারির পরেও কয়েকদিন  পর থেকে আবার ও দিতে হবে।
কারন শুধু খাবার খেয়ে আয়রন  ঘাটতি পূরণ হয়না কারন গর্ভবতী  মায়েদের  এবজরবশন ক্ষমতা কমেযায়। তাদের সারা গর্ভসময়ে  ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স  ট্যাবলেট দিতে হবে।

প্রথম তিনমাস আয়রন  এড়িয়ে  যাওয়া ভাল, কারন ঐসময় এমনি  বমিহওয়ার  একটা প্রভাব দেখা যায়, তাই ৪ মাস থেকে দেয়াই ভাল। প্রথমে শুধু ফলিক এসিড, আর ভিটামিন, আর কোন সমস্যা থাকলে, চিকিৎসা!
প্রথম তিনমাস কোন ঔসুধ ডাক্তারের  ব্যাবস্থা পত্র ছাড়া খাওয়া নিষেধ। এইসময় দুরের ভ্রমন নিষিদ্ধ।
গর্ভবতী  মায়েদের আরেকটা অসুবিধা  হয়, তাদের কন্সটিপেষন হয়,  পাইল্স এর সমস্যা বাড়ে, কারন প্রজেস্টারোন হরমোনের জন্য,।

ঢিলেঢালা পোষাক পড়বে, ফ্লাট সেনডেল পড়বে।

তাদের পুরা প্রেগন্যানসি পিরিয়ড এ ১১ কেজি ওজন  বাড়তে হবে।

গর্ভাবস্থায়   প্রস্রাবের প্রদাহ বেশী হয়, এমনকি  কারো কারো বার বার হতে পারে। কারন প্রজেস্টারন হরমনে প্রস্রাবের নালী প্রসারিত হয়,তাই ইনফেকশন  সহজেই  হয়।  এটা চিকিৎসা  না নিলে বাচ্চার উপর ইফেক্ট  পড়বে, সময় হওয়ার আগেই বাচ্চা অপক্ত হিসেবে জন্ম নিতে পারে।

এইসব মায়েদের  ফাংগাল ইনফেকশন বেশী হয়, তাদের  সাদাস্রাব আর চুলকানি  নিয়ে ডাক্তারের  কাছে স্মরনাপন্ন  হতে হবে।

 

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার : আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা