দুই সিটির শতাধিক মার্কেট আগুনঝুঁকিতে

দুই সিটির শতাধিক মার্কেট আগুনঝুঁকিতে

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন।

বনানীর এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের রেশ না কাটতেই গুলশানের ডিএনসিসি কাঁচাবাজারে আগুনের লেলিহান শিখায় ছাই হয়ে গেছে দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। ডিএনসিসি কাঁচাবাজার অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়েছে ব্যবসায়ীরা। এর আগে ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি ভয়াবহ আরেক অগ্নিকাণ্ডে ভস্ম হয়েছিল এই মার্কেট। প্রতিবার দুর্ঘটনার পর আগুন নেভানোর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ ভবনের কমপ্লায়েন্স ঠিক করার ঘোষণা দেওয়া হয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ১২৯টি মার্কেট ও কাঁচাবাজারে

অগ্নিনির্বাপণে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও প্রস্তুতি কোনোটাই নেই। কোনো কোনো ভবনে নামমাত্র কয়েকটি এক্সটিংগুইশার, দু-এক বালতি বালু ও পানি রেখে সারা হয়েছে দায়। এক্সটিংগুইশার সাজিয়ে রাখা হলেও তা ব্যবহার করতে জানে না দোকানদাররা। দীর্ঘদিন ধরে এসব এক্সটিংগুইশার পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় তা আদৌ কার্যকর রয়েছে কি না তা-ও জানে না তারা।

গুলিস্তান জাকির মার্কেটের ব্যবসায়ী সোহাগ বলেন, ‘আগুন নেভানোর কয়েকটি লাল যন্ত্র (এক্সটিংগুইশার) রয়েছে, কিন্তু এগুলোর ব্যবহার আমরা জানি না। আগুন লাগলে অবস্থা ভয়াবহ হবে এই মার্কেটে।’

দুই সিটির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় মার্কেট ৪৩টি এবং ১৫টি কাঁচাবাজার রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি এলাকায় রয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন কাঁচাবাজার। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৩টি মার্কেট এবং ১৩টি কাঁচাবাজার রয়েছে। ডিএসসিসি এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন আরো ১৬টি কাঁচাবাজার রয়েছে। ডিএসসিসির এসব মার্কেট ও কাঁচাবাজারে দোকান রয়েছে প্রায় ২১ হাজার। আর ডিএনসিসির মার্কেট ও কাঁচাবাজারে রয়েছে ১২ হাজারের বেশি দোকান। এসব মার্কেটে ব্যবসায়ী ছাড়াও প্রতিদিন সমাগম ঘটে হাজারো ক্রেতার। কিন্তু অগ্নিনিরাপত্তার ন্যূনতম ব্যবস্থা রাখা হয়নি এসব মার্কেট ও কাঁচাবাজারে। আগুন নেভানোর প্রাথমিক কোনো যন্ত্রপাতিও নেই এসব মার্কেটে। এমনকি গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজার আগেও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও আগুন নির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

দুই সিটির রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, আগুন নির্বাপণের ব্যবস্থা রাখার দায়িত্ব দোকান মালিক সমিতির। কিন্তু বেশির ভাগ দোকান মালিক সমিতি এই বিষয়টি এড়িয়ে যায়। তবে অগ্নিনির্বাপণের পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারে দোকান মালিক সমিতিকে বাধ্য করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, ‘দোকান মালিক সমিতির অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা করার কথা। তবে এখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই। অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রতিটি মার্কেট ও কাঁচাবাজারে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি রাখতে বাধ্য করা হবে।’

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগুনের ভয়ে আমরাও আছি। ডিএসসিসি এলাকার প্রতিটি দোকানে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে রাজস্ব বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে।’