খুসকির সমস্যা সমাধানে যে বিষয়গুলি মানতে হবে

খুসকির সমস্যা সমাধানে যে বিষয়গুলি মানতে হবে

খুসকির সমস্যা না সারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ফাইল ছবি।

খুসকির সমস্যায় অনেকেই রয়েছেন। একটু সতর্ক হলেই খুসকির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন নয়। ম্যালাসাজিয়া ফুরফুর নামে এক বিশেষ ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুসকির জন্য দায়ী, তবে অন্যান্য কারণেও খুসকির সমস্যা দেখা যায়।

ত্বক বিশেষজ্ঞ পিয়ালি চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভ্যাপসা গরমে এমনিতেই মাথার তালু ঘেমে ওঠে। এর সঙ্গে বেশিরভাগ মানুষই মাথায় তেল মাখেন ও সপ্তাহে ১/২ দিন শ্যাম্পু করেন। এর ফলে মাথায় ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেকেই খুসকি কমাতে মাথায় গরম তেল লাগান, এর ফলে খুসকি কমার বদলে বেড়ে যায়।

খুসকি প্রতিরোধ করতে গেলে মাথায় তেল মাখার ব্যাপারে নিয়ম মানতে হবে। গোসলের এক ঘন্টা আগে তেল মেখে পরে তা শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতে হবে। মাথা পরিষ্কার রাখতে এক দিন পরপর নিয়ম করে শ্যাম্পু করার পরামর্শ দিলেন পিয়ালি। আদতে খুসকি বা ড্যানড্রাফ হল ত্বকের সমস্যা। ডাক্তারি মতে এর নাম পিট্রিয়াসিস ক্যাপিটিস।

অল্পবিস্তর খুসকি হলে মাথা পরিষ্কার রাখলে তা আপনিই সেরে যায়। কিন্তু যখন খুসকির সমস্যা ক্রনিক হয়ে দাঁড়ায় তখন তো ডাক্তার দেখানো জরুরি। জানালেন ত্বক বিশেষজ্ঞ সুদীপ দাস। অনেক সময় জটিল ত্বকের অসুখের উপসর্গ হিসেবে মাথা থেকে ত্বকের খোসা উঠে যায়। ত্বকের নীচে সিবেসাস গ্ল্যান্ড নামে এক ধরনের গ্রন্থি থাকে। এর থেকে সেবাম নামে এক তৈলাক্ত পদার্থ বেরিয়ে আমাদের চুল ও ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।

শীতের সময় শুষ্ক আবহাওয়ায় কারও কারও সিবাম নিঃসরণ বেড়ে গিয়ে খুসকির সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তার উপর চুপচুপে করে তেল মাখলে সমস্যা আরও বাড়ে। বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের শরীরের নানা পরিবর্তন আসে, তার জন্যে নানা রকম হরমোন সক্রিয় থাকে। আর এই কারণেই খুসকি আর ব্রণ কমবয়সীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।

সুদীপ জানালেন, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস, একজিমা বা কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হলেও মাথা থেকে খুসকির মত শুকনো ছাল ওঠে। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বুঝতে পারেন অসুখটা সত্যিই খুসকি না অন্য সমস্যা। খুসকি ছোঁয়াচে নয়। তবে মাথায় কোনও সংক্রমণ থাকলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই অন্যের ব্যবহার করা চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো অনুচিত।

সুদীপ জানালেন, কিটোকোনাজল নামে খুসকিনাশক শ্যাম্পু পাওয়া যায়। সপ্তাহে একবার এই শ্যাম্পু করতে হবে। অন্য দিন সাধারণ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোওয়া উচিত। সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন শ্যাম্পু করা দরকার। মাথা পরিষ্কার থাকলে খুসকির সমস্যা থাকবে না। খুসকির মোকাবিলা ছাড়াও এমনিতেই প্রত্যেক একদিন অন্তর শ্যাম্পু করতে হবে। মাথায় তেল লাগাতে চাইলে শ্যাম্পু করার আগে তেল মেখে নেওয়া যেতে পারে। যদি স্ক্যাল্প খুব শুকিয়ে যায় অল্প নারকেল তেল লাগানো যেতে পারে। তবে বাড়াবাড়ি রকমের খুসকি হলে আইসো-ট্রেটিনয়েন গ্রুপের কিছু ওষুধ খেতে হতে পারে।

সপ্তাহে তিন দিন শ্যাম্পু (একদিন কিটোকোনাজল) করে মাথা পরিষ্কার করার পরেও যদি খুসকি না সারে, বার বার হয় এবং খুব বাড়াবাড়ি ধরনের খুসকি হয় টানা দু’তিন মাস না সারে তাহলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান জরুরি। চুল ছোট করে কেটে পরিচ্ছন্ন রাখলে খুসকির সমস্যা বাড়তে পারে না।

পিয়ালি জানালেন, মূলত অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু দিয়ে খুসকির বিদায় করা যায়। তবে বাজার চলতি অ্যান্টি-ড্র্যানড্রাফ শ্যাম্পুগুলিতে সালফার ও জিঙ্ক দেওয়া থাকে। শুরুতে এই সবের সাহায্যে স্ক্যাল্পের স্কেলিং কমিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ক্রনিক খুসকির ক্ষেত্রে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ-সহ অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। খুসকির মতো মনে হলেও সবসময় সেটা খুসকি না-ও হতে পারে, অনেক সময় মাথার ত্বক শুকিয়ে চামড়া ওঠে।

এ ক্ষেত্রে গোসলের আগে তেল মেখে ধুয়ে নিলে শুকনো ভাব চলে যায়। মাথায় সোরিয়াসিসের মত অসুখ হলেও খুসকির মত ছাল ওঠে। তাই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে বাজার চলতি প্রসাধন ব্যবহার না করে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন।