যে চার কাজে আল্লাহর হক আদায় হয়

১৪ জুন, ২০২১

আবু সালাবা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কিছু বিধান ফরজ করেছেন তা তোমরা নষ্ট করো না, কিছু সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা লঙ্ঘন কোরো না, কিছু বিষয় হারাম করেছেন তার নিকটবর্তী হয়ো না, কিছু বিষয়ে তোমাদের অবকাশ দিয়েছেন—তিনি তা ভুলে যাননি তা নিয়ে তোমরা বিতর্ক কোরো না। (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ১৯৭২৫)

আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বান্দার ওপর আল্লাহর চারটি হক বা অধিকারের বর্ণনা দিয়েছেন। তা হলো ক. ফরজ বিধান মান্য করা, খ. দ্বিনের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করা, গ. হারাম থেকে দূরে থাকা, ঘ. যেসব বিষয়ে ইসলামী শরিয়ত কোনো বিধান নির্ধারণ করে দেয়নি সেসব ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করা।

ক. ফরজ বিধানের ব্যাখ্যা : ফরজ এমন বিধানকে বলা হয়, যা অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। যা করলে তা পুণ্যের অধিকারী হয় এবং ত্যাগ করলে তার পাপ হয়। যেমন ঈমান, নামাজ, জাকাত, হজ ইত্যাদি। হাদিসে উল্লিখিত ‘ফরজ’ দ্বারা সব ধরনের ‘বিশ্বাসগত’ ও ‘কার্যত’ ফরজ বিধান এবং ‘ব্যক্তিগত’ (আইন) ও সামগ্রিক (কিফায়া) সব ধরনের ফরজ বিধান অন্তর্ভুক্ত। আর নষ্ট করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তা ছেড়ে দেওয়া, তার কোনো শর্ত ও রোকন ছেড়ে দেওয়া বা তা আদায়ে ইখলাস বা নিষ্ঠার অভাব থাকা, আমলের ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকা। (মিরকাতুল মাফাতিহ : ১/২৭৮)

খ. হারামের ব্যাখ্যা : ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, ‘হারাম মানে যা শরিয়তের অকাট্য প্রমাণ দ্বারা হারাম প্রমাণিত। যেসব বিষয় শরিয়তের দলিল দ্বারা হারাম প্রমাণিত নয় তা নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়।’ (আত-তাবসিরাতু ফি উসুলিল ফিকহ, পৃষ্ঠা ৮০-৮১)। কোনো কাজ হারাম প্রমাণিত হলে তাতে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে—এমন কোনো কাজ করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না।’ (সুরা ইসরা, আয়াত : ৩২)

গ. আল্লাহ সীমানা মানে : আরবি ‘হদ’-এর ব্যাবহারিক অর্থ ‘নিষিদ্ধ অঞ্চল’। আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য যেসব বিষয় নিষিদ্ধ করেছেন, হাদিসে সেসব বিষয় থেকে মানুষকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘এটা আল্লাহর সীমানা—তার নিকটবর্তীও হয়ো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

ঘ. যেসব বিষয়ে বিতর্ক কাম্য নয় : আলোচ্য হাদিসে সেসব বিষয়ে বিতর্ক পরিহার করতে বলা হয়েছে যে ব্যাপারে ইসলামী শরিয়ত কোনো বিধান নির্ধারণ করে দেয়নি। তিনি যদি এসব কাজের ব্যাপারে কোনো বিধান দিতেন তাহলে তাতে মানুষের জীবনে সংকীর্ণতা তৈরি হতো। মহানবী (সা.) দ্বিনের ব্যাপারে সংকীর্ণতা তৈরি হয়—এমন প্রশ্ন করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনবার বলেন, ‘মুতাআন্নিতুনদের জন্য ধ্বংস’। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৭০)

মুতাআন্নিতুন বলা হয় যারা কথা ও কাজে অর্থহীন অনুসন্ধান ও বাড়াবাড়ি করে এবং অনর্থক বিতর্কে লিপ্ত হয়। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ২/৮৪০-৪১)