খেয়ালখুশির অনুসরণে অসামান্য ক্ষতি

২৪ জুন, ২০২১

 

খেয়ালখুশির অনুসরণকারী সমাজ, সামাজিকতা, যুক্তি ও ধর্মীয় বিধানের তোয়াক্কা করে না। মন যা চায়, তা-ই করতে থাকা খেয়ালখুশির অনুসরণের নামান্তর। খেয়ালখুশির অনুসরণে ইহকালীন ও পরকালীন বহুবিধ ক্ষতি আছে। এটি মানুষের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছার অন্তরায়। পরকালে এর জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস। আর যে তার রবের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং নিজের নফসকে কামনা-বাসনা (খেয়ালখুশির অনুসরণ) থেকে বিরত রাখে, অবশ্যই জান্নাত হবে তার ঠিকানা।’ (সুরা নাজিআত, আয়াত : ৩৭-৪১)

খেয়ালখুশির অনুসারী কোরআনি উপদেশ থেকে উপকৃত হয় না : খেয়ালখুশি মানুষকে কোরআন বুঝতে এবং কোরআনের উপদেশ ও হুকুম-আহকাম থেকে উপকৃত হতে বাধা দেয়। প্রবৃত্তির পূজারিরা নবী করিম (সা.)-এর মুখ থেকে সরাসরি কোরআন শুনত, তা সত্ত্বেও তারা তা দ্বারা উপকৃত হতে পারেনি। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের মধ্যে এমন লোক আছে, যারা তোমার কথা শোনে। কিন্তু যখন তোমার কাছ থেকে বের হয়ে যায় তখন যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের কাছে গিয়ে বলে, এইমাত্র কী বলল লোকটি? মূলত এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এরাই নিজেদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করে।’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ১৬)

নিজের অজান্তে ঈমানশূন্য হওয়া : খেয়ালখুশির অনুসারী নিজের অজান্তে ঈমানশূন্য হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের ওই ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শোনাও, যাকে আমরা আমাদের নিদর্শন দিয়েছিলাম, তারপর সে তা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। পরে শয়তান তার পিছু নেয় এবং সে সম্পূর্ণ গোমরাহ লোকদের দলভুক্ত হয়ে পড়ে।

অথচ আমি চাইলে তাকে এ নিদর্শন দিয়ে উচ্চমর্যাদা দান করতে পারতাম। কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতিই আসক্ত হয়ে পড়ে এবং তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। তার উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের মতো, তুমি তার ওপর বোঝা চাপালে সে হাঁপাতে থাকে, আবার তুমি তাকে ছেড়ে দিলেও সে হাঁপাতে থাকে। এটা সেসব লোকের দৃষ্টান্ত যারা আমার আয়াতগুলো অস্বীকার করেছে। সুতরাং এসব কাহিনি তুমি বর্ণনা করো, হয়তো তারা চিন্তা-ভাবনা করবে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৭৫-১৭৬)

খেয়ালখুশির অনুসরণ বিনাশ সাধনকারী : আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস ধ্বংস সাধনকারী। (১) প্রবৃত্তি পূজারি হওয়া (২) লোভের দাস হওয়া এবং (৩) আত্ম-অহংকারী হওয়া। আর এটিই হলো সবচেয়ে মারাত্মক। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৭৪৫)

সংকীর্ণ জীবন ও মানুষের সঙ্গে শত্রুতা সৃষ্টি : মানুষের মধ্যে যে হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা ও অনিষ্টতার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, তার মূলে আছে খেয়ালখুশির অনুসরণ। সুতরাং যে তার খেয়ালখুশির বিরোধিতা করবে সে নিজেও শান্তিতে থাকবে এবং অন্যকেও স্বস্তিতে থাকতে দেবে। আর যে নিজের খেয়ালখুশির অনুসরণ করে সে অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন যাপন করে। লোকদের সে ঘৃণা করে, লোকেরাও তাকে ঘৃণা করে।

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মনগুলোকে লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখো। কেননা তা কৌতূহলী। এটি তোমাদের চূড়ান্ত মন্দের দিকে ঠেলে দেয়। নিশ্চয়ই ন্যায় ও সত্য ভারী এবং চোখের সামনে সুস্পষ্ট। আর বাতিল হালকা ও ব্যাধিযুক্ত। পাপ পরিহার করা পাপের পর তাওবা করা থেকে উত্তম। আর অনেক কুদৃষ্টি মনে কামনা-বাসনার বীজ বপন করে। আর এক মুহূর্তের কামনা-বাসনা অনেক সময় দীর্ঘকালীন দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (জাহিয, আল-বায়ান ওয়াত তাবয়িন, পৃষ্ঠা ৪৫৪)