২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
নেত্রকোনায় রেলসেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে কয়েকটি গ্রামের লোকজন। স্থানীয় মগড়া নদীতে আশপাশে সেতু না থাকায় বাধ্য হয়ে এলাকার লোকজন রেলসেতু দিয়েই পারাপার হচ্ছে প্রায় শত বছর ধরে। শুধু মানুষই না, ঠেলাগাড়িতে করে উৎপাদিত ধানসহ কৃষিপণ্য নিয়েও পারাপার হচ্ছেন স্থানীয়রা। এ কারণে কয়েকটি দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি জানে না স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী জানায়, ১৯২৫-১৯২৭ সালের দিকে নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ, শ্যামগঞ্জ-জারিয়া ঝাঞ্ঝাইল রেলপথ স্থাপন করা হয়। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও হাওর এক্সপ্রেসসহ ২টি আন্তঃনগর ও একটি কমিউটার ট্রেনসহ ৩টি লোকাল ট্রেন চলাচল করে এই রেলপথ দিয়ে। এরপর ১৯৪৮-৪৯ সালের দিকে জমি অধিগ্রহণ করে শ্যামগঞ্জ জংশন, জালশুকা,পূর্বধলা, জারিয়া ঝাঞ্ঝাইল, হিরণপুর, চল্লিশানগর, নেত্রকোনা বড় স্টেশন, নেত্রকোনা কোর্ট স্টেশন,বাংলা, ঠাকুরাকোনা, বারহাট্টা, অতিথপুর ও মোহনগঞ্জে স্টেশন স্থাপন করা হয়।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা এলাকায় মগড়া নদীর ওপর রেল সেতুটি স্থাপনের পর থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে কয়েকটি গ্রামের লোকজন। আশপাশে বিকল্প সেতু বা সড়কপথ না থাকায় রেললাইন স্থাপনের পর থেকে এভাবেই চলাচল করছে স্থানীয় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।
জেলা সদরের গোপালপুর, বালিজুরী, কার্লি, রাজেন্দ্রপুর, চল্লিশাসহ অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে এই পথ দিয়ে। পাশেই চল্লিশা বাজারে ইউনিয়ন পরিষদ, কলেজ, স্কুল, মাদরাসাসহ রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রেলসেতুটির পাশে একটি সেতুসহ সংযোগ সড়ক করে দুর্ভোগ কমানোর দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় বালিজুরী গ্রামের বাছির উদ্দিন, নূর ইসলাম ও সবুজ মিয়া বলেন, ‘চল্লিশা রেলসেতুতে কিছু দিন পরপরই ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যায়। এই এলাকায় আর কোনো বিকল্প পথ না থাকায় স্থানীয়রা বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বারবার আশ্বাস দিলেও এখানে একটি সেতু হচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে রেলসেতুর পাশে একটি সেতু করলে এই এলাকার মানুষের খুব সুবিধা হবে।
ভ্যানচালক সাবুল মিয়া বলেন, কয়েক মাইল ঘুরে ঠেলাগাড়ি নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট হয়। তাছাড়া যাওয়ার মতো কোনো রাস্তাও নেই। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধান-চাল ভরে রেল সেতু ও রেললাইন দিয়ে ঠেলাগাড়ি নিয়ে চলাচল করি। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। কয়েকজন মারাও গেছে। কিন্তু কোনো উপায় না থাকায় চল্লিশা বাজারে ধান নিয়ে যাচ্ছি।
গোপালপুর গ্রামের কুলছুমা আক্তার ও কার্লি গ্রামের ছালেমা খাতুন বলেন, ‘আমরা অসুস্থ হলেও এই রেল সেতু দিয়ে ঠেলাগাড়িতে করে হাসপাতালে যেতে হয়। গর্ভবর্তী নারীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না। দেশের এতো উন্নয়ন হলো, আমাদের একটা সেতু হলো না। আমরা খুব দুর্ভোগে আছি।’
স্থানীয় চল্লিশা হেনা ইসলাম কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার, মণি বর্মণ ও মুক্তা আক্তার বলে, স্কুলের সময় হয়ে গেলে ট্রেন চলে আসে। আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে ক্লাসের সময় চলে যায়। রেল সেতুতে উঠলে ট্রেন চলে আসে, তখন লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যেতে হয়। এতে হাত পায়ে ব্যথা পাই। আমরা খুব রিস্ক নিয়ে চলাচল করি।
নেত্রকোনা বড় স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রেল সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন মানুষসহ মালামাল নিয়ে ঠেলাগাড়ি পার হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টির খোঁজ নিয়ে জরুরি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হবে।