ভাতের মাড় স্বাস্থ্য ও রূপচর্চার জন্য অনেক উপকারী

২৫ মে, ২০২৪

আমরা সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি যে, ভাত রান্নার পর ভাতের মাড় ফেলে দেওয়া হয়। আর বেশিরভাগ মানুষই এটা করে থাকেন। কিন্তু এই মাড় স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

ভাতের মাড়ের মধ্যে নানাবিধ পুষ্টিগুণ রয়েছে‌। যা ভাতের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। এ ছাড়াও ভাতের মাড়ে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ত্বক টানটান করে ও দূর করে ত্বকের রোদে পোড়া দাগ। এতে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ত্বকে নিয়ে আসে উজ্জ্বলতা।


একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীর এবং ত্বককে চাঙ্গা রাখতে ভাতের মাড়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এমনকি একাধিক রোগের উপশমেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ভাতের মাড়।


এবার জেনে নিন স্বাস্থ্য ও  রূপচর্চায় ভাতের মাড়ের উপকারীতার কথা-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ভাতের মাড়। কারণ এর মধ্য়ে রয়েছে একাধিক পুষ্টিপদার্থ।

পেট খারাপের উপশম: পেট খারাপ কমাতে সাহায্য করে ভাতের মাড়। পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হলে ভাতের মারের মধ্যে এক চিমটে লবণ মিশিয়ে নিন। এর পর মাড়টি খেয়ে নিলে পেট খারাপ সেরে যাবে।

হজমে উপকারী: খাবার খাওয়ার পর অনেকে বদহজমে ভোগেন। খাবার হজম করাতে ওস্তাদ ভাতের ফ‌্যান। ফলে গলা ও বুক জ্বালার সমস্যাও কমে।

কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়: অনেকে ক্রনিক কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগেন। এই রোগের জেরে শরীরে আরও সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু ভাতের মাড় খেলে বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক থাকে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের থেকে মুক্তি মেলে সহজেই‌।

এনার্জির ঘাটতি দূর করে: শরীরচর্চার আগে এক গ্লাস ভাতের মাড় খেলে শরীরে ৮টি উপকারী অ্যামাইনো এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা এক্সারসাইজের সময় পেশির গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ভাতের মাড়ে উপস্থিত কার্বোহাড্রেট এনার্জির ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
গাছের সার: বাড়িতে গাছের ছোট্ট বাগানেও বেশ উপকারী মাড়। গাছের গোড়ায় সার হিসেবে দিতে পারেন মাড়। এতে গাছের দ্রুত বৃদ্ধি হবে।

চুলের যত্ন: চুলের উপকারেও ভাতের মাড় একইভাবে উপকারী। এটি শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনারের মতো ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে চুলের গোড়া মজবুত হয়। পাশাপাশি চুল পড়া কমে যায়।

ত্বকের যত্ন: ভাতের মাড় ত্বকের যত্ন নিতে কাজে লাগে। এই ফ্যান স্কিন টোনার হিসেবে দারুণ কাজ দেয়। এছাড়াও ফেস মাস্ক হিসেবেও মাড় কাজে লাগানো যায়। এতে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে। ত্বক ময়শ্চারাইজড থাকে।

টোনার হিসেবে: টোনার হিসেবে চমৎকার কাজ করে ভাতের মাড়। মাড়ে তুলার বল ডুবিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর হবে।

ক্লিনজার হিসেবে: ত্বকে জমে থাকা ময়লা প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার করে ভাতের মাড়। ভাত রান্না করার পর মাড় সংগ্রহ করে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল ও আধা কাপ পানি মেশান। কুসুম গরম থাকতে থাকতে মিশ্রণটি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে শুকনা তোয়ালে চেপে নিন ত্বকে।
ব্রণ দূর করতে: ১ টেবিল চামচ ভাতের মাড়ের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও ৫ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মেশান। দ্রবণে তুলার বল ভিজিয়ে ত্বকে লাগান। শুকিয়ে টানটান হয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ থেকে মুক্তি পাবেন।

বলিরেখা দূর করতে: ১ টেবিল চামচ ভাতের বাসি মাড়ের সঙ্গে ১ চিমটি হলুদ গুঁড়া, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও ১ টেবিল চামচ বেসন মেশান। পেস্টটি মুখ ও গলার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে বলিরেখা দূর হবে।

ত্বকের দাগ দূর করতে: ভাতের মাড় সংগ্রহ করে ৪৮ ঘণ্টা রেখে দিন। ১ কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ৫ মিনিট গরম করুন মিশ্রণটি। ঠাণ্ডা হলে ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের কালচে দাগ দূর হবে।

স্ক্রাব হিসেবে: ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ দই ও কয়েক ফোঁটা আমন্ড অয়েল মেশান। মিশ্রণে ভাতের মাড় মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্ট ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলুন। দূর হবে ত্বকে জমে থাকা মরা চামড়া।


রোদে পোড়া দাগ দূর করতে: ১ টেবিল চামচ আলুর রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ ভাতের মাড় মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে ম্যাসাজ করুন ১৫ মিনিট। ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ত্বক। দূর হবে ত্বকের রোদে পোড়া দাগ।