ইবরাহিম (আ.) যে স্থানে দাঁড়িয়ে কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন

২৭ মে, ২০২৪

মাকাম অর্থ অবস্থান বা দাঁড়ানোর স্থান। মাকামে ইবরাহিম অর্থ ইবরাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান। পবিত্র কাবা চত্বরের বিশেষ স্থানকে মাকামে ইবরাহিম বলা হয়, যা হাজরে আসওয়াদ থেকে সাফা-মারওয়ার দিকে ১৪ মিটার এবং জমজম কূপ থেকে ১০.৫ মিটার দূরে অবস্থিত।

মাকামে ইবরাহিমের পরিচয়

মাকামে ইবরাহিম মূলত সেই সম্মানিত পাথর, যার ওপর দাঁড়িয়ে তিনি কাবাঘর নির্মাণ করেন; বিশেষত যখন কাবাঘরের দেয়ালের ওপরের অংশ গাঁথতে হয়েছিল।

কাবাঘর নির্মাণ শেষ হলে তিনি এখানে দাঁড়িয়েই মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দিয়েছিলেন। (শিফাউল গিরাম : ১/২০৩)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) মাকামে ইবরাহিম সম্পর্কে ইমাম বুখারি (রহ.)-এর সূত্রে লেখেন, ‘ইবরাহিম ও ইসমাঈল (আ.) কাবাঘর নির্মাণ করছিলেন, তখন তাঁরা ঘরের তুলনায় কাবার ভিটি উঁচু করেন। ইসমাঈল (আ.) পাথর নিয়ে আসছিলেন এবং ইবরাহিম (আ.) তা দিয়ে নির্মাণ করছিলেন। যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল (আ.) ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য এই পাথরটি নিয়ে এলেন, যেন তিনি তাঁর ওপর দাঁড়িয়ে নির্মাণকাজ করতে পারেন।

তাঁরা উভয়ে দোয়া করেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ থেকে কবুল। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১২৭)

আল্লাহ তাঁদের দোয়াকে এমনভাবে কবুল করেন যে ইবরাহিম (আ.) যে পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাবাঘর নির্মাণ করেন তাকে অমরত্ব দান করেন। ফলে কিয়ামত পর্যন্ত মক্কায় আসা মুসল্লিরা তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমকে সামনে রেখে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে।

(তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/১৬১)

পদচিহ্ন কার

মাকামে ইবরাহিমের ওপর দুটি পায়ের ছাপ রয়েছে। ইমাম তাবারি (রহ.) বলেন, আল্লাহ মক্কা নগরীতে ইবরাহিম (আ.)-এর একাধিক স্মৃতি সংরক্ষণ করেছেন। তার একটি হলো সেই পাথর, যার ওপর ইবরাহিম (আ.) দাঁড়িয়ে ছিলেন। (তাফসিরে তাবারি : ৪/১১)

আল্লামা ইবনুল জাওজি (রহ.) লেখেন, ‘ইবরাহিম (আ.)-এর পায়ের চিহ্ন এখনো মাকামে সংরক্ষিত আছে। হেরেমের অধিবাসীরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।

এমন আবু তালিবের কবিতায়ও তার বিবরণ আছে।’ (ফাতহুল বারি : ১/১৬৯)
মাকামে ইবরাহিমের মর্যাদা

আল্লাহ মাকামে ইবরাহিমকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। যার কয়েকটি হলো—

১. আল্লাহর নিদর্শন : পবিত্র কোরআনে মাকামে ইবরাহিম আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন মাকামে ইবরাহিম। আর যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)

২. নামাজের স্থান : পবিত্র কোরআনে মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান বানানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১২৫)

এ বিষয়ে ওমর (রা.) বলেন, তিনটি বিষয়ে আমার মতামত আল্লাহর ওহির অনুরূপ হয়েছে। তা হলো আমি বলেছিলাম হে আল্লাহ‌র রাসুল! যদি আপনি মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান হিসেবে গ্রহণ করতেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করলেন, তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাজের জায়গারূপে গ্রহণ করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৪৮৩)

৩. তাওয়াফের পর নামাজ : তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহিমকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করা সুন্নত। ইবনে ওমর (রহ.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় আগমন করেন, তখন তিনি সাতবার তাওয়াফ করেন এবং মাকামে ইবরাহিমের পেছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৯৩০)

৪. হজের ঘোষণার স্থান : পবিত্র কাবাঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হলে আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দেন। যার বর্ণনা সুরা হজের ২৭ নং আয়াতে রয়েছে। নির্দেশ অনুসারে ইবরাহিম (আ.) হজের ঘোষণা দেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ইবরাহিম (আ.) পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, হে মানবজাতি! তোমাদের ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে। এই আহবান পুরুষের মেরুদণ্ড এবং নারীর জরায়ুতে বিদ্যমান সব ব্যক্তি শুনতে পায়। যারা মুমিন এবং যারা হজ করবে বলে আল্লাহর জ্ঞানে ছিল তারা ‘লাব্বাইক’ বলে সাড়া দেয়। (ফাতহুল বারি : ৬/৪০৬)