সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাবাকে বেঁধে রেখেছে সন্তানরা!

সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাবাকে বেঁধে রেখেছে সন্তানরা!

মজিবর ফকির

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ৭নং একডালা ইউনিয়নের শরিয়া গ্রামের মজিবর ফকিরের সম্পত্তি লিখে নিয়ে পাগল বানিয়ে পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে সন্তানরা। গ্রামে তিনি মজি ফকির হিসেবেই পরিচিত। চাহিদা অনুযায়ী খাবার, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা-যত্ন না পাওয়ায় মজিবর ফকির অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। খোলা কুঁড়ে ঘরের পাশে টয়লেট সংলগ্ন একটি চকিতে এক পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মজিবরকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শরিয়া গ্রামের মৃত-বয়তুল্লাহ ফকিরের ছেলে মজিবর ফকির। বয়স ৭৮ বছর। দুই বছর আগে স্বাভাবিক ছিলেন মজিবর। তখন ছেলেদের মাঝে কিছু সম্পত্তি লিখে দেন। এরপর কৌশলে বড় ছেলে আব্দুল খালেক বসতবাড়িসহ অবশিষ্ট সম্পত্তির অধিকাংশ সম্পত্তি লিখে নেয়ার কিছুদিন পর থেকে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। রাস্তায় বের হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করা, দোকানে গিয়ে বিভিন্ন খাবার জিনিসপত্র খাওয়াসহ নানা রকমের পাগলামী আচরণ শুরু করেন মজিবর। তার আচরণে অতিষ্ট হয়ে কোনো রকমের চিকিৎসা না করেই প্রায় এক বছর যাবৎ মজিবরের পায়ে দড়ি লাগিয়ে একটি নোংরা খোলা কুঁড়ে ঘরে বেঁধে রেখেছে তার সন্তানরা।

মজিবরের ছোট স্ত্রী ও প্রতিবেশীদের দাবি, সম্পত্তি লিখে নেয়া ও দীর্ঘদিন যাবৎ প্রয়োজন মাফিক খাবার, সুচিকিৎসা, সেবা-যত্ন না পাওয়ায় ও দড়িতে বেঁধে রাখার কারণে তিনি দিন দিন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন। বড় ছেলে তিন বেলা যে পরিমাণ খাবার দেয় তাতে মজিবরের ক্ষুধা পূরণ হয় না। এই কারণে যে মানুষই তার কাছে যায় মজিবর তার কাছে খাবার চায়। অভাবের সংসার হওয়ার কারণে মজিবরের ছোট স্ত্রীকে অধিকাংশ সময় মেয়েদের বাড়িতে থাকতে হয়। তখন মজিবরকে দেখার কেউ থাকে না। ওই কুড়ে ঘরেই তাকে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে থাকতে হয়। পেট ভরে খেতে না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বৃদ্ধ মজিবর ফকির।

স্থানীয়রা জানান, হয়তো সুচিকিৎসা, ভালো সেবা যত্ন, পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার ও মুক্ত পরিবেশ পেলে বৃদ্ধ মজিবর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। সন্তানরা মজিবরের সম্পত্তি লিখে নিয়ে এখন আর বাপকে ভালোভাবে দেখে না। বাপের আচরণের কারণে সন্তানরা তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। বিষয়টি খুবই অমানবিক।

অভিযুক্ত মজিবর ফকিরের বড় ছেলে আব্দুল খালেক বলেন, ‘স্বজ্ঞান থাকতেই বাপ আমাদেরকে সম্পত্তি দিয়েছেন। আমি বাপকে তিন বেলা খাবার দিই। তবে তার কোনো চিকিৎসা এখন পর্যন্ত করা হয়নি। অস্বাভাবিক আচরণ করার কারণে পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছি।’

মজিবরের দ্বিতীয় স্ত্রী ফরিদা বেগম বলেন, ‘বড় ছেলে বসতবাড়িসহ বেশি সম্পত্তি লিখে নেয়ার পর থেকে আমার স্বামীর মাথার সমস্যা দেখা দেয়। অভাবের সংসার তাই আমাকে মেয়ে-জামাইয়ের ওপর নির্ভর হয়ে থাকতে হয়। আমি যতটুকু পারি করার চেষ্টা করি। আর টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা করা হয়নি। চিকিৎসা, ভালো সেবা-যত্ন, পর্যাপ্ত খাবার পেলে হয়তো আমার স্বামী ভালোও হতে পারেন।’

রানীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আল মামুন বলেন, ‘ইতোপূর্বেও আমরা এরকম একাধিক ব্যক্তিকে সরকারি সহায়তা দিয়েছি। মজিবর ফকিরের খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত তার জন্য কিছু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও করার চেষ্টা করবো। সূত্র : ইউএনবি