লালমনিরহাট হত্যা : পাঁচ জন গ্রেপ্তার, শত শত আসামী

লালমনিরহাট হত্যা : পাঁচ জন গ্রেপ্তার, শত শত আসামী

নিহত শহীদুন নবী জুয়েল

লালমনিরহাটের পুলিশ বলছে, পাটগ্রামে শহীদুন নবী জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বিবিসিকে বলছেন, তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে পাটগ্রাম থানায়, এসব মামলায় শত শত মানুষকে আসামী করা হয়েছে। এদের মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামীও যেমন আছে, তেমনি নাম উল্লেখও করা হচ্ছে।

পুলিশ এখন ভিডিও ফুটেজ ধরে ধরে আসামীদের চিহ্নিত করছে। এরই মধ্যে বহু মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করা হলেও তাদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।জিজ্ঞাসাবাদ অব্যহত রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার শহীদুন নবী জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করার পর আগুনে পুড়িয়ে দেবার যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো দেখেই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানান এসপি আবিদা সুলতানা। মিজ সুলতানা বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে এর বেশি তথ্য প্রকাশ করছেন না তারা।

পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মহন্ত জানান, তিনটি মামলার মধ্যে নিহতের পরিবারের তরফ থেকে করা হয়েছে হত্যা মামলা। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের তরফ থেকে করা হয়েছে সরকারি স্থাপনা ভাংচুর মামলা। আর পুলিশ একটি মামলা করেছে সরকারি কাজে বাধা দেয়া এবং আরো কিছু ধারায়।এদিকে নিহত ব্যক্তির দগ্ধ লাশের যে অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর দেহাবশেষ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে আজ।

ঘটনার দিন কারা নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনেছিল সেটা খতিয়ে দেখতে এরিমধ্যে ঘটনাস্থল সিআইডি এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গেছেন স্থানীয় সাংবাদিকদের সূত্রে জানা গেছে।তারা ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক আলামত সংগ্রহের কাজ করছেন।

এদিকে দ্রুত ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর।এছাড়া বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে।এদিকে ঘটনার দুইদিন পেরিয়ে গেলেও পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহত শহীদুন্নবী জুয়েল তার এক বন্ধু পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে গেলে তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের কথা কাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে মুসুল্লিরা তাদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে মারধোর শুরু করে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন মসজিদটির খাদেম।

স্থানীয় প্রশাসন ওই দুইজনকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে নিয়ে রাখলেও বাইরে হাজার হাজার মানুষ জমে যায় এবং দরজা ভেঙ্গে, দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে পুনরায় মারধোর শুরু করে।

পুলিশ একজনকে উদ্ধার করতে পারলেও উত্তেজিত জনতা মি. জুয়েলকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে পরে তার মরদেহ মহাসড়ক পর্যন্ত টেনে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।মি. জুয়েলের সঙ্গে থাকা তার বন্ধু লালমনিরহাট হাসপাতালে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে।এদিকে নৃশংস এই ঘটার দ্রুত বিচার ও তদন্তের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয়রা। সূত্র: বিবিসি