কর্মকর্তাদের জন্য খাস কামরা কেন থাকে?

কর্মকর্তাদের জন্য খাস কামরা কেন থাকে?

ছবি সংগৃহিত।

বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি সেক্স টেপের জের ধরে একজন জেলা প্রশাসককে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার পর তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। ওই জেলা প্রশাসকের খাস কামরায় গোপন ক্যামেরায় একজন নারী ও পুরুষের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক বিশ্রাম করার জন্য কিছুদিন আগে ওই খাস কামরাটি তৈরি করিয়েছিলেন বলে স্থানীয় সংবাদদাতারা বলছেন।

খাস কামরা কী?

কর্মকর্তাদের দপ্তরের কক্ষের সঙ্গে লাগোয়া বিশ্রাম কক্ষকে খাস কামরা বলা হয়ে থাকে, যেখানে তিনি কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিয়ে থাকেন।সাধারণত অফিসের প্রধান ব্যক্তিরাই এ ধরণের কক্ষের সুবিধা পেয়ে থাকেন।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলী খান বলছেন, এ ব্যাপারে সরকারি কোন বিধান নেই বা সরকারিভাবে কিছু বলা নেই। তবে ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। 'অনেক সময় মূল অফিসে অনেক মানুষের সামনে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায় না। যেমন বিচারক অনেক সময় তার খাস কামরায় আইনজীবীদের ডেকে নিয়ে আলোচনা করেন। ফলে গোপনীয়তা রক্ষার জন্যেও এ ধরণের ব্যবস্থার দরকার হয়’-বলেন আকবর আলী খান।

মূল কক্ষের সঙ্গে খাস কামরা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসন, পরিষেবা, হাসপাতাল, পানি বা বিদ্যুৎ উন্নয়ন, থানাসহ সরকারি অনেক দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তাদের মূল কক্ষের সঙ্গে খাস কামরা থাকে। সাধারণত দিনের বেলায় কাজের ফাঁকে কর্মকর্তারা এসব কক্ষ ব্যবহার করে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা বলছেন, এর অনেক কামরা সরকারি অফিস সজ্জার খরচে করা হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব খাস কামরার আসবাব, এয়ারকন্ডিশন নানা জনের কাছ থেকে উপহার হিসাবে আসে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি সেক্স টেপের জের ধরে বাংলাদেশের একজন জেলা প্রশাসককে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক অফিসে সিসি ক্যামেরা থাকলেও এসব খাস কামরায় সেরকম ক্যামেরা বসানো হয় না। তবে যে ডিসি অফিসের ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে গোপনে ক্যামেরা বসানো হয়েছিল বলে অনেকে ধারণা করছেন। ওই ভিডিও প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, কেন একজন কর্মকর্তার জন্য এরকম বিশেষ সুবিধা থাকবে? যেখানে তিনি কাজের জন্য গেছেন, সেখানে তার জন্য আলাদা বিশ্রাম কক্ষ থাকবে কেন, এই প্রশ্নও উঠেছে।

তবে সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খান বলছেন, ‘যারা এসব কথা বলেন, তাদের আসলে সরকারি কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই।’ ‘সরকারি দপ্তরের প্রধান ব্যক্তিদের অনেক সময় দীর্ঘসময় ধরে বা কোনরকম কর্ম ঘণ্টা ছাড়াই কাজ করতে হয়। ডিসি, এসপির মতো কর্মকর্তাদের অনেক সময় দিনরাত কাজ করতে হতে পারে। ফলে তাদের বিশ্রামের জন্য এ ধরণের কক্ষ দরকার হয়।’ এছাড়া সরকারি কাজের গোপনীয়তার জন্যও এরকম কক্ষ দরকার বলে তিনি বলছেন।

যেসব দেশ থেকে এসেছে, সেসব দেশেই এই প্রথা নেই

তবে ঔপনিবেশিক আমলের এই প্রথা এখনো চালু থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জান বলছেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এসব খাস কামরার চল থাকলেও, সম্প্রতি যে ঘটনাটি আমরা দেখলাম, এরকম অপব্যবহারের দৃষ্টান্ত বিরল। যে উদ্দেশ্যে খাস কামরার বিষয়টি এসেছে, এখন যেন সেই মূল উদ্দেশ্য পাশ কাটিয়ে সেটার অপব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি বলছেন, ঔপনিবেশিক আমলের যেসব দেশের সংস্কৃতি থেকে এই খাস কামরার প্রথা এসেছে, সেই দেশে কিন্তু এখন এটা আর নেই। ফলে এখন আমাদেরও বিবেচনা করা উচিত যে , বর্তমান সময়ে আসলে এর আর কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা? বিশেষ করে সাম্প্রতিক ডিসির ঘটনার প্রেক্ষিতে সেটা আরো জোরালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত।'' টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, বাংলাদেশে প্রশাসনিক সব ক্ষেত্রেই জায়গার স্বল্পতার একটি বিষয় রয়েছে, সেই সঙ্গে কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধার আগে আধুনিক সেবার মান আগে নিশ্চিত করা বেশি জরুরি।