ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন চিরদিন

ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন চিরদিন

ফাইল ছবি

মুহাম্মাদুল্লাহ আরমান 

দ্বীনি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে এ ব্যাপারে বাধ্য করেনি যে, দ্বীনি শিক্ষাই গ্রহণ করতে হবে অন্য কোনো শিক্ষার প্রয়োজন নেই।

মুফাসসিরিনে কেরাম বলেছেন, হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনি শিক্ষা ফরজ হওয়ার যে কথা বলেছেন তার উদ্দেশ্য হল, প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ওই পরিমাণ ধর্মীয় শিক্ষা ফরজ যার মাধ্যমে সে ইসলাম বুঝতে পারে। অর্থাৎ ইমান, আকিদা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত ইত্যাদি যথাযথ আদায় করতে পারে। এটুকু জানা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজে আইন।

কিন্তু এর থেকে ইসলামের সব শাখা-প্রশাখা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জন করা, কোরআন-হাদিসকে তার ভাষায় বুঝা, মাসআলা চর্চা শরিয়তের মূলনীতি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা সব মুসলমানের ওপর ফরজে আইন নয়, কিছু মানুষ এ জিম্মাদারি আদায় করলে অন্যদের দায়িত্বও আদায় হয়ে যাবে। ইসলাম মানব প্রকৃতির ধর্ম।

মানব জীবনের প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে জ্ঞানার্জনের প্রতিই ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে। যেসব বিষয়ের জ্ঞান ছাড়া পৃথিবীতে বসবাস করা অসম্ভব সেসব বিষয়ে জানা মুসলমানদের ওপর ফরজে কিফায়া। এলাকায় ডাক্তার না থাকার করণে যদি ওই এলাকার কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে অচিকিৎসায় মারা যায় তাহলে এলাকার সবাই গুনাহগার হবে। এর দায় কেউ এড়াতে পারবে না। এ জন্য এলাকার কিছু মানুষকে অবশ্যই ডাক্তার হতে হবে। হ্যাঁ, ওই ডাক্তারকেও ইসলামের বিধানগুলোর জ্ঞান বাধ্যতামূলকভাবে শিখে আমল করুন যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে লাগবে। এসব আপনাকে গুনাহ থেকে বিরত রাখবে।

ব্যস, আপানি আলেম, মুফতি, মুহাদ্দিস ও পীর সাহেব হয়েছেন কিনা সে প্রশ্ন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন করবেন না। কিন্তু যদি আপনি ডাক্তারি বিদ্যাসহ যে কোনো আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করার সময় এবং তা কর্মজীবনে প্রয়োগ করার সময় আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করেন তবে আল্লাহর শাস্তি অবধারিত।- (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন ৪/৪৮৯; ফাতাওয়া শামী ১/৪২ করাচি; ফাতাওয়া উসমানী ১/১৯২; কিফায়াতুল মুফতি ২/৪৪; কিতাবুন নাওয়াযেল ১/২৩০-২৩১)।

ইসলাম আধুনিক শিক্ষার বিরোধিতা করে না, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজন হলে তা শিখতে উৎসাহিত করেছে। তাই ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষাকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর কোনো যুক্তি নেই। একটা অন্যটার পরিপূরক। কোনো আধুনিক শিক্ষিতের জন্য শোভনীয়ন নয় কোনো আলেমের সমালোচনা করা, ধর্মীয় শিক্ষাকে ছোট করে দেখা। তেমনি কোনো আলেমের জন্যও উচিত নয় আধুনিক শিক্ষার বিরোধিতা করা। এটা কোরআনের শিক্ষা নয়। ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করা জরুরি। দুই ধারার শিক্ষিত মানুষগুলো যেন পরস্পরের গুরুত্ব বোঝেন।

ধর্মীয় শিক্ষার শ্রেষ্ঠত্ব : আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টিগতভাবে জাগতিক বিষয়ের প্রতি মোহ ও কামনা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। ফলে দুনিয়ার কোনো কাজ করার কথা বলে দিতে হয় না। জাগতিক চাহিদাই তাকে দুনিয়ার কাজ করতে ও শিখতে আগ্রহী করে। তাই দুনিয়ার নগদ চাকচিক্যের প্রতিই মানুষ লালায়িত। চোখের সামনে দেখা লাভের প্রতিই ঝুঁকে পড়ে। বিপরীতে আখেরাত, দ্বীনি ইলম ও পরকালের পুরস্কার ইত্যাদি বাকি হওয়ায় অল্প মানুষই এগুলোর প্রতি খেয়াল করে আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল এ সবের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য কোরআন ও হাদিসে বারবার এগুলোর আলোচনা করেছেন।

গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। তাই তো দুনিয়ার এত চাকচিক্যকে পেছনে ফেলে যে মানুষ ধর্মীয় শিক্ষার ধারক-বাহক হন আল্লাহর কাছে তারা সম্মানিত। আল্লাহ তাদের মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল তাদের আম্বিয়ায়ে কেরামের উত্তরাধিকার বলেছেন। ফেরেশতারা তাদের চলার পথে ডানা বিছিয়ে রাখেন। গর্তে বসে পিঁপিলিকা তাদের জন্য দোয়া করে। পানির মাছ তাদের কল্যাণ কামনা করে। এমন মর্যাদা ও সৌভাগ্যের ভাগিদার তো সব মুসলমানেরই হওয়া উচিত। এই শ্রেণির মানুষগুলোকে হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা করা উচিত।

ভুলে গেলে চলবে না, এ দুনিয়ায় যারা আলিশান আট্টালিকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন, তাদের সেই মজবুত ও শক্ত পিলারগুলোর ভিত ধরে রেখেছেন তালি লাগানো জামা গায়ে দেয়া ইলমের ধারক-বাহক ওই দুর্বল মুমিন মানুষগুলো। কারণ হাদিসের ঘোষণানুযায়ী, যদি এ মানুষগুলো আল্লাহকে ডেকে ডেকে দিনযাপন না করতেন, মানুষকে আল্লাহর দিকে না ডাকতেন তাহলে দুনিয়া কবে ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজন থাকলেও ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন চিরদিন।

লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস- জামিয়াতুল মানহাল আল-কওমিয়া, উত্তরা, ঢাকা