গৌরীপুরে দুদকের অভিযান, সোলার প্যানেল প্রকল্পে লুটপাটের সত্যতা মিলল

গৌরীপুরে দুদকের অভিযান, সোলার প্যানেল প্রকল্পে লুটপাটের সত্যতা মিলল

সংগ্রহীত ছবি

২০১৭ সালের ১৪ মে দেওয়া পরিপত্রে কাবিখা ও টিআর প্রকল্পের বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য বা নগদ টাকার অর্ধেক বরাদ্দ দিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপন ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত হয়। ওই পরিপত্রে দেশের যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ-সুবিধা নেই বা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন, সেসব এলাকায় সোলার সিস্টেম স্থাপন করতে বলা হয়েছিল। আর এসব সোলার প্যানেল বসানোর কথা ছিল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, এতিমখানা, উপাসনালয়, হাট-বাজার, ইউনিয়ন পরিষদসহ জনসমাগম এরিয়াতে।

অথচ এ প্রকল্পের নিয়ম ভেঙে বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধির বাসাবাড়ি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয় সোলার প্যানেল আর এতে গচ্ছা যায় সরকারের ৩ কোটি ৯০ লাখ ২৪ হাজার ৫১৬ টাকা।

এ নিয়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশন ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে অভিযানে নামে। এতে নেতৃত্ব দেন টিম লিডার সহকারী পরিচালক রাজু মো. সারওয়ার হোসেন।

তিনি জানান, এ উপজেলার ৩০০ সোলার প্যানেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব সোলার প্যানেল প্রকল্পের বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

অধিকাংশ সোলার প্যানেল নষ্ট, যেভাবে স্থাপন করার কথা ছিল সেভাবে স্থাপন করা হয়নি। সাধারণ মানুষ এ প্রকল্প থেকে সেবা বঞ্চিত হয়েছেন। যতগুলো প্রকল্প দেখেছি প্রত্যেকটি প্রকল্পে অনিয়ম-দুনীতির সত্যতা পেয়েছেন।

দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের টিম লিডার সহকারী পরিচালক রাজু মো. সারওয়ার হোসেন আরো বলেন, ‘এক ভবনের ছাদে ১২টি সোলার প্যানেল।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি অফিসে সোলার প্যানেল খুঁজেও পাওয়া যায়নি। গৌরীপুর কলতাপাড়া সড়কে দুই প্রকল্পের ৪০টি সোলার প্যানেলের মধ্যে খোঁজ মিলেছে ৩২টি। ইউএনও বাসভবন, উপজেলা পরিষদ, অফিসারদের খেলাঘরসহ বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। যে সকল মানুষ বিত্তবান তাদেরকে এসব সোলার প্যানেল দেওয়া হয়েছে। 

প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন সেভাবে প্রকল্পের কাজ করা হয়নি।

তিনি জানান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের কার্যালয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। দীর্ঘসময় যোগাযোগ করার পরেও এ অফিসের কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী আসে নাই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এদিকে জানা যায়, প্রত্যেকটি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজার মূল্যের চেয়ে ৪ গুণ থেকে ১০ গুণ বেশি। ফলে এ সিস্টেমে ময়মনসিংহের গৌরীপুর আসনের তৎকালীন এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদ ও তার ছেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তানজির আহমেদ রাজিবের নেতৃত্বে সোলার প্রকল্পে চলে হরিলুট। ২৯০টি প্রকল্পে নামে মাত্র কাজ করে লুটে নেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ২৪ হাজার ৫১৬ টাকা। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সিংহভাগ সোলার প্যানেল বিকল হয়ে পড়েছে। উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজারে দেওয়া সবকটি সোলার প্যানেল স্থাপনের মাত্র ৫/৬ মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও ডৌহাখলা বাজার, কলতাপাড়া সড়ক, পাছারবাজার ও শ্যামগঞ্জ সড়কে স্থাপিত ১১টি স্ট্রীট লাইট দীর্ঘদিন যাবৎ অচল হয়ে পড়ে আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলাল উদ্দিন জানান, এ ঘটনা তো দীর্ঘ দিন আগের। তাছাড়া এর মধ্যে অনেক পিআইও বদলি হয়েছে। এখন আমাকে কিছু বলতে হলে ফাইল দেখে বলতে হবে। দুদকের অভিযানের সময় আপনি ছিলেন না এমন অভিযোগ দুদকের টিমের এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ইউএনও স্যারকে বলে আমি ফিল্ডে গেছিলাম।