সৌদি পুলিশের গুলিতে ভারতীয় শ্রমিক নিহত
ফাইল ছবি
সৌদি আরবে পুলিশের গুলিতে এক ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর সৌদি পুলিশ এবং অবৈধ মদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এক চক্রের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের গিরিডিহ জেলার ডুমরি ব্লকের মাধগোপালি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দুধপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিজয় কুমার মাহাতো (২৬) কাজের সূত্রে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। তিনি সৌদি আরবের হুন্ডাই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।
কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে একটি গ্যাংয়ের গুলি বিনিময় চলছিল। আর সেই সংঘর্ষের মধ্যেই ভুলবশত ঢুকে পড়েন বিজয়। এরপরেই পুলিশের একটি গুলি দুর্ঘটনাক্রমে বিজয়ের শরীরে লাগে। এরপরেই গুরুতর আহত অবস্থায় বিজয়কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
ভারতের শ্রম বিভাগের অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টিম লিডার শিখা লাকরা বলেন, ‘তথ্য পাওয়ার পর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে রিয়াদে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং বিজয়ের মরদেহ ঝাড়খণ্ডে তার জন্মস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য জেদ্দা পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।’
ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে কাজ করা একজন সমাজকর্মী সিকান্দার আলী বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, বিজয় কুমার মাহাতো নামে ওই যুবক গত নয় মাস ধরে হুন্ডাই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে টাওয়ার লাইন ফিটার হিসেবে কাজ করছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বিজয় গত ১৬ অক্টোবর তার স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে জানায়, সে ক্রসফায়ারে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়। দেবী তার শ্বশুরবাড়ির লোকদের জানিয়েছিলেন, তারা ধারণা করেছিলেন যে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ২৪ অক্টোবর কোম্পানি তাদের জানায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে বিজয়।’
এদিকে নিহতের শ্যালক রাম প্রসাদ মাহাতো ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেসতে বলেন, ‘মৃত্যুর আগে বিজয় নিজের স্ত্রীকে খোর্থা ভাষায় একটি ভয়েস নোট পাঠিয়েছিলেন। যেখানে তিনি বলেছিলেন পুলিশ অন্য কাউকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল, কিন্তু ভুলবশত তিনি গুলিবিদ্ধ হন।’
তিনি আরও জানান, দুধপানিয়া গ্রামে বিজয়ের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে। বিজয়ের পাঁচ ও তিন বছরের দুই শিশু পুত্র রয়েছে, তার বাবা-মাও জীবিত আছেন। বর্তমানে বিজয়ের মরদেহ ভারতে ফেরার অপেক্ষা করছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
অন্যদিকে, ঘটনাটি জানার পরেই ডুমরির বিধায়ক জয়রাম কুমার মাহাতো ভারতীয় দূতাবাস, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত, ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল এবং গিরিডির ডেপুটি কমিশনারকে চিঠি লিখে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন। তিনি বিজয়ের মরদেহ অবিলম্বে ভারতে ফিরিয়ে আনার এবং পরিবারকে আইনি ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্যও আবেদন করেন।
সূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস