মোদির সফর : বাংলাদেশের জন্য নতুন কোনো সুখবর আছে?

মোদির সফর : বাংলাদেশের জন্য নতুন কোনো সুখবর আছে?

ছবি : সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন এক সময়ে ঢাকায় আসছেন, যখন ভারতের সাথে সম্পর্কে হতাশা বেড়েছে বাংলাদেশে। ভারতে নাগরিকত্ব আইন ও মুসলমিদের নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার তথা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনীতি অনেক সময় বাংলাদেশকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ট্রানজিট সুবিধাসহ ভারতের নানা চাহিদা পূরণ করার পরেও বাংলাদেশ কী পেয়েছে- সেই প্রশ্ন আছে। এমন নানা প্রশ্নের মধ্যে নরেন্দ্র মোদি দু’দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও মুজিব জন্মশতবর্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তার এ সফর।

এর আগে গত ৯ মার্চ সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ওপর ‘মৈত্রী’ সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। সেতুটি সরাসরি যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলো। ভারতের ওই রাজ্যগুলো সেতুটি দিয়ে সহজে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আনা-নেয়া করতে পারবে। পাঁচ বছর আগেই ভারতের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার বা ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু ভারতের কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে নানা আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।

‘ভারত সবই পেয়েছে’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত তাদের চাহিদার সবই পেয়েছে। কিন্তু ওই তুলনায় বাংলাদেশের প্রাপ্তি না থাকায় এখানে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারতের কিছু উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশ নিয়ে। উত্তর পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী কিছু গ্রুপ যে কার্যকলাপ চালাচ্ছিল, তা ছাড়া দেশটির ট্রানজিটের ব্যাপার ছিল। এই সমস্যাগুলোতে বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে ভারতকে সহযোগিতা করেছে। এসব ব্যাপারে ভারতের চাওয়ার কিছু নাই।’‘ফেনীর নদীর ওপর ব্রিজ উদ্বোধন হলো। এতে কানেকটিভিটির আরেকটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আসলে ত্রিপুরার মানুষের জন্য এটা বিরাট সুবিধা দেবে অন্য রাজ্য বা বিদেশ থেকে পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে।’

সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেন, ‘এগুলো সবই হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের যে কয়েকটা চাওয়া ছিল, দৃশ্যত তাতে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।’সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য হচ্ছে, ‘তিস্তা নদীর পানি নিয়ে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে তা হবে। কারণ বেশ ক’বছর ধরে ভারতের একাধিক প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন। সই হওয়ার কাছাকাছিও গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত হয়নি। এটা এখন অনেকটাই কোল্ডস্টোরেজে চলে গেছে, যা হতাশার একটা কারণ। আরেকটা খুব ছোট্ট অ্যাকশন ভারত নিতে পারে, তা হলো সীমান্তে হত্যা বন্ধ করা। কিন্তু ভারতের নেতারা যে কারণেই হোক, এটার খুব প্রয়োজন মনে করছেন না।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে আসছেন। এবারো তিস্তা নদীর পানি বন্টন প্রশ্নে সমাধানের কোনো ইঙ্গিত নেই। এ সফরকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নে তার বক্তব্য ছিল, তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে ভারত সরকার আগের অবস্থানেই আছে। সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, ‘অপরাধ নয়, মৃত্যুও নয়।’

ফলে বাংলাদেশের মূল দু’টি ইস্যুতে সমাধানের ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা ইস্যু

অন্য দিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ যে সঙ্কটে পড়েছে তা সামলানোর ক্ষেত্রেও ভারতকে সেভাবে পাশে পায়নি বাংলাদেশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, বাংলাদেশের উদ্বেগগুলো ভারতের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। তার ভাষায়, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আমরা দেখি প্রতিটা রাষ্ট্রেরই ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট (জাতীয় স্বার্থ) প্রাধান্য পায়। কিন্তু ভারতের যে প্রতিবেশীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যেখানে বাংলাদেশ তাদের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রণে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে, সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত অন্তত নিরপেক্ষ ভূমিকা নেবে- সেটা আমরা আশা করেছিলাম। সেটাও কিন্তু করেনি।’

অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন আরো বলেছেন, ‘এ কারণে বাংলাদেশে ক্ষোভটা রয়ে গেছে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তা কিন্তু স্ট্রাটেজিক (কৌশলগত) নয়, যেটাকে আমরা বলি ট্যাকটিক্যাল। এর মানে হচ্ছে, যখন যেটা প্রয়োজন সেই প্রয়োজনের ভিত্তিতে সম্পর্কটা নির্ধারিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ভারত কিন্তু বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বিষয়টা দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করছে বলে মনে হচ্ছে না। কাজেই বাংলাদেশের উদ্বেগগুলোও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় না। এর আগেও আমি যেটা বলতাম যে ভারতের প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্কের নীতি ঠিকই আছে। কিন্তু তাদের এই নীতিতে বাংলাদেশের উদ্বেগগুলো অগ্রাধিকার একদমই করা হচ্ছে না। যেটা আমরা বারবার দেখছি।’

তিস্তা চুক্তিতে জট

২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে। তখন দু’দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি সই হলেও তিস্তা নিয়ে চুক্তি হয়নি। তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি সই না করার ক্ষেত্রে বরাবরই ভারতের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতাকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

তবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে দেশটির রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কেউই এর দায়িত্ব নিতে চায় না। তিস্তা ইস্যুসহ বাংলাদেশের চাহিদাগুলোর ক্ষেত্রে ভারত ‘সংকীর্ণ’ স্বার্থ দেখছে বলে তিনি মনে করেন। তার ভাষায়, ‘প্রতিটি দেশই তাদের জাতীয় স্বার্থ দেখবে। জাতীয় স্বার্থ দু’ভাবে দেখা যায়, একটা হলো সংকীর্ণভাবে। আরেকটা হলো আপনি অনেক কিছু দিয়েও নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারেন। আমার মনে হচ্ছে, ভারত সংকীর্ণ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।’

তৌহিদ হোসেন আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশ তো একটি রাজ্যের সাথে তথা পশ্চিমবঙ্গের সাথে চুক্তি সই করবে না। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভারত সরকার চুক্তি করলে আমি মনে করি না যে মমতা ব্যানার্জি প্রকৃত অর্থে খুব অসন্তুষ্ট হতেন। তিনি ভোটের কারণে দেখাতে চান না যে উনিই কাজটা করেছেন। একই কারণে বিজেপিও চায় না এর দায়িত্ব নিতে। তারা প্রত্যেকে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংকীর্ণ স্বার্থ দেখছে।’

সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো নিয়েও উদ্বেগ বাংলাদেশে

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরের বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। তখন ভারতে ছিল কংগ্রেস সরকার। সেই প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালে ঢাকা সফরে এসেছিলেন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। পরে ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে মোদি সরকারের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ট হওয়ার কথা বলা হয় দু’পক্ষ থেকেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১২ বছরে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বড় ফারাক রয়ে গেছে।

অন্য দিকে ভারতে নাগরিকত্ব আইন ও মুসলিমদের নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার বা বিজেপির রাজনীতিও বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক ইউনিভার্সিটির সিস্টেমের শিক্ষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন, ভারতের বিজেপি সরকারের আচরণের কারণে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে বা এর ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ‘আমরা যেটা দেখছি, ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো ব্যক্তিরাও প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখছেন যে অবৈধ অভিবাসী যারা আছে, তাদের ভারত থেকে বের করে দেয়া হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে নানান নেতিবাচক ও খুব আপত্তিকর বক্তব্যও তারা দিচ্ছেন।’

এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ আহমেদ বলেছেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য আগে শোনা যায়নি। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের আগে সাম্প্রদায়িক যে রাজনীতি ছিল, ওই রাজনীতিকে আবারো তারা সামনে এনেছে। সাম্প্রদায়িক রেটরিকগুলো আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। যেটা বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ একটি নতুন ডাইমেনশন।’

সঈদ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘এর প্রতিক্রিয়ায় আমরা দেখছি বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির একটা ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। যার ফলে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্টটা আরো ব্যাপকহারে বাড়ছে।’

নরেন্দ্র মোদির এবারের ঢাকা সফরে বাংলাদেশের মূল সমস্যাগুলো দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কতটা অগ্রাধিকার পাবে তা নিয়েও বিশ্লেষকরা অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে সরকার বলছে ভিন্ন কথা।

‘খুব বেশি মাথা ব্যথার কারণ নেই’

সীমান্তের তিন পাশে লাগোয়া ও বড় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সাথে সম্পর্ককে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হয়। দশকের পর দশক ধরে ঝুলে থাকা ছিটমহল বিনিময় হওয়া ও ৭৪-এর মুজিব ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করাকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে হতাশার প্রশ্নকে নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “দেখেন, উনি (নরেন্দ্র মোদি) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন। কোভিড-১৯-এর পরে ভারতের বাইরে এটাই ওনার প্রথম সফর। এ জন্য ‘উই আর ভেরি হ্যাপি’।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “আপনি যে হতাশার কথা বলছেন, এগুলো আমাদের ডিকশনারিতে নাই। কারণ ভারতের সাথে বড় বড় সমস্যাগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছি। ছোট খাটো কিছু সমস্যা থাকতে পারে। একটি যেমন আছে, সীমান্তে লোক মারা যায়। কিন্তু উভয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটা লোকেরও যেন মৃত্যু না হয়। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি আছে। কিন্তু নীতিগতভাব ‘উই হ্যাভ টেকেন দ্য ভাও’। সুতরাং আমাদের হতাশা নাই।”

তিস্তা নদীর পানি বন্টন ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, ‘তিস্তা চুক্তি সই হয়ে আছে। বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ তাদের কিছু সমস্যা আছে। আর চুক্তি হলে আমরা যেই পরিমাণ পানি পেতাম, এখনো তা পাচ্ছি। সুতরাং এনিয়ে আপনাদের মাথাব্যথা খুব বেশি হওয়ার কারণ নাই।’

‘ভারতের কাছে বাংলাদেশ এখন পার্টনারশিপের চেয়ে বেশি’

ভারতের বিশ্লেষকদেরও অনেকে দু’দেশের সম্পর্কের এখনকার পরিস্থিতিকে ইতিবাচক দিক থেকেই ব্যাখ্যা করছেন। দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন ভারতের বেসরকারি সংস্থা বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউণ্ডেশনের শ্রীরাধা দত্ত। তিনি মনে করেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের চাওয়া অগ্রাধিকার দেয়। তিনি বলেন, দু’দেশের সরকারের মধ্যে বা রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্কের ভিত্তিতে বহুমাত্রিক অনেক কাজ হচ্ছে। ‘কিন্তু আমি এটাও মানি, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে পানি। আর পানি চুক্তি হচ্ছে না বলে একটা হতাশা বলুন বা চিন্তা বলুন- তা আছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বারবারই বলেছেন যে এটা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের কারণে আটকে আছে। কিন্তু ভারতের কাছে বাংলাদেশ এখন পার্টনারশিপের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এ জন্য বাংলাদেশ কী চাইছে বা কী দরকার- তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। এনিয়ে কোনো দ্বিমত নেই,’ মন্তব্য শ্রীরাধা দত্তের।

কানেকটিভিটি ও ব্যবসা বাণিজ্য

এখন বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কানেকটিভিটির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখানেও ব্যবসা বাণিজ্যে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি আলোচনায় আসছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখনো অনেক চাওয়া ও পাওয়ার বিষয় রয়েছে। তার ভাষায়, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। এতে শুল্ক বা কোটামুক্ত বাণিজ্যসুবিধা পাওয়ার বিষয়টা চলে যাবে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের চাওয়া হচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরেও ভারত যেন সেই সুবিধাগুলো আরো কয়েকবছর অব্যাহত রাখে। বন্ধু দেশ হিসেবে ভারতের কাছে বাংলাদেশের এটা বড় চাওয়া হতে পারে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য হচ্ছে, দু’দেশ যোগাযোগের বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ায় তা বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যে অনেক লাভজনক হবে। এই ট্রেড ও যোগাযোগের ফলে আমাদের উন্নতি হচ্ছে। আমরা জিনিস বিক্রি যেমন করছি, তেমনি এখন তাদের কাছে বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করি। আগে দু’ শ’ মিলিয়ন হতো। এখন পাঁচগুণ বেড়েছে।

আব্দুল মোমেন বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, কানেকটিভিটির কারণে আমাদের সারাদেশের উন্নতি হবে। যারা হতাশা দেখে, তারা নানা কথা বলে। কিন্তু ‘থিংকস আর মুভিং’।” তিনি বিশ্বাস করেন, দু’দেশের ‘গভীর’ সম্পর্ক থাকায় বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান হবে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ার কারণগুলো বা বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের আগানো উচিত।

সূত্র : বিবিসি