বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও কর্ম থেকে রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও কর্ম থেকে রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ-

রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে দেশের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করার জন্য রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার (১৯ মার্চ) বিকেলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি রাজনীতিবিদদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিন এবং দেশের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করুন।’

বাংলাদেশের স্থপতির সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন মালদ্বীপের সফররত প্রেসিডেন্ট ইবরাহীম মোহম্মদ সোহিল এবং তার সহধর্মিনী ফাজনা আহমেদ।

দেশের স্বাধীনতার পর বিগত ৫০ বছরের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গুণগতভাবে রাজনীতিতে কতটা পরিবর্তন ঘটেছে আমাদের সে ব্যাপারে ভাবতে হবে। তবে আজকাল কিছু সুযোগসন্ধানী রাজনীতিকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করায় রাজনীতি বিপরীত দিকে যাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।’

কিন্তু রাজনীতি ও পেশা এক জিনিস নয় উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ আব্দুল হামিদ বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড় আর দলের চেয়ে দেশ বড়। রাজনীতি হচ্ছে দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করার স্থান।

তিনি এই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো এবং আজকের এই জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রশংসা করে বলেন, ‘এটা নতুন প্রজন্মের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে।’

রাষ্ট্রপতি পরামর্শ দেন, স্বাধীনতা ও জাতির পিতার অমূল্য স্মৃতি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে করে আগামী প্রজন্ম বাঙালি জাতির গৌরবময় ইতিহাস এবং পূর্বপুরুষদের অসীম সাহসিকতা ও দেশপ্রেম সম্পর্কে জানতে পারে।

ইতিহাস ও আমাদের মুক্তির মহান বীর ও স্থপতি বঙ্গবন্ধু তার স্কুলজীবন থেকেই মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। এমনকি তার ব্যক্তিগত ও পরিবারিক জীবনের আনন্দ বা খুশির চেয়েও জনসেবামূলক কাজের প্রতি তার আগ্রহ ছিল বেশি।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও রাজনৈতিকভাবে স্বনির্ভর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ অদম্য গতিতে উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে।

আব্দুল হামিদ বলেন, ‘যদি এই টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যহত থাকে, তবে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ্।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভিডিও বার্তা পাঠানোর জন্য রাষ্ট্রপতি তার বক্তৃতায়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, তাদের ভিডিওবার্তায় বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বের ব্যাপারে কথা বলেছেন, যা এই আয়োজনের আনন্দকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

তিনি আশা করেন, আগামী দিনগুলোতে এই উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ ও জোরদার হবে।

রাষ্ট্রপতি হামিদ চীন, জাপান ও কানাডার সরকার ও জনগণের অব্যহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

এ সময় রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক এই উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহীম মোহম্মদ সোলিহকে আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, ‘মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমঝোতার বন্ধন রয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

রাষ্ট্রপতি হামিদ আরো বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে এই সম্পর্ক অভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পাশাপাশি আমাদের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুগুলোর কারণে আরো জোরদার হয়েছে।’

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে তার মূল্যবান বক্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে এটা দু’দেশের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো জোরদার করবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মালদ্বীপের বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণের অব্যহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

এর আগে, বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সোলিহকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তারা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

সূত্র : বাসস