টি-২০ তেও সিরিজ হারল বাংলাদেশ

টি-২০ তেও সিরিজ হারল বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। - ছবি : সংগৃহীত

সৌম্য সরকারের ঝড়ো ইনিংসে কিছুটা আশার আলো দেখতে পেয়েছিল বাংলাদেশ। সাথে নাইম শেখ সঙ্গ দিচ্ছিলেন ভালই। কিন্তু টিম সাউথির স্লোয়ার বলে ধরা দেন সৌম্য। ৫২ করে বিদায় নেন সৌম্য। নাইম শেখের ৩৮ রান আর মাহমুদুল্লাহর ২১ রান। পরে আর কেউ আশার আলো দেখাতে পারে নি।

মঙ্গলবার নেপিয়ারে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। আগে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টি বাধায় ১৭.৫ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৩ রান করে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের জয়ের টার্গেট নির্ধারণ হয় ১৬ ওভারে ১৭০ রান। কিন্তু বাংলাদেশ করতে পারে ৭ উইকেটে ১৪২ রান। দারুণ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড।

১ এপ্রিল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি।

জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতে লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ রানে বেনেটের বলে ফিলিপসের হাতে ক্যাচ দেন ৫ বলে ৬ রান করা বাংলাদেশ ওপেনার। লিটনের বিদায়ের পর দলকে আশা জাগায় সৌম্য ও নাইমের ব্যাটিং। তবে পাওয়ার প্লেতে সেরকম রান আসেনি। ৫ ওভারে আসে ১ উইকেটে ৩৭ রান।

পাওয়ার প্লের পর স্বরূপে ফিরতে শুরু করেন সৌম্য। ৬ ওভারে রান আসে ৫৬। ২৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন সৌম্য সরকার। ৫২ টি-টোয়েন্টিতে এটি তার মাত্র তৃতীয় ফিফটি। ইনিংসটির এক পর্যায়ে অবশ্য দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সৌম্য। বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ফিফটি ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মোহাম্মদ আশরাফুলের। সৌম্যর রান ছিল ১৫ বলে ৪০। পরে তাকে কিছুটা আটকে রাখতে পারে কিউই বোলাররা।

ফিফটি করার পর বিদায় নেন সৌম্য। দলীয় রান তখন ৯৪। ১০.১ ওভারে সাউদির করা অফের বলে লংয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন মিলনের হাতে। ২৭ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫১ রান করে ফেরেন সৌম্য।

মোহাম্মদ নাঈমের তখন নতুন সঙ্গী অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই জুটি জমেনি। ১২ বলে ১৬ রান আসার পর জুটি বিচ্ছিন্ন করেন ফিলিপস। ৩৫ বলে ৩৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার নাঈম। তার ইনিংসে ছিল চারটি চার।

তিন উইকেট হারানোর পরও সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। সে জন্য পরের ব্যাটসম্যানদের জ্বলে উঠতে হতো ভালোমতো। কিন্তু সেই কাজটি করতে পারেনি তারা। দলীয় ১২৩ রানে বিদায় নেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১২ বলে ২১ রান করে মিলনের বলে বোল্ড অধিনায়ক। তার বাউন্ডারি চারটি।

যার উপর খুব ভরসা ছিল সেই আফিফ হোসেনও হাঁটলেন বিপরীত দিকে। একই ওভারে মিলনের বলে তিনিও বোল্ড। ৪ বলে তার রান ২। দলীয় ১২৬ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতন। এবার সাউদির বলে কনওয়ের গ্লাভসে আটকা মোহাম্মদ মিঠুন। হার্ড হিটারদের বিদায়ে বাংলাদেশের পরাজয় তখন থেকেই হয় ত্বরান্বিত।

ঝলসে উঠতে পারেননি সাইফউদ্দিনও (৬ বলে ৩ রান)। ৬ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন মাহেদী হাসান। ১৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪২ রান। বল হাতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে বল হাতে সাউদি, বেনেট, মিলনে দুটি, ফিলিপস একটি উইকেট লাভ করেন।

এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে রান বাড়াতে থাকেন কিউই ওপেনার গাপটিল ও মারকুটে ফিন অ্যালেন। শুরুতে অ্যালেনের ক্যাচ ড্রপ। ধরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাসকিনের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ৯৫ মিটার উঁচুতে বল পাঠান অ্যালেন। ঠাওর করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ফসকে যায় ক্যাচ।

জীবন পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি অ্যালেন। তাকে ফেরান তাসকিনই। ৩.৬ ওভারে স্কয়ার লেগে অ্যালেনের ক্যাচ তালুবন্দী করেন মোহাম্মদ নাঈম। ১০ বলে ১৭ রান করেন তিনি।

এরপর বিদায় নেন দুর্ধর্ষ মার্টিন গাপটিল। সাইফউদ্দিনের বলে শর্ট ফাইন লেগে দারুণ শট খেলেছিলেন গাপটিল। কিন্তু বাজপাখির মতো ঝাপিয়ে এক হাতে ক্যাচ নেন তাসকিন। অবিশ্বাস আর হতাশার দোলাচালে গাপটিল ফেরেন সাজঘরে ১৮ বলে ২১ রানে।
দলীয় ৫৫ রানে তৃতীয় সাফল্য পায় বাংলাদেশ শরিফুলের হাত ধরে। ডেভন কনওয়ের স্কয়ার লেগে ক্যাচ নেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৯ বলে ১৫ রানে ফেরেন কনওয়ে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম উইকেটের দেখা পান শরিফুল। নিউজিল্যান্ডের দলীয় রান তখন ৫৫। উইকেট নেই তিনটি।

উইল ইয়ং ও গ্লেন ফিলিপস এরপর দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। দলীয় ৯৪ রানের মাথায় দৃশ্যপটে মাহেদী হাসান। ফেরান ইয়ংকে।

ইয়াংকে বেরিয়ে আসতে দেখেই স্টাম্পের বাইরে একটু টেনে লেংথ বল করেন মাহেদী। ইয়াং পারেননি ব্যাটে-বলে করতে। স্টাম্পিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে বেগ পেতে হয়নি লিটন দাসকে। ১৭ বলে ১৪ করে আউট ইয়াং। ইয়াংকে হারানোর ওভারেই মাহেদীকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দলকে একশ পার করালেন ফিলিপস। ১২ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে ১০১।
১৩তম ওভারে হানা দেয় বৃষ্টি। ১২.২ ওভারে নিউজিল্যান্ডের রান তখন ৪ উইকেটে ১০২। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকে ২৫ মিনিট। এরপর আবার শুরু লড়াই।

দলীয় ১১১ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। চমক মাহেদী হাসানের। মাহেদীর ঝুলিয়ে দেয়া বলে একটু বেরিয়ে এসে মিড অফ বা কাভার দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি চাপম্যান। কিন্তু বল ছিল অনেক ধীরগতির, টাইমিং তাই হয়নি ঠিকমতো। সহজ ক্যাচ লাফ দিয়ে তালুবন্দী করেন মাহেদীই। ৮ বলে ৭ করে আউট চাপম্যান।

ফিলিপস এগিয়ে গেছেন নিজের মতো। মাহেদীর ফুল টসকে কাজে লাগিয়ে একটি ছক্কা, পরের বলে ২ রান নিয়ে ফিলিপস পৌঁছে যান ফিফটিতে। ২৭ বলে ছুঁলেন ফিফটি, টি-টোয়েন্টিতে তার দ্বিতীয় ফিফটি। সেঞ্চুরিও আছে একটি।

ম্যাচের শেষের দিকে আবার হানা দেয় বৃষ্টি। নিউজিল্যান্ডের রান তখন ৫ উইকেটে ১৭৩। ওভার ১৭.৫। এরপর আর বাকি ওভারগুলো হয়নি। ৩১ বলে ৫৮ রানে ফিলিপস ও ১৬ বলে ৩৪ রানে মিচেল থাকেন অপরাজিত। বাংলাদেশের হয়ে মাহেদী দুটি, নাসুম, সাইফউদ্দিন, তাসকিন ও শরিফুল নেন একটি করে উইকেট।