গৃহহীন মৃৎশিল্পী অনিতা রানী পাল

গৃহহীন মৃৎশিল্পী অনিতা রানী পাল

মাটি দিয়ে হাঁড়ি-পাতিল বানাচ্ছেন অনিতা রানী পাল- ছবি: সানোয়ার হোসাইন

অনেকেই আইস্যা ছবি নিয়া গেছে, ভিডিও কইরা গেছে। আমাগো দুঃখ-কষ্টের কতা শোইন্যা গেছে। আমাগো সরকারের কাছ থেকে ঘর আইন্যা দিবো বলে আশ্বাস দিয়া গেছে। সরকারের কাছে আমাগো কথা পৌছাইয়া দিবো বইল্যা গেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কিছুই পাইলাম না। কেউ আমাগো কোন সাহায্য সহযোগিতা করলোনা। এমনকি আগের করোনায় আমরা দুইবেলা না খাইয়া থাকলেও কেউ খবর নেয় নাই। 

এভাবেই নিজের দুঃখ ও কষ্টের কথাগুলো বললেন গৃহহীন মৃৎশিল্পী অনিতা রানী পাল।

অনিতা রানী পাল আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের নলাম পালপাড়া এলাকার গৃহহীন বাসিন্দা। তিনি দীলিপ পালের স্ত্রী। এই গৃহহীন দম্পতি ৭/৮ বছর যাবৎ নলাম পালপাড়া কামালের বাসায় ভাড়া রয়েছেন। উত্তরাধিকার সূত্রে কোন জায়গা জমি নেই এই দম্পতির।

গৃহহীন দীলিপ পাল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ গৃহহীন। আমার বাবাও ছিল গৃহহীন। তিনিও কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি সরকারের কাছ থেকে। আমরাও পাচ্ছিনা। মাটিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ শিল্পে টিকে থাকা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। বাবা মা অন্য কাজ শেখায় নি তাই পেশা ছাড়তে পারতেছিনা। তা না হলে অনেক আগেই এই পেশা ছেড়ে দিতাম বলেও জানান এই মৃৎশিল্পী। 

তিনি আরও বলেন, বাপ মার রেখে যাওয়া পেশায় আমরা টিকে থাকতে চাই। এক্ষেত্রে সরকারের সাহায্য খুবই প্রয়োজন। গত বছরের লক ডাউনে আমরা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছি। এ বছর এমন হলে আমাদের উপোষ থাকা আর ছাড়া কোন পথ থাকবেনা। শুধু আমরা না এই গ্রামে আরো ৪/৫ টি গৃহহীন পরিবার রয়েছে। তারাও আমার মত সকল প্রকার সরকারী সাহায্য থেকে বঞ্চিত বলেও জানান তিনি। 

বংশী নদীর কোল ঘিরে গড়ে উঠেছে নলাম পালপাড়া। এ পাড়ার রয়েছে অনেক প্রাচীন ইতিহাস। যুগ যুগ ধরে এখানেই বসবাস করে যাচ্ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী পাল বংশের লোকেরা। পালপাড়া মূলত মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির জন্য বিখ্যাত। পূর্বসরীদের রেখে যাওয়া পেশা শত দুঃখ কষ্টের পরেও অত্যন্ত যত্নে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রজন্ম। কেউবা প্রয়োজনের তাগিদে পেশা বদল করেছেন। তবুও মনে টান রয়েছে এই মৃৎশিল্পে। সঠিক সাহায্য সহযোগিতা পেলে এই শিল্প আবার ঘোরে দাড়াবে বলে প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের।