পাবনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের দুর্ভোগ, এক বছরেও চালু হয়নি আইসিইউ

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের দুর্ভোগ, এক বছরেও চালু হয়নি আইসিইউ

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের দুর্ভোগ, এক বছরেও চালু হয়নি আইসিইউ

কয়েকদিন থেকে অসুস্থ বোধ করছিলেন মোঃ আব্দুস সালাম। শুক্রবার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল কাম পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়া হয়, এই রোগীর চিকিৎসা এখানে সম্ভব না।

তার ছেলে ফজলে রাব্বী নিউজজোনবিডিকে বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ধরণের রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ আমাদের নেই। অবস্থার আরও অবনতি হলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। আপনারা অন্য কোথাও নিয়ে যান।’ আব্দুস সালাম বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন।

গত এক বছরে এই হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রত্যাশিত উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফজলে রাব্বী। কেবল ফজলে রাব্বী নন, করোনার নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে ভোগান্তি, শয্যা সংকট নিয়ে ক্ষুব্ধ করোনায় আক্রান্ত রোগীদের স্বজনরা।অসন্তোষ রয়েছে চিকিৎসকদের ভেতরেও। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এর কিছু দিন পরে ১৬ এপ্রিল পাবনার চাটমোহর উপজেলার গ্রামে প্রথম রোগী শনাক্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগ।

আক্রান্তের হার গত কয়েক সপ্তাহে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত এক সপ্তাহে প্রায় ১৯৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন দপ্তরের সূত্র মতে, শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৯৭ ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ১২ জন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কে এম আবু জাফর নিউজজোনবিডিকে  বলেন, ‘পাবনায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য এ পর্যন্ত অসংখ্যবার (প্রায় ১০ বার) চিঠি পাঠানো হয়েছে। বারবার চেষ্টা করেও পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ল্যাব সুবিধা না থাকায় পাবনার রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে পাশের জেলা সিরাজগঞ্জ থেকে পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’

গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতাল কাম পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১০০ শয্যা নিয়ে করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছিল। রোগীর সংখ্যা কমে আসায় পরবর্তীতে শয্যা সংখ্যা কমিয়ে ৫০ করা হয়।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আইয়ুব হোসেন নিউজজোনবিডিকে বলেন, ‘মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ বেশি থাকে। গত বছর করোনা রোগীর চাপ কম থাকায় করোনা ইউনিটের কিছু অংশ অন্য রোগীদের জন্য দেয়া হয়েছিল। তবে সব প্রস্তুতি নেয়া আছে, প্রয়োজন হলেই করোনা রোগীদের জন্য আবারও শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে।’

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সালেহ মোহাম্মদ আলী বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি নিউজজোনবিডিকে বলেন, ‘গত এক বছরে পাবনায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। রোগী শনাক্তকরণের জন্য পাবনায় কোনো পিসিআর ল্যাব নেই। এখনও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে, উপসর্গ দেখে রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে হয়।’

সূত্র জানায়, হাসপাতালে এখনো সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম নেই। চার শয্যার আইসিইউ ইউনিট এখনো চালু হয়নি। যে কারণে সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আইয়ুব হোসেন নিউজজোনবিডিকে বলেন, ‘গত বছর ডিসেম্বরে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ দেয়ার জন্য ঠিকাদার কাজ শুরু করেছিল। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় কাজ থেমে যায়। নতুন করে তাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে আগামী দু’মাসের মধ্যে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ পাওয়া যাবে। তখন আইসিইউ চালু করা সম্ভব হবে। আইসিইউ চালু করার জন্য ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে।’