পাবনায় মে দিবসে বিড়ি শ্রমিকদের মানববন্ধনে ন্যায্য দাবি পূরণের আহ্বান

পাবনায় মে দিবসে বিড়ি শ্রমিকদের মানববন্ধনে ন্যায্য দাবি পূরণের আহ্বান

ছবি : প্রতিনিধি

মহান মে দিবস উপলক্ষে পাবনা জেলা বিড়ি মজদুর ইউনিয়ন এর উদ্যোগে পাবনা টাউন হল ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (০১ মে) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বিড়ির উপর শুল্ক কমানো ও বিড়ি শ্রমিকদের মজুরী বাড়ানোর দাবিসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়ার উপর বক্তারা বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন আওয়ামীলীগের পাবনা সদর থানার সভাপতি ও পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোশারোফ হোসেন। 

প্রধান অতিথি বলেন, বর্তমান করোনার মধ্যে বিড়ি শ্রমিকসহ বিভিন্ন বিভাগের শ্রমিকরা চরম অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। যারা দিন আনে দিন খায়; তাদের অবস্থা আজ খুবই করুণ। তারা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ এই শ্রমিকরায় দেশের উন্নয়নের প্রথম শ্রেণীর দাবিদার। তাদের পক্ষে দেশ নেত্রী শেখ হাসিনা আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আমলে বিড়িতে ট্যাক্স ছিল না; তাই প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলেও বিড়িতে যাতে ট্যাক্স না থাকে এই প্রত্যাশা করছি। বিদেশি সিগারেট ও দেশিও বিড়ির শুল্ক বৃদ্ধির বৈষম্য দূর করার আহ্বান  জানিয়ে  তিনি আরও বলেন, বিড়ির উপর থেকে ট্যাক্স কমাতে হবে এবং তাদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আমরা সব সময় সাথে আছি। প্রধান অতিথি বিড়ি শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকদের ঐক্য হওয়ার আহ্বান জানান। 

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় পাবনা জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ফুরকান আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিড়ি শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। আমরা জানি বিড়ি শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকরা আজ কত বড় কষ্টের মধ্যে আছে। যারা শ্রমিকদের  নিয়ে  কাজ করে; তারাই জানে তাদের অবস্থা আজ কোন পর্যায়ে। তিনি বিড়ি শ্রমিকদের সকল ন্যায্য অধিকার পূরণে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। 

বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় যুগ্ম  সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা জেলা বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি হারিক হোসেন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অমাদের দাবি আদায়ে সরকারের প্রতি বার বার আহ্বান জানিয়ে আচ্ছি-বিড়ি শিল্পটিকে টিকিয়ে রেখে হাজার হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিকদের বাঁচান। কিন্তু রাজস্ব বোর্ডে ঘাপ্টিমারা কতিপয় আমলার কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাদের কারণে বিদেশি সিগারেটের উপর কর আরোপিত না করে দেশের হাজার হাজার শ্রমিক যে শিল্পের সাথে জড়িত বাঁচা মরা সেই বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করার লক্ষে বিড়ির উপর কর আরোপ করা হয়েছে।

এসময় অন্যান্য বক্তারা বলেন, বিড়ি শ্রমিকসহ সকল শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামকে বেগবান করতে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে। করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অসহায় শ্রমিক পরিবারের খোঁজ খবর রাখতে প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিত্তশালীসহ সকল মহলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান তারা। এই মুহুর্তে সরকারকে শ্রমিকদের পাশে থাকার জন্য অনুরোধ করেন বক্তারা। নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকেরাই এদেশের প্রাণশক্তি, শ্রমিকদের ঘামে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক ভিত। কিন্তু দেখা যায়, সকল সংকটের সময়ে শ্রমিকেরাই থাকে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত, যা অত্যন্ত দু:খজনক। মজলুম ও মজদুর অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে মহান মে দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ থাকতে হবে। মহাজন বা মালিকের কোনো ধরনের অন্যায় ও অনৈতিক কার্যক্রম মেনে নেওয়া হবে না। মজদুরদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি বারবার পরাজিত করেছে অন্যায়কে। ফলে আসুন সম্মিলিতভাবে শ্রমিক শ্রেণীর ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নে শামিল থাকি।

মানবন্ধনে উল্লেখ করা হয়-২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে বিড়ির উপর বৃদ্ধিকৃত ৪ টাকা মূল্য স্তর প্রত্যাহর, আরোপিত দশ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার, বিড়িতে শুল্ক কমিয়ে শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি, অবৈধ বিড়ির তৈরির লাইসেন্স বন্ধ, সিগারেট ও বিড়ির শুল্ক বৃদ্ধির বৈষম্য দূর অর্থাৎ বিড়িতে ৪ টাকা শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে অপরদিকে মধ্যম স্তরের সিগারেটে কোন শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়নি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ঘাপ্টিমারা কাতপয় আমলাদের বিড়ি শিল্প বন্ধের ষড়যন্ত্র থেকে বিরত থাকতে হবে। 

বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারিক হোসেনের সভাপতিত্বে ও  জেলা সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শামীম হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন  ও উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার সাহা, পাবনা বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের পাবনা জেলা সহসভাপতি আলম হোসেন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও পাবনা জেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামীম ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুলাল মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল শেখ, কোষাধ্যক্ষ  টোকন রায়, নারী খাতুন, আছিয়া খাতুন, আক্কাস ফকির, আলম শেখ, জনি প্রামাণিক প্রমুখ।