খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার 'আপাত' কোন উন্নতি বা অবনতি দেখা যাচ্ছে না।চিকিৎসার সাথে জড়িতরা তার শারীরিক অবস্থা 'স্থিতিশীল' উল্লেখ করেই বলছেন, "আসলে অবস্থাটা প্রেডিক্ট করা যাচ্ছে না"।পাশাপাশি মিসেস জিয়া করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ হয়েছেন এমন তথ্য এখনো দল বা চিকিৎসকদের তরফ থেকে আসেনি।

যদিও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ বুধবার দলীয় চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলছেন খালেদা জিয়া পোস্ট কোভিড জটিলতায় ভুগছেন।"পোস্ট কোভিড জটিলতা থাকে যা মাঝে মধ্যেই টার্ন নেয় বিভিন্ন দিকে। ওনার যে বয়স, বিভিন্ন রোগ আছে। এর আগে তিন বছর কারাগারে ছিলেন। এ অবস্থায় তার কিছু জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে মাঝে মধ্যেই"।

মিস্টার আলমগীর বলছেন, "সব ধরণের চিকিৎসা তাকে দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা আন্তরিকতা নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা বিদেশে নিয়ে আরও উন্নত চিকিৎসা দেয়া"।পরিবার থেকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আশা করেন যে মানবিক কারণে সরকার বিএনপি নেত্রীর বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।

প্রসঙ্গত, গত ১১ই এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সে সময় সিটি স্ক্যান রিপোর্টে তাঁর ফুসফুসে পাঁচ শতাংশ সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল।

এরপর গত ২৫শে এপ্রিল খালেদা জিয়ার দ্বিতীয়বারের মতো কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হলে সেখানেও তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল।পরে জটিলতা দেখা দেয়ায় গত ২৭শে এপ্রিল থেকে এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মিসেস জিয়া।যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো যে খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো, তবে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

তবে পরে ৩রা মে তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউতে নেয়া হয় এবং অক্সিজেন দিতে হচ্ছে বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন।সিসিইউতে খালেদা জিয়া স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছেন ও কথা বলছেন বলেও জানিয়েছিলেন তার চিকিৎসকরা।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিস বা আর্থরাইটিসসহ নানা রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখন ডায়াবেটিসের কারণেও তার অন্য চিকিৎসায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।তার চিকিৎসা দলের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকরা বলছেন গত কয়েকদিন ধরে মিসেস জিয়ার অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি বরং শ্বাসকষ্টের সাথে বুকে ব্যথার প্রবণতাও দেখা গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে উন্নতি চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার জন্য তার পরিবার সরকারের কাছে আবেদন করেছে।খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।

শামীম ইস্কান্দার বলেছেন, ডাক্তাররা তার বোন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেয়ার পর তারা সরকারের কাছে এই আবেদন করেছেন।পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এই আবেদনটিকে সরকার ইতিবাচকভাবেই দেখছে।এর আইনগত দিক পরীক্ষা করে দেখার জন্য আবেদনপত্রটি ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে যে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলো সরকার তাতে বলা হয়েছিলো মুক্তি পেয়ে মিসেস জিয়াকে বাসাতেই থাকতে হবে এবং এ সময় তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

দেশজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালের ২৫শে মার্চ ছয় মাসের জন্য নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছিলেন মিসেস জিয়া।এরপর প্রথমে সেপ্টেম্বরে ও পরে চলতি বছরের মার্চে আবারো ছয় মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলো আদালত, তারপর থেকে প্রথমে কারাগারে বিশেষ ব্যবস্থায় ও পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই নির্বাহী আদেশে বিশেষ শর্তে মুক্তির পর তিনি গুলশানের বাসায় উঠেন।শর্তগুলো ছিলো: এই সময়ে তাঁর ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

আগেও আবেদন করা হয়েছিল বিদেশ নেবার:

এর আগে গত বছরের মার্চে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিলো খালেদা জিয়ার পরিবার।তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম তখন বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন যে, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে এই চিঠিতে আমরা লিখেছি যে, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বিদেশে নিয়ে যেতে চাইছি। সেজন্য তাঁর মুক্তি প্রয়োজন। তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য মানবিক কারণে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হোক।"

তবে সেই চিঠিতে তখন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিলো বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।এখন বিএনপি নেতারা বলছেন ওই আবেদনের ভিত্তিতেই সরকার মুক্তির আদেশ সংশোধন করলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া সম্ভব হবে। 

সূত্র : বিবিসি