সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলায় সরকারের অবস্থান কী

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলায় সরকারের অবস্থান কী

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলায় সরকারের অবস্থান কী

বাংলাদেশে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেকের মাঝে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে।

তবে সরকারের মন্ত্রীদের অনেকে বলেছেন, যেহেতু রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে মামলা হয়েছে, ফলে বিষয়টা এখন আইনগতভাবেই ফয়সালা হওয়া উচিত।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে মনে করেন, সরকার এবং গণমাধ্যমের মধ্যে যাতে দূরত্ব সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা যেতে পারে।

গত ১৮ই মে ঢাকায় সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার কক্ষে রোজিনা ইসলামকে পাঁচ ঘন্টার বেশি সময় আটকে রেখে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর তথ্য চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল।

ঢাকায় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি কক্ষে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখা এবং তারপর শত বছরের পুরনো আইনে নথি চুরির অভিযোগে মামলা দেয়ার ঘটনা নিয়ে দেশে এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে একটা অস্বস্তির প্রকাশ ছিল বলা যায়।

তার বক্তব্য ছিল, গুটিকয়েক লোকের কারণে সরকারের বদনাম হচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।

সিনিয়র মন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ঘটনাটি তাদের জন্য অস্বস্তিকর। তবে যেহেতু মামলা হয়েছে, আইনগতভাবেই গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিক ন্যায় বিচার পাবেন বলে তিনি মনে করেন।

"একজন সাংবাদিক -তাকে জেলে যেতে হয়েছে, সেটাতো অস্বস্তিকর বটেই। অনেক সমালোচনাও হচ্ছে মিডিয়াতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। তারপরও সত্যটা বেরিয়ে আসুক," বলেন ড: রাজ্জাক।

তিনি আরও বলেছেন, "জেলে তাকে নেয়া হয়েছে একটা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে। অভিযোগটা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় ফাইল একজন সাংবাদিক নেয়ার চেষ্টা করেছে। সেটাতে মামলা হয়েছে। মামলা যাহোক হয়েছে। কিন্তু তার প্রতি যেন কোন হয়রানি না হয়, সে যেন সুবিচার পায় এবং আমি আশা করি অবশ্যই সে পাবে," মন্তব্য করেন ড: রাজ্জাক।

রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক নেতারা আইনমন্ত্রীসহ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে গত কয়েকদিনে যে কথাবার্তা বলেছেন, তাতে মন্ত্রীরা ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।

কিন্তু আদালতে জামিনের আবেদনে সরকারি আইনজীবীরা বিরোধিতা করেছেন।

সরকারি আইনজীবীর বিরোধিতার মুখে জামিনের জন্য অপেক্ষার সময় বেড়েছে।

রোববার জামিনের ব্যাপারে আদালতের আদেশ দেয়ার কথা রয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে একজন মন্ত্রী বিবিসির সাথে আলাপকালে বলেছেন, বিষয়টা তার কাছে আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে।

ফলে শেষপর্যন্ত সরকার কী অবস্থান নিচ্ছে এবং সরকারের কোন পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসছে- সেই প্রশ্নে নানা আলোচনা চলছে।

অন্যদিকে রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে একটি কক্ষে যখন আটকে রাখা হয়েছিল, তখন তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল বলে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন।

সাংবাদিকরা তাদের অভিযোগের আঙুল তুলেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

এই অভিযোগের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার সেই আমলাদেরই পক্ষ নিচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্নও সাংবাদিকদের অনেকে তুলেছেন।

গ্রেপ্তারের ঘটনার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।

একইসাথে সাংবাদিক নেতারা সমাধানের ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনাও করছেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন কয়েকজন সাংবাদিক নেতাকে নিয়ে ঘটনার প্রথম দিনেই কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছিলেন।

তিনি বলেছেন, সে সময়ই স্বাস্থ্যমন্ত্রী আইনগতভাবেই এগুনোর অবস্থান তুলে ধরেছিলেন।

"যখন ঘটনাটি ঘটে, সেদিনই সারাদিন কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তারপর আইন মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আমরা দেখাও করেছি। তখন মনে হয়েছে যে, তারা পজেটিভ। সাংবাদিকদের সাথে কোন রকম দূরত্ব তৈরি হোক, সেটা তারা চান না," বলছেন ফরিদা ইয়াসমিন।

তিনি আরও বলেছেন, "তাদের টোনটা যদি বলেন, আমার মনে হয়, তারা এটা বলতে চেয়েছেন যে, অপরাধ করেনি-তা তদন্তে প্রমাণ হলেতো হয়েই গেলো। তবে যতদিন জামিন হবে না, ততদিন তার প্রতি সদয় আচরণ করা হবে।"

তবে এসব আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে এগুনোর পক্ষে।

সাংবাদিক ফরিদা ইয়াসমিন বলেছেন, "রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার দিনই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে কথা হয়। মন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন যে ঐ সাংবাদিক ফাইল শরীরের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল। সেটা রাষ্ট্রের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফাইল। সেটা ঠিক হয়নি । একথা তিনি বার বার এবং বেশ কঠোরভাবেই বলেছেন।"

এখন অবশ্য মন্ত্রীদের যারা কথা বলছেন, তারা এটা স্পষ্ট করে বলছেন যে, যেহেতু মামলা হয়েছে, ফলে আইনগতভাবেই সমাধান খুঁজতে হবে।

সেখানে সরকার মামলা নিয়ে এগুবে, এমন ধারণাই পাওয়া যাচ্ছে এখনও পর্যন্ত।

তবে আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের অনেকে সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তাদের অস্বস্তির কথা প্রকাশ করেছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত বলেই তারা মনে করছেন।

"আমরা মনে করি যে, সরকার এবং গণমাধ্যম বা সাংবাদিকরা একে অপরের পরিপূরক। সেই জায়গায় সম্পর্ক নষ্ট হওয়াটা কারও জন্যই শুভকর নয়," মি: হানিফ বলেন।

তিনি আরও বলেছেন, "আমরা যেটা মনে করি, যে ঘটনাই ঘটেছে, সেটাকে দ্রুত সকলে বসে সুন্দর একটা সমাধান করে নেয়াটাই ভাল।"

একইসাথে আওয়ামী লীগের এই নেতা মনে করেন, "সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা হলে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। সেটাতে সবাই স্বস্তি পাবে।"

এদিকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি