করোনা রোগীদের শিল্পক্ষেত্রের অক্সিজেন দেয়াতেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ!

করোনা রোগীদের শিল্পক্ষেত্রের অক্সিজেন দেয়াতেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ!

করোনা রোগীদের শিল্পক্ষেত্রের অক্সিজেন দেয়াতেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ!

ভারতে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তারের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্টেরয়েড নয়, মুমূর্ষু করোনা রোগীর জন্য ব্যবহৃত ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের কারণে তাদের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বা মিউকরমাইকোসিস ছড়িয়ে পড়ছে কি না, প্রশ্ন তুললেন এমসের চিকিৎসক উমা কুমার।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের পিছনে মূলত করোনা আক্রান্তকে অতিমাত্রায় স্টেরয়েড ব্যবহারকে এত দিন দুষে এসেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করলেই শরীরে ব্লাড সুগার লাফ দিয়ে বাড়তে শুরু করে। যা পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণকে ডেকে আনার পথ করে দেয়। কিন্তু আজ নতুন জল্পনা উস্কে দিয়েছেন এমসের রিউমেটোলজি বা বাতসংক্রান্ত বিভাগের চিকিৎসক উমা কুমার। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়ায় গত এক মাসে শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অক্সিজেনকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। উমার প্রশ্ন, শিল্প ক্ষেত্রের অক্সিজেন মানবদেহে ব্যবহার করাতে এ ভাবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছড়িয়ে পড়ছে না তো?

শনিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ও আইসিএমআর সংস্থার উদ্দেশে উমার টুইট, 'লক্ষাধিক বাতের রোগীর উপরে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে স্টেরয়েড ব্যবহার করেছি। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের মতো মিউকরমাইকোসিসের রোগী দেখিনি। কোভিডের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়াতেই কি মিউকরমাইকোসিস-কে ডেকে আনছে? নাকি হঠাৎ করে চাহিদা মেটাতে শিল্পক্ষেত্রের অক্সিজেন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করার ফলে মিউকরমাইকোসিস ছড়াচ্ছে?'

শুধু দিল্লিতেই ১৯৭ জনের দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মুম্বই থেকে ওষুধ পৌঁছনোর আগে আসামে মৃত্যুও হয়েছে মিউকরমাইকোসিস। দিল্লিকে ২০০০ ভায়াল অ্যামফোটেরিসি-বি ইঞ্জেকশন জোগানোর আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার দেশবাসীকে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের নতুন চ্যালেঞ্জ’ সম্পর্কে সতর্ক করে এই বিপদ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। কিন্তু চিকিৎসক উমা কুমারের টুইট তার সরকারের অক্সিজেন নীতিকে গুরুতর প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। কারণ, মোদী সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অক্সিজেন করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে মাসখানেক ধরে। বিরোধী শিবিরের মতে, সত্যিই যদি শিল্পক্ষেত্রের অক্সিজেনের কারণে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ হয়, তা হলে করোনাকালে আর এক অতিমারি ডেকে আনার জন্য দায়ী থাকবে মোদি সরকারের ব্যর্থ স্বাস্থ্য নীতি। উমা কুমারের মন্তব্যের কিছু ক্ষণের মধ্যেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রশ্নে মুখ খোলেন এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া।

তার মতে, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি বা সদ্য সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ জোর দিয়েছেন গুলেরিয়া। তার সুপারিশ, এক, রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। দুই, যাদের উপরে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত মাপতে হবে। তিন, করোনা চিকিৎসার কোন পর্যায়ে কত দিনের জন্য স্টেরয়েড দেয়া হচ্ছে, সে দিকেও বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে চিকিৎসকদের। গুলেরিয়ার দাবি, ২০০২ সালে সার্স অতিমারির সময়েও কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীর সন্ধান মেলায় গত কাল ওই রোগকে অতিমারি আইনের তালিকায় নথিভুক্ত করতে রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। এর ফলে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের কাছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কোনো রোগী এলে তাদের সম্পূর্ণ বিবরণ নথিভুক্ত করে রাজ্যের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাতে বাধ্য থাকবে। হঠাৎ বেড়ে যাওয়া চাহিদা সামাল দিতে যে পাঁচটি সংস্থা মিউকরমাইকোসিসের ওষুধ অ্যামফোটেরিসি-বি তৈরি করে, তারা উৎপাদন বাড়িয়েছে। নতুন পাঁচটি সংস্থাকে এই ওষুধ তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন সংস্থাগুলো জুলাই থেকে মাসে ১.১১ লাখ ভায়াল তৈরি করবে। এ ছাড়া মে মাসে ৩.৬৩ লাখ ও জুন মাসে ৩.১৫ লাখ ভায়াল বিদেশ থেকে আনানো হবে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা