মিরাজের বলে দিশেহারা লঙ্কান ব্যাটিং

মিরাজের বলে দিশেহারা লঙ্কান ব্যাটিং

মিরাজের বলে দিশেহারা লঙ্কান ব্যাটিং- সংগৃহীত ছবি

শ্রীলঙ্কার সামনে ২৫৮ রানের লক্ষ্য। উইকেটের বিবেচনায় বড় লক্ষ্যই বটে। কারণ, পুরোপুরি ব্যাটিং সহায়ক উইকেট নয় আজকের বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ম্যাচটিতে।

ইনিংসের ৫ম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৩০ রানের মাথায় ওপেনার দানুসকা গুনাথিলাকার উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৯ বলে ২১ রান করেন গুনাথিলাকা। এর পর ২২তম ওভারে বোলিংয়ে এসে সাজঘরে পাঠান কুশাল পেরেরাকে। পরের ওভারে আবার বোলিংয়ে এসে সাজঘরে পাঠান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে।

মিরাজ ওপেনিং জুটি ভাঙার পর দলীয় ৮ম ওভারেই অধিনায়ক তামিম ইকবাল বোলিংয়ে নিয়ে আসেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকে। বোলিংয়ে এসেই উইকেট উপহার দিলেন তিনি। ওভারের চতুর্থ বলেই পাথুম নিশাঙ্কাকে আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন মোস্তাফিজ।

এ রিপোর্ট লেখার সময় শ্রীলঙ্কার রান ২৪ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৯৮।

এর আগে তিন ফিফটিতে প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৬ উইকেটে ২৫৭ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। জিততে হলে লঙ্কানদের করতে হবে ২৫৮ রান।

রোববার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দশার।

বলের চেয়ে রান ছিল কম। চার উইকেট হারিয়েছিল ১০০ রানের আগে। ২২.৬ ওভারে বাংলাদেশের দলীয় রান তখন ৯৯। এমন অবস্থায় দলকে টেনে তুলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। দু’জনের ফিফটিতে বাংলাদেশ পায় সম্মানজনক স্কোর।

দিনের শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারে চামিরার বলে স্লিপে ক্যাচ দেন লিটন দাস। রানের খাতা খোলার আগেই। ৪৩ ইনিংসে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের সপ্তম শূন্য, সবশেষ সাত ইনিংসে তৃতীয়। অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ বল, স্লটেই পেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু একটু আউট সুইং করা বলে ঠিক মতো শট খেলতে পারেননি তিনি। প্রথম স্লিপে চমৎকার ক্যাচ মুঠোয় নেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা।

লিটনের বিদায়ের পর জুটি জমেনি সাকিব ও তামিমের। পাওয়ার প্লেতে ১০ ওভারে ৪০ রান করে বাংলাদেশ। মন্থর গতিতে ব্যাট করা সাকিব বলতে গেলে ব্যর্থই। ৩৪ বলে মাত্র ১৫ রান করে তিনি ফেরেন সাজঘরে (দুটি চার)।

উইকেটে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়েও ছন্দ পাচ্ছিলেন না সাকিব আল হাসান। ধুঁকছিলেন রান বের করতে। দানুশকা গুনাথিলাকার ফ্লাইটেড বলটিতে বেরিয়ে এসে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু বলের কাছে যেতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় লং অনে পাথুম নিসানকার হাতে।

সাকিবের বিদায়ের পর তামিম-মুশফিজ জুটি হাল ধরেন। অনেকটা সফলও তারা। এই জুটি দলকে নিয়ে যান ৯৯ রান পর্যন্ত। এরপর আবার বিপর্যয়। ২৩ ওভারের শেষ দুই বলে বিদায় নেন তামিম ও মোহাম্মদ মিঠুন। একই সাথে হারায় দুটি রিভিউ।

ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে এলবিডব্লিউ তামিম। পরের বলে প্যাডল সুইপের চেষ্টায় মোহাম্মদ মিঠুনও এলবিডব্লিউর শিকার। ধনাঞ্জয়ার বলের লাইন বুঝতে পারেননি তামিম। ইয়র্কার লেংথের বল তার ব্যাটের কানা ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে পায়ের নিচের দিকে। রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি, ৭০ বলে ছয় চার ও এক ছক্কায় ৫২ রান করে ফিরে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তামিমের এটি ৫১তম ফিফটি।

ক্রিজে গিয়েই অফ স্পিনারের বলে প্যাডল সুইপ করেন মিঠুন। কোনো দরকার ছিল না এমন শটের। আম্পায়ার আউট দেয়ার পর রিভিউ নেন তিনিও, কিন্তু পাল্টায়নি সিদ্ধান্ত। গোল্ডেন ডাকের স্বাদ পাওয়া মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ফিরেন শেষ রিভিউটাও নষ্ট করে।

৯৯ রানে চার উইকেট হারানো বাংলাদেশকে এরপর পথ দেখান মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ জুটি। এই জুটি থেকে আসে ১০৯ রান, ১২২ বলে। পরিস্থিতির দাবি মেটাতে গিয়ে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় ছিলেন মুশফিক। লাকশান সান্দাক্যানকে রিভার্স সুইপ করে বাউন্ডারির চেষ্টায় মুশি ফেরেন শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে। ক্যাচ নেন ইসুরু উদানা। ৮৭ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৮৪ রান করে ফিরেন মুশফিক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মুশফিকের এটি ৪০তম ফিফটি। বাংলাদেশের দলীয় রান তখন ২০৮।

মুশফিকের বিদায়ের পর ফিফটি করেন মাহমুদউল্লাহও। ৭৬ বলে ৫৪ রান করে তিনি ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে বোল্ড। দুই চার ও এক ছক্কা ছিল তার ইনিংসে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাহমুদউল্লাহর এটি ২৪তম ফিফটি।

শেষের দিকে প্রত্যাশিতভাবে রানের চাকা সেভাবে ঘুড়েনি। তারপরও অনেকদিন পর দলে সুযোগ পাওয়া আফিফ ২২ বলে ২৭ রান করে থাকেন অপরাজিত। হাঁকিয়েছেন তিনটি চার। ৯ বলে দুই চারে ১৩ রানে আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান সাইফউদ্দিন।

শ্রীল্কার হয়ে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা তিনটি, দুশন্থ চামিরা, দানুশকা গুনাথিলাকা ও সান্দাকান নেন একটি করে উইকেট।