টিকা কার্যক্রম পাবনায় বন্ধ: দ্বিতীয় ডোজ বঞ্চিত ৩৫ হাজার, ১ম ডোজ পায়নি ৮২ হাজার

টিকা কার্যক্রম পাবনায় বন্ধ: দ্বিতীয় ডোজ বঞ্চিত ৩৫ হাজার, ১ম ডোজ পায়নি ৮২ হাজার

পাবনার জন্য বরাদ্দকৃত টিকার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় ২১ মে থেকে পাবনায় করোনার টিকা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে-

টিকা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালের টিকা কেন্দ্র বন্ধ। পাবনা শহরের পৈলানপুর এলাকার স্কুল শিক্ষক মুসলিমা খাতুন ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের টিকা কেন্দ্র থেকে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজটি নেন মার্চের ১৮ তারিখ। হিসাব অনুযায়ী মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহেই পাওয়ার কথা করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ। দ্বিতীয় ডোজের জন্য মোবাইল ফোনে টিকার মেসেজ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু সময় বয়ে যেতে থাকলেও মোবাইলে কোনো বার্তা না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মুসলিমা। 

বুধবার (২৫ মে ) তিনি স্বাস্থ্য বিভাগে যোগাযোগ করে যখন জানতে পারেন পাবনাতে টিকা কার্যক্রম বন্ধ, তখন তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। সচেতন মুসলিমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম ডোজের টিকা যখন নিই তখন জানানো হয়েছিল নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয়ার পর শরীরে পুরোপুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হবে। প্রথম ডোজ নেয়ার পর মহামারি থেকে নিজেকে অনেকটাই সুরক্ষিত বলে মনে হয়েছে, অপেক্ষা ছিল দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর নিজেকে পুরোপুরি সুরক্ষিত বোধ করার; কিন্তু তা আর হলো না। উপরন্তু টিকার পূর্ণ ডোজ নিতে না পারায় সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেল।’ মুসলিমার মতো এমন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পাবনা জেলার ৩৫ হাজারের বেশি প্রথম ডোজ টিকা নেয়া যারা দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যায় টিকা কার্যক্রম।

পাবনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাবনার জন্য বরাদ্দকৃত টিকার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় ২১ মে থেকে পাবনায় করোনার টিকা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন টিকা আসার পর আবার টিকার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

পাবনা জেলা সিভিল সার্জন দপ্তর জানায়, দুই দফায় পাবনায় সোয়া লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দকৃত টিকার মধ্যে গত ২০ মে পর্যন্ত ৮০ হাজার ২৪৪ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়। একই সময়ে ৪৫ হাজার ৮৬ জনকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হয়।
আকস্মিকভাবে টিকা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, প্রথম ডোজ টিকা নেয়া ৩৫ হাজার ১৫৮ জন দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয়া থেকে বি ত হয়েছে বলে জানায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলা সিভিল সার্জন জানান, যারা প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন, তারা সবাই ভারতীয় অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন। ভারতীয় টিকা পাওয়া এখন অনিশ্চিত। নতুন করে যে টিকা বরাদ্দ হবে সেগুলো চীনের টিকা। ফলে যারা ভারতীয় টিকা প্রথম ডোজ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের চীনের টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেয়ার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না থাকায় বি তদের ভারতীয় টিকা আসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় বি তরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন টিকার খোঁজ নিতে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকা নিতে না পারলে প্রথম ডোজের কার্যকারিতা দিয়ে কতটুকু সুরক্ষিত থাকা যাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তিনি।

পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কে এম আবু জাফর বলেন, দ্বিতীয় ডোজের পর্যাপ্ত মজুত হাতে না থাকলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম একসাথে চালু রাখায় বরাদ্দকৃত টিকার বেশিরভাগইপ্র্রথম ডোজ হিসেবে দেয়া হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। প্রথম দফায় পাবনাতে ৮৪ হাজার ডোজ টিকা সরবরাহ করা হয়। সে সময় ৪২ হাজার জনকে প্রথম ডোজ দিয়ে বাকিটা দ্বিতীয় ডোজের জন্য মজুত রাখার কথা ছিল কিন্তু টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে একই সাথে প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজ টিকার কাজ চালানো হয় বলে জানান ডেপুটি সিভিল সার্জন। ফলে প্রথম দফায় বরাদ্দকৃত বেশিরভাগ টিকাই প্রথম ডোজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় দফায় টিকার কম সংখ্যক বরাদ্দ আসায় ৩৫ হাজারের বেশি প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারি দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার আগেই বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় বি তদের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ভারতে করোনা পরিস্থিতি আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভারতের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

নিবন্ধনের পরও প্রথম ডোজ পায়নি ৮২ হাজার। প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পরও দ্বিতীয় ডোজ বি তরা যখন তাদের সুরক্ষার নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন পাবনায় প্রথম দফায় নিবন্ধিত ৮২ হাজার ৪০ জন এখনও প্রথম ডোজের টিকাই গ্রহণ করতে পারেনি বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত ৭ ফেব্রয়ারি থেকে পাবনাতে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত পাবনায় প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার ২৮৪ জন করোনার টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করে। এর মধ্যে ৮০ হাজার ২৪৪ জন প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা, মনিসার চৌধুরী বলেন, নতুন টিকার বরাদ্দ পাওয়ার পর আগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিবন্ধিত প্রথম ডোজ বাদ পরাদের টিকা দেয়া হবে বলে জানান তিনি। টিকা কার্যক্রম শুরুর পর প্রথমদিকে টিকা নেয়ার ব্যাপারে অনেকেই অনাগ্রহ দেখায় কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় পরে অনেকেই টিকা নিতে আসে। করোনা পরিস্থিতি বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ আকার ধারন করলেও পাবনাতে এখনও করোনা পরিস্থিতি অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে, এখন সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তবেই পরিস্থিতি ভাল রাখা সম্ভব হবে বলে জানান সিভিল সার্জন। যারা এখনও টিকা নেয়ার সুযোগ পায়নি তাদেরকে বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। আর যারা দ্বিতীয় ডোজ পাননি তাদের আতংকিত না হয়ে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত পাবনায় ৭২ হাজার ৪৬১ টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩০১৮ জন করোনা পজেটিভ রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত ৭ দিনে ৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২,৯৩৫ জন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে জেলায় এ পর্যন্ত ২২ জন মারা গেছেন। করোনা পরীক্ষা বন্ধ থাকায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সাংবাদিকদের নিয়মিত রিপোর্ট দিচ্ছে না।