বিজেপি নেতার টুইটে ভুল ধরায় টুইটার অফিসে দিল্লি পুলিশের হানা

বিজেপি নেতার টুইটে ভুল ধরায় টুইটার অফিসে দিল্লি পুলিশের হানা

টুইটারের দিল্লি অফিসের বাইরে মঙ্গলবার মোতায়েন দিল্লি পুলিশের সদস্যরা- ছবি: বিবিসি বাংলা

ভারতে একটি বিতর্কিত ডকুমেন্ট নিয়ে বিরোধী দল কংগ্রেসের বক্তব্যে সায় দেওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট টুইটারের কার্যালয়ে দিল্লি পুলিশ হানা দিয়েছে।

রাজধানী দিল্লিতে ও দিল্লির উপকণ্ঠে গুরগাঁওতে টুইটারের অফিসে সোমবার রাতে দিল্লি পুলিশের ওই অভিযানকে বিরোধী দলগুলো 'ভয় দেখানোর কৌশল' বলে বর্ণনা করছে, তবে টুইটারের পক্ষ থেকে এখনও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

এর আগে শাসক দল বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র কংগ্রেসের তৈরি বলে দাবি করে একটি বিতর্কিত নথি টুইট করেছিলেন, যেটিকে টুইটার 'ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া' বা 'বিকৃত খবর' বলে লেবেল করে দেয়।

এর জন্য প্রথমে সরকার টুইটারের কৈফিয়ত তলব করে, তারপরই পুলিশ তাদের অফিসে হানা দেয়।

দক্ষিণ দিল্লির লাডোসরাইতে টুইটার ইন্ডিয়ার অফিসে গিয়ে গত রাতে নিরাপত্তারক্ষীদের জেরা করেন দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের অফিসাররা।

মহামারিতে প্রায় সব কর্মীই 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' করছেন বলে টুইটারের সিনিয়র কর্মকর্তারা তখন অবশ্য কেউই অফিসে ছিলেন না।

অভিযানের আগে বাছাই করা কিছু সংবাদমাধ্যমকে খবর দেওয়া হয়েছিল, আর এরকমই একটি বার্তা সংস্থার ক্যামেরাতেই ধরা পড়ে জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য।

কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন দিল্লি পুলিশ পরে জানিয়েছে, বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্রর একটি টুইটকে কীসের ভিত্তিতে টুইটার বিকৃত খবর বলে চিহ্নিত করেছে, তার তদন্ত করতেই তারা ওই অভিযান চালিয়েছিল।

মি পাত্র ওই টুইটটি করেন ঠিক এক সপ্তাহ আগে, যাতে তিনি একটি ডকুমেন্ট পেশ করে দাবি করেছিলেন বিরোধী দল কংগ্রেসের গবেষণা শাখা মহামারি পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে সরকারের ভাবমূর্তি মলিন করার ষড়যন্ত্র করছে।

মি পাত্র সেদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনেও বলেন, "এই টুলকিটের মধ্যে দিয়েই প্রমাণ হয় যে কংগ্রেস মহামারির মধ্যেও নোংরা রাজনীতি করছে!"

"তারা এমন কী ভাইরাসের 'ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট' বা 'মোদী ভ্যারিয়েন্টে'র মতো শব্দও যত বেশি সম্ভব ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছে। কুম্ভমেলাকে সুপার স্প্রেডার ইভেন্ট বলে বর্ণনা করতে বলছে।"

কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দাবি করেন, যে নথিটিকে টুলকিট বলে বলা হচ্ছে সেটি পুরোপুরি জাল।

দলীয় মুখপাত্র পবন খেড়া এও বলেন, "আমাদের রিসার্চ উইং-য়ের লেটারহেড নকল করে এই নথিটি তৈরি - এবং মহামারি সামলানোর ব্যর্থতা থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই এটা করা হচ্ছে।"

দিল্লির তুঘলক রোড থানাতে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধেও জালিয়াতির একটি অভিযোগ আনে কংগ্রেস।

আর এরই মধ্যে টুইটারের পক্ষ থেকে মি পাত্র-র টুইটটিকে 'ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া' বলে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়।

এই পদক্ষেপ কেন নেওয়া হল, তিনদিন আগে ভারতের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে টুইটারকে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়।

আর তার আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যেই দিল্লি পুলিশ সটান গিয়ে হাজির হয় টুইটারের দপ্তরে।

বিরোধী দলীয় এমপি শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীর কথায়, "কংগ্রেসের করা জালিয়াতির এফআইআরে কোনও তদন্ত হল না - অথচ উল্টে দিল্লি পুলিশ তদন্ত করতে চলে গেল টুইটার কীভাবে জানতে পারল যে নথিটা জাল।"

"স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হুকুমেই যে এটা করা হয়েছে তা পরিষ্কার, এবং এটা কোনও তদন্ত নয় - স্রেফ ভয় দেখানো!"

সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষক ও বিজেপি-ঘনিষ্ঠ শেফালি বৈদ্য আবার পুলিশি পদক্ষেপকে সমর্থন করে পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, টুইটার কোনও তদন্তকারী সংস্থাও নয় বা আদালতও নয় যে তারা রায় দেবে কোন খবর বিকৃত, আর কোনটা নয়।

মিস বৈদ্যর কথায়, "তারা শুধু একটা মত প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম এবং একটা কর্পোরেট সংস্থা হিসেবে ভারতের আইন মেনেই তাদের চলতে হবে - তাদের নিজেদের বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কোনও এক্তিয়ারই নেই।"

টুইটারের পক্ষ থেকে এই পুলিশি অভিযানের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র-র টুইট থেকে 'বিকৃত খবরে'র লেবেলটিও সরিয়ে নেয়নি! -বিবিসি বাংলা