সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সম্পূর্ণ লকডাউন চায় কোভিড পরামর্শক কমিটি

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সম্পূর্ণ লকডাউন চায় কোভিড পরামর্শক কমিটি

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সম্পূর্ণ লকডাউন চায় কোভিড পরামর্শক কমিটি

বাংলাদেশের কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সীমান্তবর্তী জেলা ও উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় অঞ্চল ভিত্তিক সম্পূর্ণ লকডাউন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

সেখানে জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা ছাড়া সবাইকে বাড়িতে থাকার আদেশ দিতে হবে। আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ করা থেকে শুরু করে কঠোর নজরদারি, টহলের পরিমাণ বাড়ানো এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতা দেয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।মঙ্গলবার রাতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির একটি বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ৩০ ও ৩১শে মে পরামর্শক কমিটির সভায় এসব পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ওই সভায় অংশ নিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহম্মদ খুরশীদ আলম।

সভায় আলোচনায় উঠে এসেছে যে, সীমান্তবর্তী জেলা, বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাটে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সবচেয়ে অবনতি ঘটেছে। সেখানে সংক্রমণের উচ্চহার দেখা গেছে।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ায় বড় আকারে সংক্রমণ হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। যেমন অনেক উন্নত দেশে দেখা গেছে। পাশের দেশ ভারত এখন এইরকম চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।

সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় কারিগরি পরামর্শক কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে,

সারা দেশে সরকারি বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করা।

সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা,

রেস্তোরায় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করা (টেকঅ্যাওয়ে চলতে পারে)

সকল প্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা

পর্যটন স্থান ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখা।

জেলা পর্যায়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বিধিনিষেধ পালনে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে জনপ্রশাসন ও পুলিশের সমন্বয় বাড়াতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে কঠোর মনিটরিং জোরদার করতে হবে, প্রয়োজনে সেজন্য আইনও সংশোধন করা যেতে পারে।সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখারও পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা বিবিসি বাংলাকে বলছেন, কারিগরি পরামর্শক কমিটির অনেক সুপারিশ এর মধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

''নির্দেশনা দেয়াই রয়েছে যে, স্থানীয় পর্যায়ে পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় প্রশাসন নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তাদেরকে সেই ক্ষমতা ও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কমিটি তো এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে বলেছে, যেখানে যেরকম করোনা পরিস্থিতি, সেরকম দেখে ওখানকার স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবেন, এই স্বাধীনতা তাদের দেয়া হয়েছে।''''করোনা নিয়ন্ত্রণে যা যা কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ সব কাজই করতে পারবেন,'' তিনি বলছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু বাড়ছে। ফলে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে বিলম্ব হলে সংকট বাড়বে।

তবে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করার প্রশ্নে সরকারের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে আগেই নির্দেশনা দেয়া আছে।বুধবার খুলনার কয়েকটি এলাকায় স্থানীয়ভাবে লকডাউন ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল।

আগামী ছয়ই জুন পর্যন্ত সারাদেশে চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও, কার্যত সব ধরনের যানবাহন, বিমান, লঞ্চ, ট্রেন চলছে, শপিংমল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে।বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮ লাখ ২ হাজার ৩০৫ জন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৬৬০ জনের। তবে আক্রান্ত হওয়ার পরেও সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭ লাখ ৪২ হাজার ১৫১ জন।

সূত্র : বিবিসি