জি-৭ কী এবং এবারের সম্মেলন কেন কর্নওয়ালে হচ্ছে?

জি-৭ কী এবং এবারের সম্মেলন কেন কর্নওয়ালে হচ্ছে?

জি-৭ কী এবং এবারের সম্মেলন কেন কর্নওয়ালে হচ্ছে?

জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে মুখোমুখি বৈঠকের অংশ নিতে জোটভুক্ত দেশগুলোর নেতারা কার্বিস উপসাগরের কর্নিশ রিসোর্টে জড়ো হচ্ছেন।তাদের মধ্যে আছের জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাইডেন তার প্রথম বিদেশ সফর করছেন।

জি-৭ কী এবং সভাটি কখন?

জি-৭ এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হল গ্রুপ অফ সেভেন, বা সাতটি দেশের দল। বিশ্বের তথাকথিত উন্নত অর্থনীতির সাতটি বড় দেশ ও একটি সংস্থা নিয়ে এই জোট গঠিত।জোটের সদস্য দেশ হল কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই জোটের একটি অংশ।

রাশিয়া ১৯৯৮ সালে এই জোটে যোগ দিলে সেটা জি-৮ হয়েছিল। তবে ক্রিমিয়া দখল করার কারণে ২০১৪ সালে রাশিয়া বাদ পড়ে যায়।চীন একটি বড় অর্থনীতি এবং বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা কখনও এই জোটের সদস্য ছিল না।কোন দেশে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকলে ওই দেশকে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর মতো উন্নত অর্থনীতি হিসাবে দেখা হয় না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা সাধারণত জোটের সম্মেলনে উপস্থিত থাকেন। এ বছর, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।জি-৭ -এর এবারের সম্মেলন ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালে শুক্রবার ১১ই জুন থেকে রোববার ১৩ই জুন পর্যন্ত চলবে।

যুক্তরাজ্যে কেন জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে?

২০২১ সালের প্রেসিডেন্সি যুক্তরাজ্যের হওয়ায় এবারের জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন যুক্তরাজ্যেই হচ্ছে।গত জানুয়ারি মাসে ভেন্যু ঘোষণা করে বলা হয়েছিল যে কর্নওয়ালের সেন্ট আইভেসের কাছে কার্বিস বে হোটেলে এই বৈঠক হবে।

বিশ্বের নেতারা এই প্রথমবারের মতো কোনও সৈকত তীরবর্তী রিসোর্টে দেখা করছেন, বিষয়টা এমন নয়। ২০১৯ সালের সবশেষ জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন ফ্রান্সের সমুদ্র তীরের শহর বিয়ারিৎজে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এই সম্মেলনের জন্য রাস্তাঘাট সব বন্ধ করে দেয়ার কারণে কর্নওয়ালে স্থানীয় এবং পর্যটকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাঁধার মুখে পড়বে।সেন্ট আইভেসের কয়েকটি অঞ্চলে, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিজ বাড়িতে প্রবেশের জন্য ঠিকানার প্রমাণ দেখাতে হবে।যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে যে বিশ্বনেতাদের একে অপরের সাথে সাক্ষাত করা জরুরি ছিল।এছাড়া সম্মেলন উপলক্ষে নিয়মিত কোভিড পরীক্ষাও হয়েছে।

জি-৭ কী করে?

সারা বছর ধরে সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা বৈঠক করেন, চুক্তি করেন এবং বৈশ্বিক ইভেন্টগুলিতে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেন।এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনের আগে, জি-৭ এর অর্থমন্ত্রীরা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে বেশি বেশি কর আদায়ের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।প্রধান ইভেন্টে জি-৭ নেতারা দিনের সবচেয়ে বড় ইস্যুগুলো নিয়ে একসাথে আলোচনা করতে বসেন।

এই বছরের এজেন্ডা কী?

এবারে আলোচনার মূল বিষয় হল কোভিড থেকে সেরে ওঠা। মূলত "একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা যা সবাইকে ভবিষ্যতের মহামারি থেকে রক্ষা করতে পারবে।"।এজেন্ডায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাণিজ্য ইস্যুটিও আছ।

ব্রিটেন-ইইউ বাণিজ্য বিরোধ কীভাবে উত্তর আয়ারল্যান্ডে শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে - সেটা নিয়ে আলোচনা করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবারের সফরে বরিস জনসন এবং ইইউর সাথে কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।শনিবার সকালে আনুষ্ঠানিক বৈঠকগুলো শুরু হবে, ওইদিন বিকেলে অতিথি দেশগুলোর নেতারা উপস্থিত হবেন।বেশিরভাগ আলোচনা বন্ধ দরজার পিছনে হবে। তবে নেতাদের ছবি তোলার সুযোগ থাকবে।

শীর্ষ সম্মেলন শেষে যুক্তরাজ্য - আয়োজক দেশ হিসাবে - কমিউনিক নামে একটি নথি প্রকাশ করবে। সম্মেলনে নেতারা কোন কোন বিষয়ে সম্মত হয়েছেন সে সংক্রান্ত একটি রূপরেখা ওই নথিতে থাকবে।রোববার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্মেলনকে ঘিরে বিক্ষোভ এবং পুলিশ মোতায়েন থাকবে?

কোভিড বিধিনিষেধের কারণে এই বছর প্রতিবাদ এবং পুলিশিং দুটোই বেশ কঠিন হবে।শীর্ষ সম্মেলনটি উপলক্ষে পুলিশের অতিরিক্ত ৫০০০ হাজারের বেশি কর্মকর্তা। সেইসঙ্গে ডিভন এবং কর্নওয়াল থেকে আসা ১৫০০ কর্মকর্তা মোতায়েন থাকবে।অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মীদের থাকার জন্য একটি ক্রুজ শিপ ফালমাউথের কাছে নোঙর করেছে।

বিক্ষোভকারীদের বলা হয়েছে যে তারা চারটি অনুমোদিত স্থানে প্রতিবাদের জন্য জড়ো হতে পারবেন, যার মধ্যে এক্সেটর একটি - সম্মেলন স্থল থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে রয়েছে।পুলিশ বলেছে যে তারা "প্রতিবাদ যে শুধু ওই চারটি স্থানেই হবে, আমাদের এমনটা মনে হয় না।।"জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ 'এক্সটিঙ্কশান রেবেলিওন' প্লাইমাউথ থেকে কার্বিস উপসাগর পর্যন্ত পদযাত্রাসহ বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছিল।

জি-৭ এর কোন শক্তি আছে?

এই জোট কোনও আইন পাস করতে পারে না, কারণ এই জোট আলাদা জাতি নিয়ে গঠিত যাদের এটি নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রয়েছে।তবে তাদের একমত হওয়া সিদ্ধান্তের বিশ্বব্যাপী প্রভাব থাকতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, জি-৭ ২০০২ সালে ম্যালেরিয়া এবং এইডসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী তহবিল গঠন করেছিল যেটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।এই বছর কর বিষয়ে যে চুক্তি হতে যাচ্ছে, সেটার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।তবে জি-৭-কে পুরোন দেশগুলোর জোট হিসেবেও আংশিক সমালোচনা করা হয়। কারণ এটি বিশ্বের বৃহত্তম দুই দেশ- ভারত এবং চীনকে অন্তর্ভুক্ত করেনি।

সূত্র : বিবিসি