পাবনায় করোনার ঊর্ধ্বগতি, ২৪ ঘন্টায় আরো ৯৯ জন আক্রান্ত

পাবনায় করোনার ঊর্ধ্বগতি, ২৪ ঘন্টায় আরো ৯৯ জন আক্রান্ত

পাবনায় করোনার ঊর্ধ্বগতি, ২৪ ঘন্টায় আরো ৯৯ জন আক্রান্ত

পাবনায় করোনার অবস্থা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ অবস্থার দিকে ধাপিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ( সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬ টা) পর্যন্ত জেলায় নতুন করে আরো ৯৯ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে একজন নারী সাংবাদিক ও জেলা প্রশাসনের এক নারী কর্মী মারা যান। এ হিসেবে জেলায়  নিয়ে ২৫ জনের প্রাণ গেল কোভিড-১৯ এ। 

পাবনার সিভিল সার্জন মনিসর চৌধুরী বলেন, ‘পাবনায় ইতোমধ্যেই (২৯ জুন) পর্যন্ত  করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৩ শ’ ২৪-এ দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গত সাত দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬২৪ জন। গত ২৪ ঘন্টায় (  সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা) পর্যন্ত ৪ জনসহ এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন করোনা রোগী।’

এদিকে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পাবনা আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কাম পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটের শয্যার সংখ্যা আবারো বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর এই হাসপাতালে যে করোনা ইউনিটটি তৈরি করা হয়; তাতে ১০০টি শয্যা ছিল। কিন্তু, সংক্রমণ কমে আসায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে তা ৫০টিতে নামিয়ে আনা হয়। এখন সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকায় শয্যার সংখ্যা পুনরায় ১০০টিতে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে।এদিকে, কোভিড চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত এই হাসপাতালে এখনো হাই-ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা যায়নি। ফলে কাজে আসছে না এখানকার চারটি আইসিইউ শয্যা।

জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জুনের প্রথম সপ্তাহে পাবনায় করোনা সংক্রমণের হার ছিল চার শতাংশের মধ্যে। পরের দুই সপ্তাহে এক দিন ছাড়া তা কখনোই ১০ এর ওপর উঠেনি। তবে, শেষ সপ্তাহে সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকে। সর্বশেষ শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৮৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। যাতে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ২৪ শতাংশ।

এসময় করোনায় আক্রান্ত জেলা প্রশাসনের এক নারী কর্মীর মৃত্যু হয়। জেলা প্রশাসন ও পাবনা পাবনা আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কাম পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অক্সিজেনের মাত্রা কমে অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ায় জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের কর্মী আরজু আরা বেগম ইলাকে (৪৮) শনিবার রাতে হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু, সেখানে তার জন্য হাই- ফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা যায়নি।এ বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আইয়ুব হোসেন জানান,‘ওই সময় রোগীর অক্সিজেন লেভেল ছিল মাত্র ৫১। কিন্তু, তাকে আমরা হাই-ফ্লো অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারিনি। চিকিৎসা শুরুর আগেই তার মৃত্যু হয়।’

আইয়ুব হোসেন জানান, এই হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে, একসঙ্গে অনেকগুলো সিলিন্ডার কাজে লাগিয়ে কীভাবে হাই-ফ্লো অক্সিজেন নিশ্চিত করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।একইসঙ্গে হাসপাতালে করোনা ইউনিটের শয্যার সংখ্যা পুনরায় ১০০টিতে উন্নীত করার কাজ চলছে জানিয়ে আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘কিন্তু দ্রুত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনোভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।’

সংক্রমণের বিস্তার রোধে সোমবার থেকে দেশব্যাপী লকডাউন কার্যকরের সরকারি ঘোষণার পর থেকে পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট ফেরিঘাটে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়ে। শহরের মধ্যেও মানুষের ভেতর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই। এ অবস্থায় জেলায় করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।‘এ অবস্থায় কেবল চিকিৎসা সুবিধা বাড়ালেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।’