পাবনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ভুতুড়ে বিল ও ভোগান্তিতে দিশেহারা গ্রাহক

পাবনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ভুতুড়ে বিল ও ভোগান্তিতে দিশেহারা গ্রাহক

পাবনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ভুতুড়ে বিল ও ভোগান্তিতে দিশেহারা গ্রাহক

পাবনা প্রতিনিধি:পাবনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ভুতুড়ে বিল ও ভোগান্তিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করণ লক্ষ্য হলেও পাবনার চাটমোহর পাবনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ভুতুড়ে বিলে গ্রাহকরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

অধিক বিল, মিটারে প্রদর্শিত ইউনিটের অতিরিক্ত ইউনিট রিডিং নিয়ে অতিরিক্ত বিল করা ও সেগুলো সমন্বয়ের নামে গ্রাহক ভোগান্তি  যেন নিত্যনৈমিত্তিকে পরিণত হয়েছে। এতে করে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী। তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথর গ্রামের নিত্যানন্দ সূত্রধর শিক্ষকতা করেন ঈশ্বরদী পেপারমিল উচ্চবিদ্যালয়ে। চাকরি সূত্রে সেখানেই বসবাস করেন তিনি। গ্রামের বাড়ি চাটমোহরের বোঁথরে তার নামে একটি আবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। হিসাব নং ০১-৩৯৬-১৫৭৫। অনেক দিন যাবত তার মেইন সুইচটি বন্ধ রয়েছে। মেইনসুইচ বন্ধ থাকার পরও ঘুরেছে তার মিটার। এক সপ্তাহ পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে “পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি পাবনা-১ এর লীলা খেলা” শিরোনামে একটি পোষ্ট দেন। পোস্টে তিনি লেখেন, পাবনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর একজন গ্রাহক আমি। আমার চাকরি সুবাদে আমি বাড়ি থাকিনা বলে আমার বাড়ির মেইনসুইচ বন্ধ থাকে। তাই আমার মিনিমাম বিল আসার কথা। এজন্য আমার প্রতি মাসে বিল আসতো ৪৫ টাকা। গত এপ্রিল-২১ মাসে বিল এসেছে ১২২ টাকা। সবচেয়ে মজার বিষয় মে-২১ এর বিল এসেছে ৩৫০ টাকা। আমার মে-২১ পর্যন্ত মিটার রিডিং দেখানো হয়েছে ২০,২৯০, অথচ আজ পর্যন্ত মিটিার রিডিং হয়েছে ২০২০৫।

চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার বাসিন্দা ছিদ্দিকুর রহমান চাকরি করতেন চাটমোহরের একটি প্রাইভেট স্কুলে। ছিদ্দিকুর রহমান জানান, করোনা’র কারণে এখন তিনি কর্মহীন। তার নামে পবিস-১ এর একটি আবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। হিসাব নং-০১-৮৪৯-২১০১। চলতি বছরে জানুয়ারী মাসে ৫৫ ইউনিট, ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৫ ইউনিট,  মার্চ-মাসে ৬৫ ইউনিট, মে মাসে ১৩৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় তার। মে মাসের বিলে বর্তমান রিডিং দেখানো হয় ২৮৭০ ইউনিট। গত ২৫ জুন মিটারের রিডিং নিতে এসে মিটার রিডার জানান জুন মাসে তার প্রায় ৮ হাজার টাকা বিল আসবে। দিশেহারা হয়ে ২৬ জুন শনিবার পবিস-১ এ ছুটে যান সিদ্দিকুর রহমান।

জেনারেল ম্যানেজারের সাথে দেখা করতে চাইলে বিলিং সুপারভাইজার নিজেই বিষয়টি দেখবেন বলে জেনারেল ম্যানেজারের নিকট যেতে নিষেধ করেন। ২৭ জুন রোববার ফের পবিস-১ এ গিয়ে জানতে পারেন এ ব্যাপারে এখনো কোন সুরাহা হয়নি। এ দিনে মিটারে তার বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখা যায় ৩৭১৭ ইউনিট। এতে পূর্ববর্তী রিডিং  থেকে ৮৫৭ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার প্রদর্শিত হয়। জেনারেল ম্যানেজার না থাকায় তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন না।

 সোমবার দশটার দিকে তিনি আবার ছুটে যান পবিস-১। জেনারেল ম্যানেজার মিটিং এ থাকায় এ দিনেও তিনি তার সাথে দেখা করতে পারেন না। মঙ্গলবার এজিএম-তার সমস্যার কথা শোনেন এবং মে মাসের বিলের কাগজের ফটো কপি দিতে বললে ভূক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমান বিলের ফটোকপি দিয়ে আসেন। পবিস-১ থেকে তদন্তে এসে অতিরিক্ত রিডিং ব্যতীত অন্য কোন অসঙ্গতি পান না। ৩০ জুন বুধবার ফের পবিস-১ থেকে ৩ কর্মচারী তদন্তে এসে প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন সিদ্দিকুর রহমানকে। সিদ্দিকুর রহমান আরো জানান, আমার সংযোগে এত বেশি ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার অসম্ভব। যান্ত্রিক কোন ত্রুটির কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এখনো বিলের কাগজ হাতে পাইনি। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এমনটা ঘটলে তার দায় আমি কেন নেব?

চাটমোহর সরকারী কলেজের ভূগোল বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান ড.মুক্তি মাহমুদের নামে একটি আবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে বিলচলন ইউনিয়নের দোলং গ্রামে। তিনি জানান, তার সংযোগে জুনমাসের বিলে ব্যবহারের অতিরিক্ত ইউনিট লিখে ১১৮৫ টাকা বিল করা হয়। অথচ তার প্রকৃত বিল হয়েছে ৫৫৫ টাকা। পবিস-১ কর্তৃপক্ষ ৬৩০ টাকা অধিক বিল করলে দুই তিন দিন পবিস-১ এ ঘুরে মিটারের ছবি তুলে নিয়ে পবিস-১ কর্তৃপক্ষকে দেখালে তবেই সমন্বয় করে দেয়া হয়।

সিদ্দিকুর রহমান, নিত্যানন্দ সূত্রধর, মুক্তিমাহমুদ এর এমন ভোগান্তি পবিস-১ এর একটি ক্ষুদ্র চিত্র। এমন অনেক গ্রাহক প্রতিদিন ভীড় করেন পবিস-১ এ। তারা এর প্রতিকার ও চান।

এ ব্যাপারে পাবনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার জানান, যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গ্রাহক ভোগান্তি, ভুতুড়ে বা অতিরিক্ত বিল করার কোন সুযোগ নেই। কোন কর্মচারী যদি প্রকৃত ব্যবহারের চেয়ে অতিরিক্ত ইউনিট রিডিং নিয়ে থাকে এবং এর জন্য অধিক বিল করা হয় তাহলে আমি কঠোর পদক্ষেপ নেব। বিশেষ করে সিদ্দিকুর রহমানের ব্যাপারে তিনি বলেন,‘সিদ্দিকুর রহমান তো এখনো বিল পাননি। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিগত কয়েক মাসের বিল দেখে তদানুযায়ী জুন মাসের বিল করা হবে। তাকে কেন খেসারত দিতে হবে? দিবে পল্লীবিদ্যুৎ।