পাবনায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনা উপসর্গে মৃত্যু ১০, আক্রান্ত ১৯২

পাবনায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনা উপসর্গে মৃত্যু ১০, আক্রান্ত ১৯২

পাবনায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনা উপসর্গে মৃত্যু ১০, আক্রান্ত ১৯২

পাবনায় আবারো রেকর্ড ভেঙেছে করোনা সনাক্তের সংখ্যা। গত দু’বছরের মধ্যে বুধবার সর্বোচ্চ ১৭৭ জন সনাক্তের পরদিনই ভেঙেছে সংক্রমণের রেকর্ড। একদিন পরই বৃহস্পতিার জেলায় করোনা সনাক্ত হয়েছে ১৯২ জনের শরীরে। করোনা উপসর্গে গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদের মধ্যে একজন গত রাতে জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। ঈশ্বরদীতে ২ জন, সদর উপজেলায় ৪ জন, সাঁথিয়ায় ২ জন এবং বেড়া উপজেলায় ২ জনের উপসর্গে মৃত্যুর কথা স্থানীয়রা জানালেও, মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি স্বাস্থ্যবিভাগ। প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্ত হলেও শুধুমাত্র আক্রান্তের সংখ্যাটি গণমাধ্যমকে জানানো হচ্ছে।

সরকারি হিসেব মতে জেলায় ২৩ জনের মৃত্যুর কথা জানালেও শুধুমাত্র গত ২৪ ঘন্টায় উপসর্গ নিয়েই ১০ জন মারা গেছেন জেলায়।  পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কেএম আবু জাফর জানান, জেলায় ১,২১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন ১৯২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটিই পাবনায় সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড। তিনি জানান, করোনা সংক্রমণ প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ায় এবং জনসাধারণ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পাবনাতেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে। সচেতন না হলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই বাড়বে। আক্রান্তের একটি বড় অংশ করোনা পরীক্ষা না করা এবং হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়ায় সঠিক পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্য দিয়ে পাবনায় শুরু হয়েছে প্রথম দিনের কঠোর লকডাউন। প্রধান সড়ক গুলোতে জনসমাগম কম হলেও, খুলেছে অলিগলির দোকানপাট, চায়ের স্টল। পৌর শহরের বাইরে চলাচল করছে ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিক্সার মত যন্ত্র চালিত বাহনও।

সরেজমিনে, পাবনার পৌর এলাকার দক্ষিণ আটুয়া, কাচারীপাড়া, মন্ডলপাড়া, বাবলাতলা, আরিফপুর ও বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায় সকালের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেই খুলেছে পাড়া মহল্লার দোকানপাট। চায়ের দোকানগুলিতে ভিড় করে আড্ডা দিচ্ছেন নানা বয়সের মানুষ। অনেকেই বের হয়েছেন আইনশৃংখলা বাহিনী কতটা কঠোর হয় তা দেখতে।শহরের লাইব্রেরী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা সবজির বাজার বসানো হয়েছে পাশ্ববর্তী কৃষ্ণপুর বালিকা বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে। ক্রেতা সমাগম কম, তবে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মানা হচ্ছে না ।

ক্রেতা বিক্রেতার অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। একই চিত্র শহরের বড় বাজার, মাসুম বাজারেও। খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়াও নিউ মার্কেট, প্রেসক্লাব গলি , দইবাজার, বড় বাজার এলাকার দোকানপাট খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখলে সাটার বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান নিচ্ছেন তারা, চলে গেলে পাল্লা অর্ধেক খুলে বেচাকেনা করছেন দোকানীরা।

এদিকে, সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে শহরের বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাইরে আসা লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তারা। তবে, বাস টার্মিনাল ও হাজিরহাট এলাকায় সিএনজি অটোরিক্সা, ইজিবাইক চলাচল করতে দেখা গেছে।

মনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল হাসান জানান, জরুরী কিছু ওষুধ কিনতে বাইরে এসেছিলাম। আতঙ্কে ছিলাম হয়তো বাধার মুখে পড়ব। কিন্তু কোথাও বাধা  তো দূরের কথা দেখে মনে হচ্ছে সব যেন স্বাভাবিক।তিনি আরো বলেন, গ্রাম পর্যায়ে যেভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর না হলে লকডাউন বাস্তবায়ন হবে না, ভয়াবহ পরিণতি হবে।

সকাল থেকে লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান। এ সময় তিনি অযৌক্তিক কারণে বের হওয়া এবং ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন। এ সময় পুলিশ সুপার বলেন,‘জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বের হলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আমরা সতর্ক করেছি, এরপরও আইন অমান্য করলে গ্রেফতার করা হবে’।

উল্লেখ্য,  জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বুলেটিনে জানানো হয়েছে পাবনা জেলায় করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪,৬৯৩ জন এবং মারা গেছেন ২৩ জন। অথচ প্রতিদিন করোনা উপসর্গে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের তালিকা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের থালিকায় থাকছে না। গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আকান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো ২ জন। গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৭ জন। এ সময়ে ২৫ জন সুস্থ্য হয়েছেন। সংক্রমণের হার ১৫.৮৭% এবং সুস্থ্যতার হার ১৩.০২%।