আবারও শুরু গণটিকা কার্যক্রম, কারা টিকা পাবেন

আবারও শুরু গণটিকা কার্যক্রম, কারা টিকা পাবেন

আবারও শুরু গণটিকা কার্যক্রম, কারা টিকা পাবেন

পহেলা জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারা দেশে আবারও করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।এবারে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে চীনের ওষুধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের টিকা এবং শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

কোথায় পাওয়া যাবে?

বাংলাদেশে গত মে মাসে সিনোফার্ম এবং জুন মাসে ফাইজারের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়।কারও মধ্যে বিরূপ কোন প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে চালু করা হয়েছে এই গণটিকা দান কর্মসূচি।ফাইজারের টিকা সীমিত সংখ্যক থাকায় আপাতত ঢাকার সাতটি কেন্দ্র থেকে টিকাটির প্রথম ডোজ দেয়া হবে।

কেন্দ্রগুলো হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।

এছাড়া সিনোফার্মের টিকা সারাদেশের ৪০টি কেন্দ্রে থেকে দেয়া হবে।এর মধ্যে রয়েছে দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ, জেলা সদর হাসপাতাল, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল।এসব কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত নিবন্ধন পাওয়া ব্যক্তিরা প্রথম ডোজ টিকা নিতে পারবেন।

কারা টিকা পাবেন

প্রতিটি কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ ডোজ টিকা দেয়ার কথা রয়েছে। তবে লকডাউন পরিস্থিতিতে টিকা দেয়ার হার কমে যেতে পারে বলে জানান মি. আমিন।এবারে টিকার সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে নিবন্ধনের ধরনও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।সুরক্ষা ওয়েবসাইট অনুযায়ী এখন শুধুমাত্র সম্মুখ সারির আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, চিকিৎসা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছাত্রছাত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহের ছাত্রছাত্রীদের টিকা দেয়া হবে।

এরপর চল্লিশোর্ধ নাগরিকদের প্রাধান্য দেয়া হবে।যদিও সুরক্ষা অ্যাপে আগের মতোই ২৪টি ক্যাটাগরির কথা উল্লেখ রয়েছে।স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে যে, প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা সেবা খাত সংশ্লিষ্টদের অর্থাৎ ডাক্তার, নার্স ও মেডিকেল সহকারী সেইসঙ্গে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টিকা দেয়া হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীরা এবারে টিকার নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।এছাড়া যারা আগেরবার টিকার জন্য নিবন্ধন করেও টিকা নিতে পারেননি, এবার তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।এছাড়া বিদেশগামী প্রবাসী কর্মীরা অগ্রাধিকার ক্যাটাগরিতে না পরলেও জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরোর মাধ্যমে নিবন্ধন করে দুটি টিকার যেকোনোটি নিতে পারবেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর এবং টিকা কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক বুধবার করোনা বুলেটিনে জানিয়েছেন, যেসব দেশে সিনোফার্মের টিকা অনুমোদিত, সেইসব দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের সিনোফার্মের টিকা দেয়া হবে।তবে সৌদিআরব, কুয়েতসহ যেসব দেশে সিনোফার্মের টিকা নিয়ে জটিলতা রয়েছে, শুধু তাদেরই ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে।

যারা অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি তাদের ক্ষেত্রে ফাইজার বা সিনোফার্মের টিকা নেয়া নিরাপদ হবে কিনা সেটা গবেষণাধীন আছে বলে জানিয়েছেন মি. আমিন।

তিনি বলেন, "ভ্যাকসিন মিক্স করা যায় কিনা সেটা নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রিপোর্ট বেরিয়েছে। এইসব রিপোর্টের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবেন যে অন্যান্য দেশের মতো টিকার মিক্স-ম্যাচ আমাদের দেশে করা যাবে কিনা। সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদেরকে কোন টিকা দেয়া হবে না।"

ফাইজার বা সিনোফার্ম- যে টিকাই নেয়া হোক না কেন, সেটার প্রথম ডোজ নেয়ার চার সপ্তাহ বা ২৮ দিনের মধ্যে অবশ্যই দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ডা. রোবেদ আমিন।অবশ্য প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পর পরবর্তী ডোজের তারিখ টিকা কার্ডেই লিখে দেয়া হবে।

নিবন্ধন করবেন কিভাবে?

অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যারা টিকা পাওয়ার যোগ্য, তাদের জন্য বুধবার থেকে নিবন্ধনের কার্যক্রম খুলে দেওয়া হয়েছে।যদিও প্রথমদিন নিবন্ধন করতে গিয়ে ধীর গতি, নিবন্ধন দেখালেও মেসেজ না আসাসহ বিড়ম্বনায় পড়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকার এক ব্যক্তি।টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম আগের মতোই আছে। www.surokkha.gov.bd ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করে অথবা গুগল প্লে স্টোর থেকে "সুরক্ষা" অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে হবে এবং টিকা কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।এরপর মোবাইল ফোনে SMS এর মাধ্যমে টিকা দেয়ার তারিখ ও কেন্দ্র জানানো হলে সময় মতো সঠিক কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে হবে।এক্ষেত্রে অবশ্যই টিকা কার্ড ও এনআইডি সাথে রাখার কথা জানিয়েছেন মি. হক।তবে এবারে কাউকে তাৎক্ষণিক নিবন্ধনের কোন সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।

লকডাউনের মধ্যে টিকা

করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি লকডাউনের আওতাবহির্ভূত হওয়ায় লকডাউন চলাকালে নিবন্ধিত ব্যক্তিরা টিকা দিতে পারবেন।সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন চলাকালে কেউ যদি টিকা নিতে চান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি জিজ্ঞাসা করে, তাহলে টিকা কার্ডটি দেখালেই হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কতো টিকা আছে

জানুয়ারির শেষের দিকে ব্রিটেনের তৈরি এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। পরে ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে ওই টিকা দিয়ে শুরু হয় গণ টিকাদান কার্যক্রম।কিন্তু ভারত চুক্তি অনুযায়ী সময় মতো বাংলাদেশকে টিকা না দেয়ায় এই কার্যক্রম বাধার মুখে পড়ে এবং ২৬শে এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

এমনকি যারা প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন তাদের অনেককেই দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়ার মতো মজুদ সরকারের নেই।এমন অবস্থায়, বাংলাদেশ সরকার নতুন করে চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে টিকা আনার ব্যাপারে চেষ্টা শুরু করে।তারই ধারাবাহিকতায় টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে গত ৩১শে মে ফাইজার বায়োএনটেকের তৈরি ১ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ উপহার হিসেবে পায়।এরপর ২১শে জুন তিনটি হাসপাতালে ৩৬০ জনের মধ্যে ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়।

এর আগে চীন থেকে মে ও জুন মাসের মাঝামাঝি দুই দফায় সিনোফার্মের মোট ১১ লাখ টিকা বাংলাদেশে আসে। ২৫শে মে থেকে শুরু হয় সিনোফার্মের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ।সিনোফার্মের কাছ থেকে সরকারি পর্যায়ে দেড় কোটি টাকার টিকা কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী জুন জুলাই ও অগাস্ট মাসে ৫০ লাখ করে মোট দেড় কোটি টিকা আসার কথা।কিন্তু এখন পর্যন্ত কেনা কোন টিকা এসে পৌঁছায়নি।

তবে চীনা দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের কেনা সিনোফার্মের ২০ লাখ টিকা বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে ঠিক কবে আসবে সে বিষয়ে কোন তথ্য কোথাও জানা যায়নি।শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভ্যাক্সের আওতায় মডার্নার ২৫ লাখ টিকা আসছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।টিকার চালান আসা শুরু হলে টিকা দেয়ার পরিসর আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ডা. রোবেদ আমিন।