কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের অভাবে পাবনায় চালু হচ্ছে না আইসিইউ

কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের অভাবে পাবনায় চালু হচ্ছে না আইসিইউ

কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের অভাবে পাবনায় চালু হচ্ছে না আইসিইউ-

পাবনা প্রতিনিধি: পাবনা জেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঢেউ চলছে ঈশ্বরদী উপজেলায়। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে একজন আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তা ছড়িয়ে পড়ছে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মাঝেও। এমন সংক্রমিত হার আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ এ জন্য জনসমাগমকে দায়ী করছে। অপরদিকে আক্রান্তের হার বৃদ্ধিতে চিকিৎসক ও সেবিকার সংকট নিয়ে শংকিত পাবনা জেনারেল হাসপাতালের এডি। 
চরম ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেও পাবনায় করোনার নমুনা পরীক্ষায় অচলাবস্থা কাটেনি। পাবনায় পিসিআর ল্যাব না থাকায় রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ থেকে নমুনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। কিন্তু সেখান থেকে রিপোর্ট পেতে সময় লাগছে কমপক্ষে এক সপ্তাহ।

নমুনার রিপোর্ট পেতে এ দীর্ঘসূত্রিতার কারণে জেলায় করোনা আক্রান্ত এবং করোনার উপসর্গে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পাবনার বিশিষ্টজনদের নিয়ে গঠিত ঢাকাস্থ পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন গত সপ্তাতে একটি পিসিআর ল্যাব উপহার হিসেবে পাবনা মেডিকেল কলেজে প্রদান করলেও শুক্রবার পর্যন্ত সেটি চালু হয়নি।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বিশেষজ্ঞ না আসায় ওই উপহারের মেশিনটি এখনো প্যাকেটেই রয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এক সময়ের পাবনার মহকুমা সিরাজগঞ্জে এবং কুষ্টিয়া, বগুড়া ও রাজশাহীতে পিসিআর ল্যাব থাকলেও পাবনার মানুষের কপালে তা জোটেনি।

এদিকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। একবার নমুনা দিয়ে রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় করোনার উপসর্গে থাকা এবং করোনা রোগীসহ তাদের স্বজনদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এসব নিয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে চরম অচলাবস্থা।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের একজন মেডিকেল অফিসার জানান, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে করোনা রোগী উপসর্গে থাকা রোগীদের নমুনা দেয়ার পর দেরিতে রিপোর্ট আসায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে চরম অসুবিধার মুখে পড়ছেন তারা।

করোনার নমুনার রিপোর্ট দেরিতে কেন পাওয়া যাচ্ছে- এমন প্রশ্নে পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কেএম আবু জাফর বলেন, আসলে পাবনায় আমাদের নিজেদের জন্য পিসিআর ল্যাব না থাকায় অন্য জেলায় পাঠাতে হচ্ছে নমুনা। সেখানে অতিরিক্ত চাপের কারণে এই রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। তবে পাবনা মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। অচিরেই সমস্যার সমাধান হবে।

গত ২৪ ঘন্টার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পাবনা জেলায় মোট করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৪ জন। এর মধ্যে কেবলমাত্র ঈশ্বরদী উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৪ জন। বাকি সাতটি উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ জন। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের তিন ভাগের দুই ভাগেরও বেশি ঈশ্বরদী উপজেলায়। এ উপজেলায় কোনভাবেই সংক্রমণের সংখ্যা কমছে না। একাধিক পরিবার রয়েছে তাদের দুই থেকে চার জন করোনা আক্রান্ত।

শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সিরাজগঞ্জের ল্যাব থেকে তাদের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পাবনা সিভিল সার্জন ডা: মনিসর  চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে দীর্ঘদিনের দাবির মুখে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য অক্সিজেন প্ল্যান্টের কাজ শুরু হয়। জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বুধবার (৩০ জুন) পর্যন্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রের অভাবে সেটি চালু হয়নি।  কেন্দ্র্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় ২০১৯ সালে শয্যা আসলেও হাসপাতালটিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করা যায়নি।

পাবনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে হাসপাতালটিতে আইসিইউ ইউনিট চালুর জন্য ৪টি শয্যা ও ৪টি কার্ডিয়াক মনিটর আসে। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য দরপত্র হয়। জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

এদিকে শুক্রবার (০২ জুলাই) পাবনায় এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ ২৪৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ অবস্থায়ও হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক দেওয়ান মাহবুবুল ইসলাম বলেন, পাবনা একটি পুরাতন জেলা। এখানেও পিসিআর ল্যাব, কেন্দ্র্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ও আইসিইউ ইউনিট চালু হয়নি। হাসপাতালে বহু রোগী অক্সিজেন সংকটে ভুগছে। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারছে না।

তবে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আইয়ুব হোসেন জানান, কেন্দ্র্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার অধিকাংশ সামগ্রী ভারত থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। করোনার কারণে ভারতে লকডাউন থাকায় মালামাল আমদানিতে বিঘ্ন ঘটেছে। কিছু মালামাল এসেছে। খুব শিগগিরই কেন্দ্র্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা যাবে। তিনি জানান, অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হলে আইসিইউ চালু হবে।

২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল পাবনা জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৯৩৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ২৩ জন। বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।