সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য

সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য

সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য

দীর্ঘ সুস্থ জীবন পার করতে সহায়তা করতে পারে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। আর এই উপাদানের উৎস সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছ।
আর গবেষকদের মতে, খাবার তালিকা থেকে কিছু খাবার বাদ দিয়ে পুষ্টিকর কিছু খাবার যোগ করে হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক ও শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি দীর্ঘায়ু অর্জন করা সম্ভব।

‘দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’ জার্নালে স্পেনের ‘হসপিটাল ডেল মার মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএমআইএম)’ ও ‘দ্য ফ্যাটি অ্যাসিড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ে করা গবেষণার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মৃত্যুর ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পেতে সাহায্য করে।

গবেষক দলটি ‘ফ্রেমিং অব স্প্রিং কোহোর্ট’ নামে একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা চালায়। যেখানে ১৯৭১ সাল থেকে ম্যাসাচুসেটস শহরের অধিবাসীদের ৬৫ বছর বয়স্ক ২,২৪০ জন মানুষের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং এই পর্যবেক্ষণের সময়কাল ছিল গড়ে প্রায় ১১ বছর।গবেষণায় দেখা গেছে, এক শতাংশ ওমেগা-থ্রি গ্রহণ মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়।বেস্টলাইফ ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, আইএমআইএমের ‘কার্ডিওভাসকুলার রিস্ক অ্যান্ড নিউট্রিশন রিসার্চ গ্রুপের গবেষণার লেখক অ্যালেক্স সালা-ভিলা বলেন, ‘নিয়মিত তৈলাক্ত মাছ খাবার তালিকায় যুক্ত করে রক্তে এই অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে আয়ু প্রায় পাঁচ বছর বাড়ানো সক্ষম।’

তিনি আরো বলেন, ‘নিয়মিত ধূমপান জীবন থেকে প্রায় ৪.৭ বছর আয়ু কমিয়ে ফেলে, যা ওমেগা-থ্রি গ্রহণ করার মাধ্যমে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।’গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, রক্তে চার ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাসে ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে দু’টি স্যাচুরেইটেড অ্যাসিড রয়েছে, যা উচ্চ মাত্রায় গ্রহণ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

সালা-ভিলা বলেন, ‘সব স্যাচুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য খারাপ নয়।’ গবেষকরা গবেষণার উপসংহারে জানান, বয়সের সাথে সাথে এর প্রভাব ভিন্ন হতে পারে।সালা-ভিলা বলেন, ‘গবেষণার ফলাফল তুচ্ছ নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস জীবনে যাপনে আমূল পরিবর্তন আনে। তাই, এটা শুরু করতে খুব বেশি দেরি করা বা তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়।’

‘দি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ সপ্তাহে দু’বার তৈলাক্ত মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেয়।গবেষকরা বলছেন, তারা জনসংখ্যার একটি বড় অংশের ওপর ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড নিয়ে আরো গবেষণা করবেন।একই সময়ে ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ সপ্তাহে দু’দিন তৈলাক্ত মাছ যেমন, স্যামন, ম্যাকারেল, হেরিং, লেক ট্রট, সার্ডিন ও টুনা ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দেয়।

প্রতি পরিবেশনে ৩.৫ আউন্স রান্না করা তৈলাক্ত মাছ বা এক কাপ গুঁড়া মাছ খাওয়া যেতে পারে বলে জানান, বিশেষজ্ঞরা।
অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি মাছ খাওয়া আয়ু বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও ভূমিকা রাখে।
ওমেগা-থ্রি নিয়ে করা এটাই প্রথম গবেষণা নয়। ২০১৮ সালে বিএমজিতে প্রকাশিত ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গড়ে ৭৪ বছর বয়সী ২,৬২২ জনের ওপর করা গবেষণা থেকে জানা যায় তারা কোনো মানসিক বা শারীরিক দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন কিনা।

রক্তে ওমেগা-থ্রি তেলের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, রক্তে এর মাত্রা বেশি থাকা বয়সের ছাপ ও অস্বাস্থ্যকর বলীরেখা ১৮ শতাংশ পর্যন্ত ধীর করতে পারে। জানা যায়, নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন থেকে।‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সামুদ্রিক মাছ থেকে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করেছেন তারা দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবনযাপন করেন। তাই, বেশি সামুদ্রিক মাছ খাওয়া উচিত,’ বলেন, গবেষণার প্রধান লেখক ও ট্রাফট্স ইউনিভার্সিটির পোস্ট ডক্টরাল ফেলো, হেইডি টি এম লাই।