শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রকাশ

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রকাশ

ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় সমাবেশস্থলের পাশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় মামলায় ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।

আজ সোমবার (৯ আগস্ট) ৮৬ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়। রায় প্রদানকারী বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান রায়ে স্বাক্ষর করেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ রায় প্রকাশের নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০ বছরেরও বেশি সময় পর ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে নিম্ন আদালতের রায় অনুমোদন এবং আসামিদের আপিল নিস্পত্তি করে হাইকোর্ট রায় দেন।

নিম্ন আদালত আরও চারজনের যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছিলেন, হাইকোর্ট তাদের একজনকে খালাস দিয়েছেন এবং বাকিদের সাজা বহাল রেখেছেন। যাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে প্রত্যেকেই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জেহাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে।

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমন খান, ইউসুফ ওরফে মোসাহাব মোড়ল ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ওমর।
 
আসামি মেহেদী হাসান ওরফে আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে গাজী খানকে বিচারিক আদালতের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৪ বছরের দণ্ডিত আসামি আনিসুল ইসলামের দণ্ড বহাল রেখেছেন উচ্চ আদালত।
 
তবে ১৪ বছরের দণ্ডিত মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমানের দণ্ড বহাল রেখে আদালত বলেন, দেখা যাচ্ছে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর পর থেকে তার ১৪ বছর দণ্ড ভোগ করা হয়ে গেছে। তাকে বিচারিক আদালত ১৪ বছর দণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। সুতরাং জেল কোড অনুসারে এ আসামি তার ওপরে প্রদত্ত দণ্ড যদি ভোগ করে থাকেন, তবে তাকে মুক্তি দিতে (যদি অন্য কোনও মামলা না থাকে) নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
 
এছাড়া ১৪ বছরের অপর দণ্ডিত আসামি সারোয়ার হোসেন মিয়াকে খালাস দিয়েছেন উচ্চ আদালত। যদি অন্য মামলা না থাকে, তাহলে তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
   
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর এ আপিল শুনানি শুরু হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার দিন ধার্য করা হয়েছিল। সে অনুসারে রায় ঘোষণা করা হয়।
  
২০০০ সালে কোটালীপাড়া সফরের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। সমাবেশের দু’দিন আগে ২০ জুলাই কলেজ প্রাঙ্গণে জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় শক্তিশালী বোমার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

পরে ওই কলেজের উত্তর পাশে সন্তোষ সাধুর দোকানঘরের সামনে থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ওজনের বোমাটি উদ্ধার করে। পরদিন ২১ জুলাই গোপালগঞ্জ সদর থেকে ৮০ কেজি ওজনের আরও একটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়।
 
এসব ঘটনায় আলাদা দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। ২০১০ সালে মামলা দু’টি ঢাকার ২ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়।
 
২০১৭ সালের ২০ আগস্ট দুই মামলার একটিতে ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
 
এছাড়া একজন আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তিনজনের ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার ২ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম।
 
রায় ঘোষণার এক সপ্তাহের মাথায় ২৭ আগস্ট বিচারিক আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স, রায় ও মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
 
এরপর নিয়ম অনুসারে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্নের পর এ ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসে। শুনানি শেষে ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।