৮ আমলে হজ ও ওমরার সওয়াব

৮ আমলে হজ ও ওমরার সওয়াব

৮ আমলে হজ ও ওমরার সওয়াব

হজের মওসুম শেষ হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যাদেরকে হজ করার তাওফিক দিয়েছেন, সন্দেহাতীতভাবে তারা সৌভাগ্যবান। অন্য দিকে এই দুনিয়াতে আল্লাহর বহু বান্দা রয়েছেন যারা হজ ও উমরাহ করার জন্য অন্তরে প্রচণ্ড আগ্রহ লালন করেন, অথচ হজ অথবা উমরাহ করার তাওফিক তাদের হয়নি।

আজ আমরা সেসব ভাই- বোনের জন্য এমন কিছু আমলের কথা বলব, যে আমলগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা হজ এবং উমরার সমান সওয়াব দেবেন। রাসূল সা:-এর হাদিসের ভাণ্ডার থেকে সেরকম আটটি আমলের কথা উল্লেখ করছি।

১. প্রথম আমল হলো ঐকান্তিক ইচ্ছা ও সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ। অর্থাৎ যে ব্যক্তি হজ অথবা উমরাহ করার জন্য অন্তরের গভীর থেকে প্রকৃত অর্থেই ইচ্ছা লালন করেছেন এবং তার জন্য বাস্তবে পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন কিন্তু কোনো কারণে তার হজ বা উমরাহ করা হয়ে ওঠেনি, এই ব্যক্তিকে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা হজ বা উমরাহ না করা সত্ত্বেও হজ ও উমরার সমান সওয়াব দান করবেন।নবীজী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো নেককাজের দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে কিন্তু কোনো কারণে সেটি করতে পারে না, তার জন্য আল্লাহ তায়ালা সে কাজের পূর্ণ সওয়াব লিখে দেন।’ (বুখারি-৬৪৯১)

বুখারি ও মুসলিম একযোগে বর্ণনা করেছে, তাবুক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর নবী সা: যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিদের বলেছিলেন, বহু লোক মদিনায় অবস্থান করেছিল, তোমাদের সাথে সশরীরে যুদ্ধে যোগদান করতে পারেনি; তারা তোমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে সশরীরে না থাকলেও বাস্তবিক অর্থে ছিল।

তারা তোমাদের মতো সওয়াব অর্জন করেছে। কারণ তারা তোমাদের সাথে বের হওয়ার জন্য প্রচণ্ড ইচ্ছা লালন করেছিল। তাদের ইচ্ছায় কোনো খাদ ছিল না। তারা বাস্তবমুখী পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন। শুধু অসুস্থতা বা গ্রহণযোগ্য কোনো ওজরের কারণে তারা যোগ দিতে পারেনি। আল্লাহ তায়ালা তাদের মনের ইচ্ছার কারণে তাদেরও তোমাদের সমান সওয়াব দান করবেন।

আমাদের দেশে প্রতি বছর হজের সময় অনেকে হজে যেতে না পেরে কান্নাকাটি করেন, মন খারাপ করেন। কান্নাকাটি করা তাদের ঈমানের পরিচায়ক, হজের প্রতি আগ্রহ এবং ভালোবাসার আলামত। কিন্তু এই কথা চিন্তা করে তারা খুশি হতে পারেন যে, ঐকান্তিক ইচ্ছার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে হজের সমান সওয়াব দান করবেন।

২. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করার জন্য যে ব্যক্তি বাসা থেকে অজু করে বের হন, এই ব্যক্তিকেও আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা হজ করার সমান সওয়াব দান করবেন। এক হাদিসে নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার বাসা থেকে ফরজ সালাতের জন্য পবিত্রতা অর্জন করে বের হলো, তার প্রতিদান হলো ইহরামধারী হাজীর সমতুল্য।’ (সুনান আবু দাউদ-৫৫৮)

৩. ফজরের ফরজ সালাত আদায় করার পরে সূর্যোদয় পর্যন্ত জিকির-আসকার করা এবং সূর্যোদয়ের পর ইশরাক নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়া। এই আমলের বিনিময়েও আল্লাহ তায়ালা হজ এবং উমরার সমান সওয়াব দান করবেন। নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করল, সূর্যোদয়ের পর দুই রাকাত সালাত আদায় করল তার জন্য রয়েছে পরিপূর্ণ হজ ও উমরার সওয়াব।’ (সুনান তিরমিজি-৫৮৬)

৪. মদিনার মসজিদে কুবায় সালাত আদায় করা। এ বিষয়ে সুনানে তিরমিজির এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার বাসায় পবিত্রতা অর্জন করে মসজিদে কুবায় এসে কোনো সালাত আদায় করল, তার জন্য রয়েছে এক উমরার সওয়াব।’ (সুনান ইবনে মাজাহ-১৪১২)

৫. রমজান মাসে উমরাহ করা। রমজান মাসে উমরাহ করার ফজিলত প্রসঙ্গে সহিহ বুখারির এক হাদিসে নবী সা: বলেছেন, ‘রমজান মাসে একটি উমরাহ করা আমার সাথে হজ করার সমতুল্য।’ (বুখারি-১৮৬৩)অর্থাৎ একটি উমরাহ শুধু হজের সওয়াব পাইয়ে দেবে তা নয়, বরং নবী সা:-এর সাথে হজ করার সওয়াব হবে।

৬. হাজী সাহেবরা যখন হজ করতে যাবেন, তখন তাদেরকে হজে যাওয়ার জন্য যা প্রয়োজন তা দিয়ে তাকে হজের জন্য প্রস্তুত করে দেয়া। তাকে টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করা অথবা হজে যাওয়ার পরে তার অগোচরে তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়া। এ আমলের মাধ্যমেও আমরা হজের সমান সাওয়াব পেতে পারি। এ বিষয়ে নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো হাজীকে প্রস্তুত করে দিলো অথবা তার পরিবারের অভিভাকত্ব করল, সে ব্যক্তি হজকারীর সমতুল্য সওয়াব পাবে; হজকারীর সওয়া থেকে কমানো হবে না।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমাহ-২০৬৪)

৭. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করা। সহিহ বুখারি এবং মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে, নবী সা:-এর কাছে এসে গরিব সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে যারা ধনী, তারা আমাদের মতো সালাত-সিয়াম আদায় করে। তদুপরি তাদের আর্থিক সামর্থ্য থাকার কারণে তারা হজ করেন এবং দান-সদকা করেন। অথচ এগুলো আমরা করতে পারি না।

আমাদেরকে এমন কিছু আমলের কথা বলে দিন, যে আমলের মাধ্যমে আমরা তাদের সমান মর্যাদা পাব। তখন নবী সা: তাদেরকে বলছিলেন, ‘তোমরা প্রত্যেক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পড়বে; তাহলে তারা তাদের অর্থব্যয় করে হজ করে এবং দান করে যে সওয়াব অর্জন করে, সেরকম সওয়াব তোমরাও অর্জন করতে পারবে।’

৮. যে ব্যক্তি কোনো ভালো কিছু শেখা বা শেখানোর জন্য বাড়ি থেকে মসজিদের দিকে বের হয়, তাকেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হজের সমান সওয়াব দান করবেন। এ বিষয়ে রাসূল আকরাম সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একমাত্র জ্ঞানার্জনের জন্য কিংবা ভালো কিছু শিক্ষাদানের জন্য মসজিদের দিকে রওনা হয়, তার জন্য রয়েছে পূর্ণ হজের সাওয়াব।’ (তাবরানি)

উপরিউক্ত আটটি আমল খুবই সহজ। মোটেও কষ্টসাধ্য নয়। এই আমলগুলোর মাধ্যমে অর্থব্যয় করে সশরীরে হজ না করেও হজ এবং উমরার সমান সাওয়াব অর্জন করতে পারি। শুধু একটু খেয়াল করে, যত্ন সহকারে এ আমলগুলোকে যথাযথভাবে পালন করলেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে সেই মর্যাদা দান করবেন।

তবে মনে রাখতে হবে, এই আমলগুলো করার মাধ্যমে হজ এবং উমরার সওয়াব পাওয়া গেলেও হুবহু সশরীরে হজ করার মর্যাদা অর্জিত হবে না। তাছাড়া এ আমলগুলো করলেই হবে, সশরীরে হজ ও উমরাহ করার প্রয়োজন নেই ব্যপারটি এমন নয়। বরং হজ উমরার সওয়াব পাওয়া আর হজ উমরার দায় থেকে মুক্তি পাওয়া ভিন্ন বিষয়। সুযোগ পেলে অবশ্যই হজ ও উমরাহ করতে হবে। তবে হজ ও উমরাহ করার তাওফিক যদি নাও হয়, তাহলে উপরিউক্ত আমলগুলো করার মাধ্যমে হজ ও উমরার সমান বিপুল সওয়াবের অধিকারী হতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে অধিক পরিমাণ আমলের দিকে অগ্রসর হওয়ার তাওফিক দান করুন।