কাবুল বিমানবন্দরে আইএস হামলার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র

কাবুল বিমানবন্দরে আইএস হামলার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি : সংগৃহীত

ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের আফগানিস্তান অংশের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের কাবুলের বিমানবন্দর এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

শনিবার প্রকাশিত হওয়া এক নিরাপত্তা বিষয়ক সতর্কবার্তায় 'প্রবেশপথের বাইরে নিরাপত্তার হুমকি' তৈরি হতে পারে উল্লেখ করে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি যদি কোনো ব্যক্তিকে ঐ এলাকায় যেতে নির্দেশ দেন, কেবলমাত্র তখনই কোন মার্কিন নাগরিকের ঐ এলাকায় যেতে পারেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং বিমানবন্দরে যাওয়ার বিকল্প রাস্তার বিষয়টি যাচাই করছেন।

আইএস এর হামলার সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে এর চেয়ে বেশি তথ্য দেয়া হয়নি। আইএস'ও কাবুলে হামলা করার কোনোরকম ঘোষণা দেয়নি।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের এই বিবৃতি এমন সময়ে এসেছে যখন হাজার হাজার মানুষ আফগানিস্তান ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন এবং বিমানবন্দরের বাইরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার ও মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এক সপ্তাহ আগে তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে নেয়।

এর আগে থেকেই প্রতিদিন বিমানবন্দরে মানুষ ভিড় করছে কোনো একটি বিমানে ওঠার সুযোগ পাওয়ার আশায়। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের জোটের সাথে যারা কাজ করেছে অথবা যারা মানবাধিকারের মত বিষয় নিয়ে কাজ করেছে, তারা মনে করেন দেশ ছাড়তে না পারলে তালেবানের রোষের শিকার হবেন তারা।

তবে শনিবার বিমানবন্দরের প্রবেশপথের পরিস্থিতি আসলে কী ছিল, তা নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিনিধি স্টুয়ার্ট রামসে জানান বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের জটলার সামনের সারিতে থাকা অনেক মানুষ 'পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন।'

তার বর্ণনা মতে, এটি ছিল 'এখন পর্যন্ত নিকৃষ্টতম দিন' এবং তাদের বিশ্বাস ঘটনাস্থলে অনেক মানুষ মারা গেছেন।

শনিবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে ১৭ হাজার মানুষকে বিমানে করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে আড়াই হাজার মার্কিন নাগরিক রয়েছেন।

এক কর্মকর্তা জানান যেসব মার্কিন ও আফগান নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী সরিয়ে নিতে চেয়েছিল, তাদের মধ্যে 'স্বল্প সংখ্যক' ব্যক্তি হয়রানির শিকার হয়েছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে আসার সময় তাদের মারধর করার ঘটনাও ঘটেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র পরে বিবিসিকে জানায় যে তারা বিমানবন্দরের প্রবেশপথের বাইরে বড় ধরনের জটলা এড়িয়ে চলতে আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দিয়েছে তারা।

অন্যান্য দেশও তাদের নাগরিকদের আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

জার্মানির সরকার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে বিমানবন্দর এখনও 'অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিমানবন্দরে প্রবেশ করা অনেক সময়ই অসম্ভব।'

সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে বলেছে নিরাপত্তা পরিস্থিতি 'গত কয়েক ঘণ্টায় বিশেষভাবে অবনতি' হয়েছে।

এই মুহূর্তে কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি মার্কিন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা তাদের দেশের নাগরিকদের এবং যেসব আফগান পশ্চিমা বাহিনীর সাথে কাজ করেছে, তাদের সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে।

৩১শে অগাস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা রয়েছে। ৩১শে অগাস্টের পর ঠিক কী হতে যাচ্ছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

নেটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন যে তাদের জোটের বেশ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে ৩১শে অগাস্টের পরও যেন কাবুল বিমানবন্দর থেকে সেসব দেশের নাগরিকদের উড্ডয়নের অনুমতি দেয়া হয়।

তারা আশঙ্কা করছে, ৩১শে অগাস্টের মধ্যে তাদের দেশের সব নাগরিক এবং ঝুঁকিতে থাকা আফগান নাগরিকদের সবাইকে কাবুল বিমানবন্দর থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার - যিনি ২০ বছর আগে আফগানিস্তানে সেনা পাঠিয়েছিলেন - এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেছেন যে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত জো বাইডেন নিয়েছেন, তা 'নির্বুদ্ধিতা, দুঃখজনক, বিপজ্জনক ও অপ্রয়োজনীয়।'

সূত্র:বিবিসি