কাবুল বিমানবন্দরে জোড়া বিস্ফোরণে ১৩ মার্কিন সৈন্যসহ নিহত ৯০

কাবুল বিমানবন্দরে জোড়া বিস্ফোরণে ১৩ মার্কিন সৈন্যসহ নিহত ৯০

কাবুল বিমানবন্দরে জোড়া বিস্ফোরণে ১৩ মার্কিন সৈন্যসহ নিহত ৯০

কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে গতকাল বৃহস্পতিবারের আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৯০ জন নিহত ও ১৫২ জন আহত হয়েছে।

বিমানবন্দরের অ্যাবি গেট যেখানে মার্কিন এবং ব্রিটিশ সৈন্যরা অবস্থান নিয়ে হাজার হাজার মানুষকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল, তার ঠিক বাইরে এই বিস্ফোরণ ঘটে।

কাবুলের ঊর্ধ্বতন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন , বিস্ফোরণে অন্তত ৯০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫২। এই প্রতিবেদন আপডেট করার সময় পর্যন্ত এ ছিল হতাহতের সর্বশেষ।

নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে বলে তালেবানের একজন কর্মকর্তা বলছেন।

পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে ১৩ জন আমেরিকান সৈন্য রয়েছে।

পেন্টাগনের মুখপাত্র বলছেন, নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকসহ বেশ কিছু বেসামরিক মানুষ রয়েছেন।

প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় বিমানবন্দরের কাছে ব্যারন হোটেলের ধারেপাশে। এই হোটেলে যুক্তরাজ্যে যারা যেতে চাইছিলেন তাদের নথিপত্র ব্রিটিশ কর্মকর্তারা যাচাই বাছাই করছিলেন।

প্রথম বিস্ফোরণের পর বন্দুকের গুলি হয় এবং এরপরই দ্বিতীয় বিস্ফোরণ হয় বিমানবন্দরের ঢোকার প্রধান একটি গেট - অ্যাবে গেটের কাছে।


'কাছেই এক নালায় লাশ, মাংসপিণ্ড এবং মানুষকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে,'প্রথম বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত মিলাদ নামে এক ব্যক্তি এএফপি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন।

'বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর সেখানে পুরো ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। গেইট থেকে জনতাকে সরাতে তালেবান আকাশে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে,' জানান দ্বিতীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী।

'আমি আহত বাচ্চাকে হাতে নিয়ে এক ব্যক্তিকে ছুটতে দেখেছি।'

ওই প্রত্যক্ষদর্শী (যার নাম প্রকাশ করা হল না) জানান, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে তার বিমানে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তির মধ্যে তিনি সব কাগজপত্র ফেলে দেন।

'আমি বিমানবন্দরে আর যাব না। আমেরিকা মুর্দাবাদ, দেশত্যাগ আর ভিসা নিপাত যাক্,' তিনি এএফপিকে বলেন।

একটি 'জটিল হামলা'র জেরে এসব প্রাণহানি ঘটেছে বলে বলছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র।

এখন পর্যন্ত কেউ এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি।

লাশের ওপর লাশ
কাবুল থেকে বিবিসি সংবাদদাতা সেকান্দার কিরমানি খবর দিচ্ছেন, বিস্ফোরণের পর যেসব ভিডিও এবং ছবি প্রকাশিত হয়েছে তাতে লাশের ওপর লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি মনে করছেন। অকুস্থল থেকে বহু আহত ব্যক্তিকে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। আফগান টিভি টোলো নিউজে আহতদের হাসপাতালে নেয়ার ছবি প্রচার হয়েছে।

রয়টার্স বার্তা সংস্থা একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে তাতে এই ব্যক্তি বলছেন, বিস্ফোরণের সময় সেখানে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ লোক উপস্থিত ছিল।

নিহতদের মধ্যে 'বিদেশি সৈন্য' রয়েছে বলে তিনি জানান।

'আমরা স্ট্রেচারে করে আহতদের সরিয়ে নেই... রক্তে আমার পোশাক ভিজে গিয়েছিল।'

বিবিসি সংবাদদাতা জনাথান বিইল জানাচ্ছেন, প্রথম হামলার পর দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই বিস্ফোরণ সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর দিচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে তার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন তখন তাকে কাবুল বিমানবন্দরের এই হামলা সম্পর্কে খবর দেয়া হয়।

এই ঘটনার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাথে জরুরি বৈঠক করছেন।

আরও হামলার আশঙ্কা
আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাবেক একজন কামান্ডার মাইক জ্যাকসন যিনি আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বলছেন, পর্যবেক্ষরা 'সবাই আশঙ্কা করছিলেন এমনটা ঘটবে।'

বিশ্লেষকরা মনে করছেন এর পেছনে সম্ভবত আফগানিস্তানের ইসলামিক স্টেটের শাখা আইসিস-খোরাসানের হাত রয়েছে।

কর্নেল জ্যাকসন বলেছেন তার ধারণা আইসিস-খোরাসান দেশত্যাগী মানুষের ওপর 'নিশ্চিতভাবে' আরেকটি হামলা চালাবে।

'তাদের হাতে অস্ত্র ও সরঞ্জাম আছে এবং তাদের ঐ এলাকায় হামলা চালানোর সক্ষমতা আছে,' তিনি বলেন। 'তাদের লক্ষ্যবস্তু হল নিরস্ত্র মানুষ যারা দেশ ছাড়তে মরিয়া।'
সূত্র : বিবিসি ও অন্যান্য সূত্র